Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Celebrity Interview

পরিচারিকার পর আইপিএস, এর মাঝে কি আমার জন্য কোনও চরিত্র নেই? হতাশ ‘ছোটলোক’ খ্যাত দামিনী

‘ছোটলোক’ ওয়েব সিরিজ়ে তাঁর অভিনয় দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে। দামিনী বেণী বসুকে কি নতুন করে চিনছে টলিউড? অভিনেত্রী জবাব দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Actress Daminee Benny Basu talks about the reception of her character in latest web series Chhotolok

দামিনী বেণী বসু। ছবি: সিদ্ধার্থ হাজরা।

অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:১৭
Share: Save:

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘ছোটলোক’ ওয়েব সিরিজ়ে তিনি সাব ইনস্পেক্টর সাবিত্রী মণ্ডলের চরিত্রে। আপাতত প্রশংসায় ভাসছেন অভিনেত্রী দামিনী বেণী বসু। এই চরিত্রের প্রস্তুতি এবং তাঁর কেরিয়ারের সফর নিয়ে কথা বললেন অভিনেত্রী।

প্রশ্ন: শুনলাম, ‘ছোটলোক’ মুক্তির পর সারা ক্ষণই আপনার ফোন বাজছে। এতটা ব্যস্ততা আগে ছিল?

দামিনী: (হেসে) আমি অভ্যস্ত। তবে সেটা ছাত্রদের জন্য। সাধারণত আমি ইন্ডাস্ট্রির পার্টিগুলো থেকে একটু পালিয়ে বেড়াই। অস্বস্তিজনক। কিন্তু, তা-ও সামলে নিচ্ছি (হাসি)।

প্রশ্ন: সিরিজ়ে আপনার অভিনীত সাবিত্রী মণ্ডল চরিত্রটি চর্চায় রয়েছে। আপনি কী রকম প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

দামিনী: নানা রকমের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। আগেও ছোটখাটো চরিত্র হলেও বন্ধুরা সব সময়েই তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। এ বারে সব মিলিয়ে তার পরিমাণটা হয়তো একটু বেড়েছে। বেশ ভালই লাগছে।

প্রশ্ন: টলিউডে পুলিশ অফিসারদের একটা নির্দিষ্ট আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়। সেখানে সাবিত্রী বাস্তবের অনেকটাই কাছাকাছি

দামিনী: এটা কবির (ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী, পরিচালক) কৃতিত্ব। আমিও ওকে প্রচুর জ্বালিয়েছি! (হাসি) ও শুধু বলেছিল, চিত্রনাট্যে বিশ্বাস রাখতে। ফলে ভিতটা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেও আমি সাবিত্রীকে চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম না।

প্রশ্ন: তার পর কী করলেন?

দামিনী: কবি আমাকে বলেছিল যে, এই মেয়েটা যে বুদ্ধিমতী, সেটা ওকে কেউ কখনও বলেনি। ওর এই কথাটা আমাকে এতটা ধাক্কা দেয় যে, আমিও সাবিত্রীকে খুঁজতে শুরু করি। তখন লাগাতার অফিস টাইমে মেট্রোয় যাতায়াত করতাম। নিত্যযাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করতাম। সংসার এবং চাকরির মাঝে ক্লান্তিকর ট্রেনযাত্রা। তাঁদের দেখে, তাঁদের গায়ের গন্ধেও সাবিত্রীকে খুঁজে পেয়েছি।

'ছোটলোক' ওয়েব  সিরিজে দামিনী বেণী বসুর লুক।

'ছোটলোক' ওয়েব সিরিজে দামিনী বেণী বসুর লুক। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: কিন্তু সাবিত্রীর জন্য নির্দিষ্ট কাউকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কি? কারণ, চোখ কোঁচকানো বা ঢেঁকুর তোলার মতো ম্যানারিজ়মগুলো খুবই স্বাভাবিক মনে হয়েছে।

দামিনী: আমি এই ধরনের মানুষদের কিন্তু দেখেছি। যেমন আমার দিদা। রাস্তায় দেখলে হয়তো কেউ ঘুরেও তাকাবে না। কিন্তু ওঁর এনার্জি দেখলে চমকে যেতে হয়। দাদু মারা যাওয়ার পর কী কঠিন পরিশ্রম করে মা-কে বড় করেছিলেন, সেটা আমি জানি। চোখ পিটপিট করার স্বভাবটা দিদার থেকে নিয়েছি। এক দিন কবিকে বললাম টিপ পরি। ও রাজি হল। তার পর যে চশমাটা পরেছি সেটা আমার বাড়ির পরিচারিকার। কারণ, উনি রোজ সকালে ট্রেনে চেপে আমার বাড়িতে আসেন। এই ভাবে চারপাশের সকলের থেকে একটু একটু করে সংগ্রহ করেই পর্দার সাবিত্রী তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার চরিত্রের সঙ্গে অনেকেই কেট উইন্সলেট অভিনীত মেয়ার বা ‘দহাড়’-এর সোনাক্ষী সিংহের মিল খুঁজে পাচ্ছেন।

দামিনী: ‘মর্দানি’-র রানি মুখোপাধ্যায় বা ‘দৃশ্যম’-এর তব্বুর সঙ্গেও অনেকে তুলনা করছেন দেখলাম। কারণ, কাঠামোগত দিক থেকে হয়তো সেখানে মিল রয়েছে। কিন্তু আমি কোনও তুলনার মধ্যে যেতে চাই না। কারণ ‘ছোটলোক’ কিন্তু শুধুই মার্ডার মিস্ট্রি নয়। তা ছাড়া রাজস্থান বা গোয়া থেকে বাঙালি প্রেক্ষাপট কিন্তু আলাদা। ওদের ওখানে হয়তো রানি বা সোনাক্ষীর মতোই ‘পৌরুষ’ প্রয়োজন ছিল। সেখানে সাবিত্রীর শান্ত স্বভাবটা হয়তো কাজ না-ই করতে পারে।

প্রশ্ন: পুজোর ছবি ‘রক্তবীজ’-এ পুলিশের চরিত্রে ছিলেন মিমি চক্রবর্তী। সেখানে মহিলা পুলিশ অবশ্য অনেক বেশি গ্ল্যামারাস...।

দামিনী: আমাদের চারপাশে সব মানুষের মুখ দেখে কি বোঝা সম্ভব যে, তিনি বুদ্ধিমান বা উচ্চপদস্থ চাকুরে! খুব অল্প বয়সে মঞ্চে হাঁটতে শিখেছি বলে ইন্ডাস্ট্রির ভাল-খারাপ সবটাই জানি। তাই স্টিরিয়োটাইপগুলোও চেনা। আসলে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চরিত্র এক ধরনের লেখা হয়। কবি কিন্তু যে ভাবে লিখেছে বা আমার ছোট ছোট ইনপুট যে ভাবে গ্রহণ করেছে— সবটা মিলিয়ে একটা ভাল চরিত্র তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: বিশাল ভরদ্বাজের ‘চার্লি চোপড়া’ ওয়েব সিরিজ়েও তো অভিনয় করলেন।

দামিনী: আমি কিন্তু ওখানে মূলত অল্পবয়সি যে অভিনেতারা রয়েছেন, তাঁদের ওয়ার্কশপ করাতে গিয়েছিলাম। আমি সেটে থাকলে ওঁদেরও সুবিধা হবে সেটা ভেবেই ওই চরিত্রে রাজি হওয়া। বিশাল স্যরই প্রস্তাব দেন। প্রথমে চরিত্রটা পঞ্চাশোর্ধ্ব লেখা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিশাল স্যার আমাকে ভেবে বদলে দিলেন।

প্রশ্ন: শক্তিশালী অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও আপনার কাজের সংখ্যা এত কম কেন?

দামিনী: এর উত্তর আমার কাছে নেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির কোনও নির্দিষ্ট কাঠামো নেই। তার পরেও এখানে ক্ষমতার যে পিরামিড রয়েছে, সেখানে আমি সব সময়ে নীচের দিকেই থাকব। তাই এর উত্তর আমার কাছে নেই। তাই যাঁরা আমাকে ভাবেননি, তাঁদের প্রশ্নটা করলে হয়তো উত্তর পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: কিন্তু খারাপ লাগা বা হতাশা আসে না?

দামিনী: আমার কাছের বন্ধু বলেছেন আমার জন্য নাকি চরিত্র লিখছেন। পরে সেটা হয়নি। কী করা যাবে! এ রকমও বলা হয়েছে, আমাকে অত্যন্ত সাদামাঠা দেখতে। তাই গ্রামের মহিলা বা বাড়ির পরিচারিকা বা আইপিএসের চরিত্রই পেয়েছি। এর মাঝে কি কিছু নেই? আমি যে কাজটা করি, জানি কী করছি এবং কতটা মনোযোগ দিয়ে নিজেকে নিংড়ে দিয়ে করছি।

প্রশ্ন: এক জন শিক্ষক হিসাবে আপনার ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে কী পরামর্শ দেন?

দামিনী: আমি কিছু বলি না। শুধু মনে করিয়ে দিই যে, এই পেশায় আসার সিদ্ধান্ত তাঁদের ব্যক্তিগত। কেউ তো জোর করেননি। কেউ শুরু থেকে অভিনয় শিখতে আসেন, কেউ চাকরি ছেড়ে আসছেন। নিজের সিদ্ধান্তে যখন কেউ অনিশ্চিত পেশায় আসছেন, তখন সেই সিস্টেমের ‘নিয়মনীতি’র সঙ্গে কিছুটা হলেও তাঁদের মানিয়ে নিতেই হবে। শিল্প বা রাজনীতি, সব ক্ষেত্রেই বিষয়টা এক। তাই এই ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে হলে নিজের ধৈর্য এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা রাখাটা জরুরি।

প্রশ্ন: ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘চার্লি চোপড়া’ এবং ‘ছোটলোক’— আপনি কি এখন কেরিয়ারের সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে?

দামিনী: মানুষের তরফে স্বীকৃতি পাচ্ছি বলে যে আমার কাজ সার্থক হল, সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আমার কাছে এই প্রশংসা অভিনেতা হিসাবে আমার সফরের একটা ভাল অংশ। এটা যথেষ্ট নয়, উপরি পাওনা। ক্রমাগত শেখার মাধ্যমে নিজের খামতি শুধরে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন: টলিউডে এখন ওয়েব সিরিজ়ের ছড়াছড়ি। কিন্তু সব সিরিজ় দর্শকের মনে দাগ কাটছে না। কখনও ভেবে দেখেছেন কেন এমন হচ্ছে?

দামিনী: মুম্বইয়ে একটা কাজের ক্ষেত্রে যে সময়, বাজেট বা পারস্পরিক সম্মান থাকে, আমাদের এখানে তার অনেক কিছুই থাকে না। বরং বলা উচিত থাকা সম্ভব নয়। লিখতে লিখতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে! শুটিং শুরুর আগের দিন হয়তো কাস্টিং বদলে গেল! কারণ, আমাদের এখানে বিলাসিতা করার সুযোগ নেই। তার পরেও যে ধরনের কাজ আমরা করতে পারছি সেটা কিন্তু প্রশংসার দাবি রাখে। এখানকার শিল্পীরা তো আমার কাছে ‘জিনিয়াস’। দেখুন উন্নতির নেপথ্যে হিংসাও থাকে। এটাও হয়তো সে রকমই কিছু। আশা করি, কোনও দিন ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমরাও এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব।

প্রশ্ন: এর পর কী কী কাজ রয়েছে?

দামিনী: ডিসেম্বরে কলকাতায় অভিনয়ের ওয়ার্কশপ করাব। নিজের শহরে বাংলায় কাজ করার মজাই আলাদা। নতুন কোনও প্রজেক্ট এখনও নিইনি। সামনে আমার মেয়ের আইএসসি পরীক্ষা। সেটাও আমার কাছে বড় প্রজেক্ট (হাসি)।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy