শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
উইন্ডোজের অফিস ‘হামি’ময়। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে নিমন্ত্রণের তালিকা। প্রিমিয়ারের প্রস্তুতির জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। প্রিমিয়ার নিয়ে চলছে নানা রকম প্ল্যানিং। কলকাতা মুড়ে গিয়েছে ‘হামি’-র পোস্টারে। আজ থেকে ‘হামি’ দেখার জন্য তৈরি দর্শক।
‘লাল্টু দত্ত’ বিশ্বাস হয়ে আবার বড় পর্দায়। সে ছেলেকে মোবাইল কিনে দেয়। জন্মদিনে ডিজে আনে...
আজকের সমাজ বদলেছে। ‘রামধনু’র গল্পে ছিল ছেলেকে ভর্তি করা নিয়ে স্ট্রাগল, এ বার ভর্তির পর স্ট্রাগল! দেখুন, আমি আর নন্দিতাদি বিশ্বাস করি, আপনি যদি কঠিন কথা সহজ করে ছবিতে বলেন সেটা বলা খুব শক্ত! তা হলে ছবির রেশ বহু দিন থাকবে।
শিবপ্রসাদ-নন্দিতাকে টালিগঞ্জের সঞ্জীবনী জুটি বলা হয়! নিন্দুকেরাও বলেন আপনারা দর্শকদের পালস ধরতে পারেন! আপনার কী মত?
দর্শকরা আমাদের বিশ্বাস করেছেন। সেই সাহসে ‘হামি’ করতে পেরেছি আমরা। পুরোটাই বাচ্চাদের নিয়ে ছবি। এমনকী, বাচ্চারাই গান গেয়েছে।
শিবপ্রসাদ-নন্দিতা কি সামাজিক ঘটনার বাইরে গিয়ে কখন ছবি করবেন? ভাঙবেন?
সমাজে বসে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়ে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে ট্রাস্ট ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফিল্মমেকার হিসেবে সেটা আমায় ধাক্কা দিয়েছে। এ বার এ বিষয় নিয়ে আমি ছবি না করলে আমি কী করছি? ঘুমোচ্ছি? শহরে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার পোস্টারের পাশে আমার ‘হামি’র বাচ্চাদের মুখ! এই পোস্টারে কোনও স্টার নেই! এর চেয়ে বড় ভেঙে আসা আর কী হতে পারে? ‘‘আমার মনে আছে যখন ‘রামধনু’ রিলিজ হয়েছিল তখন জিৎ-এর খালি গায়ে সিক্স প্যাকের ‘টাইগার’ ছবির পোস্টার, কোয়েলের ‘অরুন্ধতী, তার পাশে ‘রামধনু’র বাচ্চা পায়রা হাতে। প্রত্যেক বার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আমি। আর মানুষ সেটা সানন্দে গ্রহণ করেছে। আর একটা কথা বলি?’’
বলুন না…
শুরুর দিকে তিনটে ছবি আমার সে রকম ভাল করল না। ‘ইচ্ছে’ বানিয়ে বসে আছি ২০০৮-এ, ২০১২-তে মুক্তি পেল। ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ করলাম। ২০১২-তে। আজও শহরে পুরনো বাস চলছে! এর পর নিজে পয়সা দিয়ে আমি জেলে গিয়ে রিসার্চ করেছি ‘মুক্তধারা’ করব বলে। আর হিরো বানাচ্ছি নাইজেল আকারাকে! ওই সময় আমার জায়গায় অন্য যে কোনও পরিচালক তামিল ছবির রিমেক করত। আমি করিনি।
এত জীবনীশক্তি কী করে পান?
আমার বিশ্বাস, স্টার নয়, কনটেন্ট আসল হিরো। ‘হামি’র কনটেন্ট বোমার মতো। এই বিষয় সারা পৃথিবীর ক্রাইসিস।
হামির দুই খুদে অভিনেতা তিয়াসা ও ব্রত।
সেই বিশ্বাসে খানিক বাধা এল কি? সাতটা হলে ‘হামি’ দেখানো হবে না বলে শোনা যাচ্ছে?
আমাদের বিশ্বাস দশ বছর বাদে আর কি বদলাবে? তবে ‘হামি’-কে কলকাতার সাতটা হলে দেখানো হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের ছবি করা। আমাকে বলা হয়েছে নবীনা-য় ছবি চালালে এই হলগুলো আর বাংলা ছবি দেখাবে না!
বসুশ্রীর মালিক চাইছেন ‘হামি’ দেখাতে! পারছেন না। আপনি কী বলবেন?
আমার খারাপ লাগছে। এ বার তো সে ভাবে পাবলিসিটি করিনি। এখন এটুকু বুঝেছি যে, যতই টাকা ঢালা হোক সেই তিনটে শো পাবো। এটা বাংলা ছবি। সলমন খানের মতো ১৪টা শো তো আর পাব না! কী হবে প্রমোশন করে? লোকে বাংলা ছবি দেখবে কোথায়? বাসে ছবি দিলাম, হোর্ডিং হল। নিজের আনন্দ হল, ব্যস! আমাদের ছবির কনটেন্ট আর আমাদের ছবি বলে লোকে দেখতে আসেন।
আপনাদের সঙ্গে পরিচালক, অভিনেতা সকলে কাজ করতে চাইছেন?
‘ইচ্ছে’র জন্য যখন দরজায় দরজায় ঘুরেছি তখন যদি আর একটা শিবপ্রসাদকে পেতাম আমার কেরিয়ারটা আরও এগিয়ে থাকতো। সাফার করেছি! সেই কারণেই ভাল কনটেন্ট, ভাল পরিচালকের পাশে থাকতে চাই আমরা। অনিন্দ্য আর পাভেলের ছবির পাশে থাকা সে কারণেই। আশা করি ওরাও আমাদের বিশ্বাসটা ধরে রাখবে। তবে বাংলা ছবির ক্ষেত্রে ল্যাঙ্গুয়েজ লয়াল্টি দরকার! নিজের ভাষাকে সম্মান করতে হবে। প্রবাসীরা ডিভিডি-তে বাংলা ছবি দেখেন আজও। হলে নয়। তাঁদের হলে আসতে হবে। পাঞ্জাবি ছবির টাকা কানাডা রিলিজ থেকে উঠে আসছে। বেঙ্গালুরুতে ১৪ লক্ষ বাঙালি আছেন। ওখানে ‘হামি’ আসছে তো লোকে দেখুক প্লিজ হলে গিয়ে। বাঙালি পরিচালকেরা প্রত্যকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করে ছবি বানান। ২০১৪-য় রামধনু বানিয়েছিলাম, ২০১৭-য় ‘হিন্দি মিডিয়াম’ হচ্ছে। কন্টেন্টের জায়গা থেকে আমরা কিন্তু এগিয়ে।
একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে। ‘হামি’-তে কি সেই ‘ইম্প্রো’র শিবপ্রসাদকে পাওয়া যাবে?
বাবাহ্! এই ‘ইম্প্রো’ নিয়ে আমায় কেউ প্রশ্ন করেনি। এই প্রশ্নটা পুরো ইয়র্কার হল তো! মাননীয় মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এক বার বলেছিলেন ‘ইম্প্রো’ দেখে, ভগবান তোকে অভিনয় ক্ষমতা দিয়েছেন, সেটাকে অস্বীকার করিস না। আজও মনে আছে রাজা দাশগুপ্তর এই টেলিছবি মৃণাল সেন দেখবেন বলে একটি চ্যানেল টেলিফিল্মটা পুনঃপ্রচার করে। মমতাশঙ্করই মৃণাল সেনকে আমার কথা বলেছিলেন। মৃণাল সেন বলেছিলেন, “আপনি কোথায় ছিলেন এত দিন?” ব্যস, এটুকুই পাওয়া। এগিয়ে যাওয়ার ভরসা। স্বপ্ন দেখার আলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy