প্রীতম। ছবি: ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য
প্র: ‘জব হ্যারি মেট সেজল’, ‘জগ্গা জাসুস’ ভাল না চললেও আপনার কাজ সকলের ভাল লেগেছে। আপনি খুশি নিশ্চয়ই?
উ: খুশি। তবে গানের সাফল্যের জন্যই ছবিটা চলা জরুরি। অনেক গান থাকে, যা আগে দেখানো হয়নি। ছবি হিট হলে সেই গানগুলো একদম হারিয়ে যায় না।
প্র: ‘জগ্গা...’র পর কি ভারতীয় শ্রোতারা ‘মিউজিক্যাল’ শুনতে তৈরি হয়েছেন?
উ: আমরা ভারতীয়রা বরাবরই ‘মিউজিক্যাল’ শুনতে তৈরি। রামলীলা, লোকগাথা শুনে শুনে তো বড় হয়েছি। তবে ‘জগ্গা...’য় কাজ করতে পেরেছি বলে গর্ব হয়। এ রকম ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল ছবি করার সুযোগ তো বারবার আসে না! আরও এ রকম কাজ করতে চাই। কিন্তু অনুরাগ (বসু) যে ঝুঁকিটা নিয়েছে, সেটা আর কেউ নেবেন কি না, সন্দেহ রয়েছে। তবে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহার করা মিউজিক্যালের সাউন্ড ট্র্যাক এখনও রিলিজ করা হয়নি। খুব ইচ্ছে, যেন সেটা তাড়াতাড়ি মুক্তি পায়।
প্র: অনেকে একসঙ্গে একই ছবিতে সুর দিচ্ছেন। এর অসুবিধে কী?
উ: মাল্টি-কম্পোজারার ছবিতে নতুন সুরকাররা কাজের সুযোগ পান। বলিউডের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস খুঁটিয়ে দেখলে বুঝবেন, তিন-চার জন সুরকারই গোটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন। মাল্টি-কম্পোজারার ছবির ক্ষেত্রে সেই মুষ্টিমেয় মানুষের মুঠোর মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতা কমেছে। উল্টো দিকে, অনেকে একই ছবিতে সুর দিলে, ছবির সামগ্রিক স্কোরে সামঞ্জস্যটা কোথাও হারিয়ে যায়।
প্র: ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র ‘ইলাহি’, ‘বরফি’র ‘কিঁউ’ প্রোমোট করা হয়নি। অথচ এগুলো জনপ্রিয়। গানের প্রোমোশনে আপনি সন্তুষ্ট?
উ: দেখুন, কোনও ছবির সব গান একসঙ্গে প্রোমোট করা সম্ভব নয়। ছবির প্রথম তিনটে গান বেশি প্রভাব ফেলে। ঠিক এই কারণেই আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, যেন ছবিটা ভাল চলে। ছবি ভাল চললে, গানগুলোও বেশি করে মানুষের মধ্যে ছ়়়ড়িয়ে পড়ে। এখানে আপনি প্রশ্ন করেছেন ‘ইলাহি’ আর ‘কিঁউ’ নিয়ে। কারণ, দুটো ছবিই ভাল চলেছে। ছবি না চললে অনেক ভাল গান হারিয়ে যায়। যেমন ‘জব...’-এর ‘ঘর’ অথবা ‘জগ্গা...’র ‘মুসাফির’। ছবি দুটো ভাল চললে ‘ঘর’, ‘মুসাফির’ও হিট হতে পারত! ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, ‘জব উই মেট’, ‘ককটেল’-এর কয়েকটা গান প্রোমোট করা হয়নি। কিন্তু সেগুলো মানুষ পছন্দ করেছেন। আবার কখনও গান তৈরি করা হয়, অথচ ছবিতে সেটা থাকে না। নন- প্রোমোটে়ড গানগুলো হারিয়ে গেলে সত্যিই মনখারাপ হয়। কিন্তু এটাই তো জীবন। (হেসে)
আরও পড়ুন: অনীকের নজরে ভবিষ্যতের ভূতেরা
প্র: আপনার মতে এ যুগে ঈশ্বরপ্রদত্ত কণ্ঠ কার?
উ: ভগবান অনেককে সুন্দর কণ্ঠ দিয়েছেন। তবে আসল খেলাটা হল, সেটা কে কতটা কাজে লাগাচ্ছেন। যদি কারও জেমস, পাপন বা ঊষা দি’র (উত্থুপ) মতো ইউনিক গলা থাকে, তা হলে তাকে ভার্সেটাইল গানের চেষ্টা করতে হবে। আবার কারও গলা যদি ইউনিক না হয়েও ভার্সেটাইল হয়, তা হলে গলার টেক্সচার নিয়ে কাজ করতে হবে। এই কাজটা সবচেয়ে ভাল করছে অরিজিৎ (সিংহ)। অরিজিৎ ওর মিউজিক্যাল ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের গলাকে শাসন করে। স্টুডিয়োয় তো মজা করা হয় এই বলে যে, অরিজিতের ভোকাল কর্ডে নানা রকম সেটিং থাকে! আমি গানের আগে ওকে ব্রিফ করি, ‘আজ এই সেটিংটা হোক কিংবা ওটা!’
প্র: ইমতিয়াজ আলি ও অনুরাগ বসু... কার সঙ্গে কাজ করা সহজ?
উ: ইমতিয়াজ আমার বন্ধু। আমরা সমবয়সি। তবে আমি অনুরাগের অ-নে-ক বেশি কাছের। অনুরাগের সঙ্গে আমি এমন অনেক সিক্রেট শেয়ার করতে পারি, যা অন্য কারও সঙ্গে পারি না। অনুরাগের সঙ্গে কাজ করাও অনেক সহজ। অনুরাগ আমাকে আমার চেয়েও ভাল চেনে।
প্র: পার্টি না সফট— কোনটায় কাজ করতে বেশি ভালবাসেন?
উ: সফট গান হৃদয় থেকে আসে। আর পার্টি নাম্বারে কাজ মস্তিষ্কের। আমার অনেক হিট পার্টি সং আছে। কিন্তু পার্টি সং কম্পোজ করতে একদম পছন্দ করি না। রোম্যান্টিক, স্যাড, ডার্ক সং করতেই ভালবাসি। নেহাতই বন্দুকের ডগায় দাঁড়াতে হলে আমি মেলোডিয়াস পার্টি সং বানাব। যেমন ‘লাত লগ গয়ি’, ‘তুম হি হো বন্ধু’।
প্র: একসঙ্গে মাল্টি-জঁরে কাজ করতে অসুবিধে হয় না?
উ: বলিউডের সুরকারদের সব ধরনের কাজে পারদর্শী হতে হয়। মাল্টি-জঁর কম্পোজিশনের মজা হল, কাজটা আমার একঘেয়ে লাগে না। একসঙ্গে ‘অ্যায় দিল...’, ‘জগ্গা...’, ‘জব...’, ‘দঙ্গল’-এ কাজ করছি। প্রত্যেকটা আলাদা। ফলে কাজ করতে মজাই লাগে। তবে কোনও প্রজেক্ট থেকে মানসিক ভাবে বেরোতে পারছি না। বা রোম্যান্টিক গানের সুর ভাসছে, কিন্তু সুর দিতে হবে পার্টি নাম্বারের। তখন বৈপরীত্য তৈরি হয়। তবে সেটা অসুবিধের বলে মনে করি না।
প্র: কোন গানটায় নিজেকে সবচেয়ে বেশি কানেক্ট করতে পারেন?
উ: মেলোডিয়াস গান আমার কাছের। আর যেগুলো প্রোমোট করা হয় না, সেগুলো স্পেশ্যাল। যেমন ‘অ্যায় দিল’-এর ‘আলিজা’। আবার যদি ‘চন্না মেরেয়া’কে প্রোমোট না করা হতো, তা হলে হয়তো সেটাই বেশি কাছের হতো!
প্র: সুর দিতে দিতে নিজেকে কখনও নিঃশেষিত মনে হয়েছে?
উ: আমি ওয়র্কহোলিক। নেশাটাই আমার পেশা। ১৫ বছর ধরে ১২০টারও বেশি ছবিতে ৬০০-৭০০ গানে কাজ করেও ক্লান্ত লাগে না। তবে প্রচুর কাজ করতে করতে টায়ার্ড হয়ে গেলে ৪-৬ মাসের ব্রেক নিই। মানসিক ভাবে শূন্য লাগলে সিনেমা দেখতে বসে পড়ি!
প্র: এর পর কী করছেন?
উ: এপ্রিলে উত্তর আমেরিকায় ট্যুর আছে। সেটার প্রস্তুতি চলছে।
প্র: শহরে ফিরে কেমন লাগছে?
উ: রিইউনিয়ন তো পুরোটাই। স্কুল-কলেজের কত বন্ধুর সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে জানেন, খুব মিস করি কলকাতাকে। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটায় মন কেমন করে। আর পুরনো পাড়াটার কথা...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy