Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

‘অসহিষ্ণুতা ভোটব্যাঙ্কের জন্য তৈরি করা ইস্যু’

এ শহর জানে তাঁদের প্রথম সব কিছু। তাঁদের দাবি অনেকটা সেরকমই। তাঁরা সরোদশিল্পী আমন আলি খান এবং আয়ান আলি খান। বইমেলায় ‘কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এর মঞ্চে আজ তাঁদের অনুষ্ঠান। তার আগে আড্ডার মেজাজে ধরা দিলেন শিল্পীরা। অসহিষ্ণুতা, আব্বা, রাজনীতি, ফ্লার্টিং, ক্যাটরিনা কইফ...সব কিছু নিয়ে খোলামনে কথা বললেন দুই সহোদর।

আমন ও আয়ান।— নিজস্ব চিত্র।

আমন ও আয়ান।— নিজস্ব চিত্র।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৭:৫৬
Share: Save:

এ শহর জানে তাঁদের প্রথম সব কিছু। তাঁদের দাবি অনেকটা সেরকমই। তাঁরা সরোদশিল্পী আমন আলি খান এবং আয়ান আলি খান। বইমেলায় ‘কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এর মঞ্চে আজ তাঁদের অনুষ্ঠান। তার আগে আড্ডার মেজাজে ধরা দিলেন শিল্পীরা। অসহিষ্ণুতা, আব্বা, রাজনীতি, ফ্লার্টিং, ক্যাটরিনা কইফ...সব কিছু নিয়ে খোলামনে কথা বললেন দুই সহোদর।

বাংলায় হতে পারে ইন্টারভিউটা?

আয়ান: বাংলা বুঝতে পারি আমরা।

আমন: একটু একটু বলতেও পারি। তবে পুরোটা বাংলায়…(কাঁচুমাচু মুখ করলেন)।

কলকাতা মানে আপনাদের কাছে কী?

আমন: সিটি অফ লভ।

আয়ান: সেই শহর যেখানে আমার বাবা-মায়ের প্রথম দেখা হয়েছিল।

আমন: (মুচকি হেসে) ওই জন্যই তো বললাম সিটি অফ লভ।

আর কলকাতার দর্শক?

আমন: কলকাতার দর্শক খুব জ্ঞানী, শ্রদ্ধাশীল। তবে আগের থেকে অনেক বদলেছে দর্শকের ধরন।

বদলটা ঠিক কেমন?

আমন: আসলে কলকাতা এখন অনেক বেশি ফ্রেন্ডলি। আমার বাবা যখন শুরু করেছিলেন এমন ছিল না কিন্তু।

আয়ান: আসলে কলকাতার মানুষ কঠিন পরিশ্রমের মূল্য দিতে জানেন। তাঁরা প্যাশনেট। আমার সঙ্গে তো এই শহরের আত্মিক বন্ধন রয়েছে।

এই শহর কি আপনাকে আলাদা কিছু দিয়েছে?

আয়ান: ১৯৯৩ তে আমার প্রথম অনুষ্ঠান এই শহরে। আজ ২০১৬। মি‌উজিক্যালি আমাদেরকে বড় হতে দেখেছে কলকাতা।

বাবাকে নিয়ে তো বই লিখেছেন। মিউজিক নিয়েও লিখেছেন। পরের প্ল্যান?

আমন: দু’টো বই বেরিয়ে গিয়েছে অলরেডি। এখন আর কী লিখব? বোর হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হয় গ্যাপ দরকার।

আয়ান: দেখুন প্রথম বইটা বাবার ওপর ছিল। তবে দ্বিতীয় কাজটা আরও কঠিন ছিল। আর আমন ভাই ঠিকই বলেছে সবকিছুরই একটা সঠিক সময় থাকে।

আমন: আসলে আমরা আমাদের লিমিটেশন জানি। আব্বা সবসময় বলে, ওভারএক্সপোসড হওয়া ভাল নয়।

আজ তো বইমেলায় আপনাদের অনুষ্ঠান। প্রচুর তরুণ দর্শক পাবেন। সত্যিই কী ক্লাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে জেন ওয়াইয়ের আগ্রহ আছে?

আমন: নিউ জেনারেশন খুব চুজি। ক্লাসিক্যাল মিউজিক তাদের পছন্দ। তবে তাদের ভাল না লাগলে আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।

আয়ন: আসলে অডিয়েন্সের সঙ্গে রিলেশন তৈরি করাটা খুব জরুরি। এটা আমরা আব্বার কাছ থেকেই শিখেছি।

অসহিষ্ণুতা নিয়ে তো এখন অনেকেই অনেক মন্তব্য করছেন। আপনারা এই বিষয়টা কী ভাবে দেখছেন?

আমন: (খুব গম্ভীর হয়ে) ভোট ব্যঙ্ক কে লিয়ে ইয়ে আচ্ছা ইস্যু হ্যায়। অসহিষ্ণুতা ইস্যুটা পুরো তৈরি করা। আপনার শহরেই দেখুন, সকালে মসজিদে আজান হচ্ছে, ভজন হচ্ছে সবাই শুনছে কিন্তু। কেউ কি বন্ধ করে দিচ্ছে? এত বড় দেশে ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন কী ভাবল তা দিয়ে কী এসে যায়?

আয়ান: অসহিষ্ণুতার কোনও অস্তিত্বই নেই।

কী বলছেন? আমির খান এ দেশে থাকতে ভয় পাচ্ছেন, শাহরুখ খানও মুখ খুলেছেন, এসব কিছুই নয়?

আয়ান: দেখুন, আমার মনে হয় পুরোটা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড ইস্যু। শিল্পীদের কোনও বাউন্ডারি হয় না। আমদের তো ভারতে থাকতে ভয় লাগে না।

আমন: আমি বিষয়টা আরও একটু বুঝিয়ে বলি। দেখুন যিনি শাল বিক্রি করছেন তিনি হয়তো কাশ্মীরি পন্ডিত। যিনি তাতে কাঁথার কাজটা করেছেন তিনি মুসলিম। আবার আমাদের দেখুন, বংশপরম্পরায় আমাদের সরোদ তৈরি করেন হিন্দুরা।

কিছুদিন আগেই গুলাম আলির অনুষ্ঠান মুম্বইতে বাতিল হয়ে গেল। এটা কী ঠিক?

আমন: ওটা গুলাম আলিজি আর ওঁর অর্গানাইজারদের মধ্যে সমস্যা। এটা নিয়ে আমরা কিছু বলব না।

দেখুন, আমন-আয়ানের এক্সক্লুসিভ আড্ডা

কিন্তু ওই অনুষ্ঠান নিয়ে শিবসেনার আপত্তি জানিয়েছিল।

আমন: আমি তো বলব শিবসেনা আর গুলাম আলির একসঙ্গে বসে কফি খেতে খেতে নিজেদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে নেওয়া উচিত।

অনুপম খেরকেও তো পাক সরকার ভিসা দিলেন না। এটা কি হওয়া উচিত?

আয়ান: এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়। অনুপম খের তো শুধু আর্টিস্ট নন। একজন সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

শিল্পীদের বাক্‌স্বাধীনতা থাকা উচিত?

আমন: শিল্পীরা কখনও ভাল কথা বলতে পারেন না। সবাই বেশি কথা বলতে যান বলেই যত সমস্যা। যা বক্তব্য তা নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে করে প্রকাশ করা উচিত।

আয়ান: আমার মনে হয় সোশাল মিডিয়ার জন্যও এখন সমস্যা অনেক বেড়েছে। কিছু বললেই সঙ্গে সঙ্গে ট্যাগ করে দেওয়াটা খুব খারাপ।

নেক্সট জেনারেশনও এই প্রফেশনে আসুক, নিশ্চয়ই চান আপনারা?

আমন: আয়ান ভাইয়ের দুই ছেলে রয়েছে। ওরা এখন থেকেই প্যাশনেট। সরোদ শুনতে শুনতে খায়, ওরা রেগে গেলে শান্ত করার জন্য সরোদ শোনানো হয়। এমনকী ওদের এন্টারটেনমেন্টও সরোদ। তাই এরা এই প্রফেশনে এলে ভাল তো লাগবেই।

বিখ্যাত বাবার ছেলে হওয়ার জন্য নিশ্চয়ই কেরিয়ারে বিশেষ সুবিধে পেয়েছেন?

আমন: অবশ্যই। এটা না হলে এখন যা অ্যাচিভ করেছি তা পেতে আরও ২০ বছর লেগে যেত। সত্যি বলতে কি আমি ট্যালেন্টেড ছিলাম না কোনওদিন। শুধু কঠিন পরিশ্রম আমাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।

রিয়ালিটি শো তো আগেও হোস্ট করেছেন। ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পনা রয়েছে?

আমন: অবশ্যই। কথাবার্তাও হচ্ছে। তবে কিছুই এখনও ফাইনাল হয়নি। আর আমরা যখন করেছি তখন শো-য়ের কনসেপ্টটা আলাদা ছিল। এখন বিষয়টা অন্যরকম।

তার মানে এখনকার রিয়ালিটি শোয়ের কনসেপ্ট আপনাদের পছন্দ নয়?

আয়ান: এখনকার রিয়ালিটি শোয়ের উইনাররা মরশুমি ফলের মতো। আসে, আবার বাজার থেকে হারিয়ে যায়।

আমন: আপনি তো মিডিয়ায় আছেন। আপনি মনে করে তিনজন রিয়ালিটি শোয়ের উইনারের নাম বলতে পারবেন? পারবেন না। এটাই সমস্যা। অডিয়েন্স এঁদের মনে রাখেন না ।

এই প্রফেশনে যাঁরা আসতে চাইছেন তাঁদের কোনও পরামর্শ দেবেন?

আমন: তিনটে জিনিস মনে রাখুন। পিওর হার্ট নিয়ে আসুন, কঠিন পরিশ্রম করুন। আর মনে রাখবেন, এটা সহজ পথ নয়।

আয়ান: দেখুন ধৈর্য রাখতে হবে। এক রাতের মধ্যেই কিছু পাল্টে যাওয়ার আশা করবেন না।

(‘আমি...এর সঙ্গে ফ্লার্ট করতে চাই’— পড়ুন আগামী শুক্রবার)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE