দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী কখনও পাঁচ বা কখনও ১০ বছরের জন্য পদে থাকেন। কিন্তু লতাজি ৫০ বছর থেকে গেলেন ‘সম্রাজ্ঞী’ হিসাবে।
সেটা ১৯৮৯। নয়াদিল্লির সিরি ফোর্টে চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কারের আয়োজন হয়েছে। বিরাট প্রেক্ষাগৃহ। রাষ্ট্রপতি উপস্থিত হয়েছেন। উৎপলেন্দু চক্রবর্তী পরিচালিত ‘ছন্দনীড়’ ছবির জন্য সেরা পুরুষ কণ্ঠের পুরস্কার নিতে আমি গিয়েছি। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে সিরি ফোর্ট তখন যেন সত্যিই দুর্গ। দর্শকবৃন্দ সবাই মঞ্চের দিকে তাকিয়ে। সেখানেই রাষ্ট্রপতি বসে। হঠাৎ দেখলাম প্রেক্ষাগৃহের সব মানুষ হঠাৎ পিছন ফিরে তাকাতে শুরু করলেন। চাপা উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। সে দিকে তাকাতেই দেখলাম, সাদা শাড়ি পরে ঢুকছেন লতা মঙ্গেশকর। সব মানুষ তাঁকে কোনও না কোনও ভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সেই প্রথম আমার লতা মঙ্গেশকরকে দেখা।
দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী কখনও পাঁচ বা কখনও ১০ বছরের জন্য পদে থাকেন। কিন্তু লতাজি ৫০ বছর থেকে গেলেন ‘সম্রাজ্ঞী’ হিসাবে। আমার মনে হয়, ‘ভারতরত্ন’ সম্মান উনি গ্রহণ করার পর সার্থক হয়েছে।
সিরি ফোর্টের ওই অনুষ্ঠানের পর থেকে ওঁর সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বহু বার মুম্বইয়ে ওঁর বাড়ি গিয়েছি। ওঁর বাবার নামাঙ্কিত পুরস্কার দিয়েছেন আমাকে এবং কৌশিকীকে।
একটা কথা এখানে বলতে চাইব। উনি আমাকে বরাবর বলতেন ‘অজয়দা’। আমি বহু বার ওঁকে বলেছি, কেন উনি আমাকে ‘দাদা’ বলেন। এক দিন এর উত্তর দেন উনি। বলেন, ‘‘আমি তো মামুলি এক প্রে-ব্যাক গায়িকা। আপনি তো আপনার গান ১০০ রকম ভাবে গান গাইতে পারেন!’’ ওঁর মুখে এই কথা শুনে আমি বিস্মিত হই। কতখানি শিক্ষা, কত বড় মনের মানুষ হলে এমন একটা কথা বলা যায়! কয়েক প্রজন্ম যাঁর গানে মুগ্ধ, যাঁকে আদর্শ করে এগোয় লক্ষ মানুষ, তিনি নিজে কত সাধারণ হয়ে থাকলেন। তাঁর স্বর কত শুদ্ধ, কত স্ট্রাগল করে এই পর্যায়ে উঠেছিলেন তিনি, তা লোকগাথায় পরিণত।
কালের নিয়মে রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইনের মতো ক্ষণজন্মাদেরও পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। সেই নিয়মে লতাজিও প্রয়াত হলেন। কিন্তু লতাজি তো প্রয়াত হন না। তিনি থেকে যাবেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy