নতুন ছবি নিয়ে কতটা আশাবাদী রুদ্রনীল? — ফাইল চিত্র।
কথা ছিল সাক্ষাৎকার দেবেন নতুন ছবি নিয়ে। কিন্তু তাঁর নাম রুদ্রনীল ঘোষ। তাই সিনেমার বাইরের বলেও চালিয়ে খেললেন। রাজ্য রাজনীতি থেকে দুর্নীতি— পর পর ছক্কা। শেষ করলেন কয়েক কাপ কফি। কখনও বসে, কখনও পায়চারি করতে করতে। কিন্তু সব প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন রুদ্রমূর্তিতে। ঝোড়ো ইনিংসের সাক্ষী রইল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: চার বছর পর ‘আবার বিবাহ অভিযান’। এই মুহূর্তে মনের মধ্যে কী চলছে?
রুদ্রনীল: ‘আবার’ শব্দটা জুড়ে গিয়েছে বলেই একটু টেনশনে রয়েছি। মানুষের পছন্দের একটা কাজের দ্বিতীয় ভাগ নিয়ে আসা তো মুখের কথা নয়। মাঝে করোনার জন্যই ছবিটার কাজ থমকে গিয়েছিল। করোনার জন্য মানুষের জীবনেও প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। মানুষ আবার বাঁচতে শিখেছে। আবার হাসতে শিখেছে। আমরাও সাহস করে ছবিটা রিলিজ় করতে চলেছি।
প্রশ্ন: ছবির চিত্রনাট্য আপনার। করোনা পরবর্তী সময় মাথায় রেখে চিত্রনাট্যে কী কী রদবদল ঘটেছে?
রুদ্রনীল: কিছু কিছু জিনিস বদলেছি। সাধারণ মানুষের জীবনের এমন কিছু জিনিস রেখেছি, যেগুলো নিয়ে বাস্তবে আকছার আলোচনা হয়। কিন্তু সিনেমায় সে ভাবে জায়গা পায় না। আপাতত এর বেশি কিছু বলতে চাইছি না।
প্রশ্ন: ২০১৯ সালে ছবির প্রথম পর্ব মুক্তির পর থেকে আপনাকে অনেক বারই নিজের বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। নিজেকে কি আপনার কখনওই একা লাগে না?
রুদ্রনীল: (হেসে) আমি জানি না, করোনার পর কোন দম্পতি সাহস করে বলবেন যে, একে অপরকে নিয়ে আমাদের প্রচণ্ড ‘দোকা’ লেগেছে! সাংসারিক নিয়মে অনেক কিছুই বলতে নেই। ঠাকুর পাপ দেবেন (হাসি)। আমরা তো অভ্যাসের দাস। একা থাকতে আমার কোনও অস্বস্তি হয় না। আবার সত্যিই কোনও কোনও সময় মনে হয়, সঙ্গে কেউ থাকলে হয়তো পারস্পরিক আদানপ্রদান একটু ভাল হত।
প্রশ্ন: তা হলে সংসার করতে ভয় কেন?
রুদ্রনীল: সংসার জিনিসটা একদম অন্য জিনিস। সংসার করলেই যে সব কিছু আদানপ্রদান করা যাবে সেটাও ঠিক নয়। মানসিক ভাবে আমি এখনও সেই প্রস্তুতির কাছাকাছি পৌঁছতে পারিনি, যেখানে বিয়ে হলে ‘আমার’ শব্দটির মৃত্যু মেনে নিতে পারব বা ‘আমাদের’ শব্দটাকে আলিঙ্গন করতে পারব। আমি ১০০ শতাংশ বিবাহের পক্ষে। আমি সেই সব ‘সৎ’ দম্পতিদেরই একজন, যারা ছোটখাটো বিতর্কে থালা-বাসন ছোড়ার পর প্রতিবেশী এসে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘‘ও কিছু নয়, বিড়াল এসেছিল!’’ চেষ্টা করছি মানিয়ে নিতে (হাসি)। আশা করি কোনও দিন সফল হব।
প্রশ্ন: তার মানে ওয়ার্কশপের মধ্যে রয়েছেন।
রুদ্রনীল: বলতে পারেন খুব সততার সঙ্গে অভ্যাসটা চালিয়ে যাচ্ছি। তাই সময় লাগছে। কারণ, অন্যের সংলাপ, যেটা আমার নয়, সেটা ফুটিয়ে তোলা অভিনেতার কাজ। অনেকের মতো আমি বাড়িতে ফিরে অন্তত অভিনয়টা করতে চাই না।
প্রশ্ন: কিন্তু এই যে অনেকেই বলেন, আপনার নাকি একটা ‘ক্যাসানোভা’ সত্তা রয়েছে...।
রুদ্রনীল: সে দিক থেকে আমি হয়তো ভাগ্যবান। কারণ, সর্বকনিষ্ঠ থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলারাও আমার অনুরাগী। আমাদের জীবিকায় ‘ক্যাসানোভা’ হওয়ার উপায় নেই। কারণ, মুখের সঙ্গে জীবিকাটা ঘোরে। তাই অন্য পেশার মানুষেরা সেটা যত সহজে করেন, তার ১ শতাংশ আমরা করলে তার ১০ গুণ রটে! আমি বিয়ে করিনি। তাই আমার মহিলা বন্ধু থাকতেই পারেন। যতটা আলোচনা হয়, তার ১০ শতাংশ সত্যি হলে আমি খুবই খুশি হতাম। মজার বিষয়, আমার প্রচুর পুরুষ বন্ধুও রয়েছেন। সেটা নিয়ে দেখি কম আলোচনা হয়।
প্রশ্ন: কিন্তু এখনও নিশ্চয়ই প্রেমের প্রস্তাব আসে?
রুদ্রনীল: রোজই আসে। একটা মজার বিষয় বলি? সে দিন একটা অনুষ্ঠানে এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আলাপ হল। তিনি নাকি আমার বিরাট ভক্ত। বললেন, ‘‘আমার মেয়ে মনে হয় আপনার বন্ধু।’’ ফোন নম্বর নিয়ে বললেন, ‘‘আপনার সঙ্গে চ্যাট করলে আমার মেয়েকে আবার বলবেন না। খারাপ ভাবতে পারে।’’ কয়েক দিন পর ওঁর মেয়ের মেসেজ এল, ‘‘মায়ের সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব হয়েছে। খুব ভাল লাগল। কিন্তু তোমার সঙ্গে যা যা কথা হয়েছে সেটা আবার মা’কে বোলো না।’’ আসলে কি, এখনকার দিনে বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটাই বদলে গিয়েছে। বন্ধুত্বের কোনও বয়স হয় না। তাই এটা নিয়ে বেশি মাতামাতি করে লাভ নেই।
প্রশ্ন: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনীতি হল, সেটা কি ইগোর লড়াই?
রুদ্রনীল: কেউ ভাবতেই পারেন যে, তিনি বা তাঁরা আদালতের ঊর্ধ্বে। কিন্তু সেটা তো ঠিক নয়। কোনও একটা বিষয়কে না বুঝে বা বিষয়টার গভীরে না ঢুকে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে। পরে একটা জেদ ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। যার জন্য ছবিটা মানুষ দেখার সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
প্রশ্ন: আর লোকসান?
রুদ্রনীল: অবশ্যই। রাজ্যে যাঁরা সিনেমা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে তাঁদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারত। সিনেমার সঙ্গে একটা আবেগ জড়িয়ে থাকে। শিল্পী হিসেবে আমাদেরও ক্ষতি হয়েছে। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে ছবি তৈরি কি কোনও ত্রুটি নাকি? তা হলে তো যে কোনও তথ্যচিত্রই সুপারহিট হত। পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম, আমরা কেউই ঈশ্বর নই। তাই কোনও সিদ্ধান্ত একটু ভুল নেওয়া হতেই পারে। সেখান থেকে সরে এসে সমস্যার একটা সহজ সমাধান করা উচিত ছিল।
প্রশ্ন: অনেকে বলছেন, সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ফলাফলই নাকি ছবিটা নিষিদ্ধ করার কারণ?
রুদ্রনীল: সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ছবিকে অস্বীকার করা যায় না। ছবিতে যেটা দেখানো হয়েছে, সেটা যে কোনও ধর্মের ক্ষেত্রেই অনভিপ্রেত। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও ধর্মাবলম্বী মানুষ অপরাধমূলক কাজ করতে পারেন না, এই বলে যে ভোটটা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে আমার আপত্তি রয়েছে। তাঁরা কিন্তু নিজেরাও বিশ্বাস করেন যে, তাঁদের মধ্যে কিছু ‘দুষ্টু লোক’ও আছেন। তাঁদের মধ্যে আবার অনেকেই আমার বন্ধু।
প্রশ্ন: তাঁরা কারা?
রুদ্রনীল: আমার মনে হয়, সবার আগে এই প্রশ্নটা করা উচিত যে, আনিস খানকে (হাওড়ার আমতার বাসিন্দা ছাত্রনেতা) যাঁরা হত্যা করলেন, সেই পুলিশদের এখনও শাস্তি হল না কেন? বগটুইতে নিরপরাধ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মা এবং শিশুদের যারা পুড়িয়ে মারল, তারা তো রাজ্যের শাসকদলের ঘনিষ্ঠ!
প্রশ্ন: আপনি তো শাসকদলের বিরুদ্ধে পর পর অভিযোগ করছেন!
রুদ্রনীল: আমার পর্যবেক্ষণে বর্তমান তৃণমূল দলটা অন্য একটা সম্প্রদায় তৈরি করেছে। যাদের কাজ এবং বিশ্বাস, অন্যের ক্ষতি হলে হোক। আমার লাভ হলেই হল! এটা অকল্পনীয়। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন ‘ঘুষ’ বা ‘ব্ল্যাকমানি’র মতো শব্দগুলো কোনও গালাগালের থেকে কম কিছু ছিল না। আর এখন চোর, ঘুষ, পার্থ, অর্পিতা, কাটমানি, কয়লা, গরু, চাকরি, চুরি— এই শব্দগুলো শুনে বর্তমান প্রজন্ম বড় হচ্ছে! আমি বিরোধী মতাদর্শে বিশ্বাস করলেও রাজ্যটা তো আমার। এতে আমার রাজ্যেরই কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি প্রযোজক দুর্নীতি নিয়েও শিল্পীদের বদনাম হয়েছে। বনি সেনগুপ্তের নামটা জড়িয়ে গেল।
রুদ্রনীল: খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা! প্রশ্ন হল, যোগ্যতা অনুযায়ী ভাল থাকব, না কি যোগ্যতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব? অনেক সময় না-জেনে, না-বুঝেও আমি আক্রান্ত হতে পারি। শুধু বনির কথা বলব না। কান পাতলে আরও নাম উঠে আসতে পারে।
প্রশ্ন: টলিপাড়ার শিল্পীদের একাংশের দাবি, প্রযোজকের টাকার উৎস সন্ধান করা তাঁদের কাজ নয়।
রুদ্রনীল: চিটফান্ডের সময়েও ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হয়েছিল। সত্যিই শিল্পীদের পক্ষে আগাম টের পাওয়া সম্ভব নয়। এরই সঙ্গে জোরগলায় বলছি, ইন্ডাস্ট্রিতে আমার সতীর্থেরা কোনও পরিকল্পিত যড়যন্ত্রের কাণ্ডারি বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। আমরা যে হেতু প্রাপ্তবয়স্ক, তাই সতর্ক থাকা আমাদের দায়িত্ব। আবার তার মানে এটাও নয় যে, চিত্রনাট্য না-পড়েই আমি মোটা অঙ্কের অগ্রিম নিয়ে নিলাম। সেটাও তো এক ধরনের পরিকল্পিত অপরাধ।
প্রশ্ন: এই দুর্নীতি রুখতে সরকার কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না?
রুদ্রনীল: বাংলায় ছোট পর্দায় কারা প্রযোজনা করতে পারবেন বা কারা পারবেন না, সেটা নিয়ে প্রত্যেকেরই একটা স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে। আমার মনে হয়, সিনেমার ক্ষেত্রে ফেডারেশন (ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইর্স্টান ইন্ডিয়া) বা ইম্পা (ইর্স্টান ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন), যারা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে শুটিং বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, তাদের হাতে নিশ্চয়ই এই ছাঁকনিটা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তারাই তো আমাদের অভিভাবক। সে দিকেই তাকিয়ে বসে আছি।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার সতীর্থদের সিংহভাগ শাসকদলের নেতা, মন্ত্রী বা সমর্থক। কোনও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তাঁদের মাঝে নিজেকে কখনও কোণঠাসা মনে হয়েছে? না কি আপনাকে একা পেয়ে তাঁরা মন খোলেন?
রুদ্রনীল: (হেসে) দ্বিতীয়টা ঘটে বেশি। আমার বয়স এখন পঞ্চাশ। আমি ছোট থেকে মাঠে নেমে রাজনীতি করা ছেলে। আমাদের আশপাশে যাঁরা বিধায়ক বা সাংসদ হয়েছেন, তাঁদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, শতকরা ৯৯ জন কখনও কোনও সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আমার বন্ধুদের মধ্যে অধিকাংশই কোনও এক ব্যক্তির সাময়িক ‘ভাল’ চেহারার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে রাজনীতিতে এসেছেন। তার পর বাড়তি যে ‘আরাম’ বা ‘স্বাচ্ছন্দ্য’ নিয়ে ফেলেছেন, সেটা হয়তো এখন ছাড়তে পারছেন না।
প্রশ্ন: একটু ব্যাখ্যা করতে চাইবেন?
রুদ্রনীল: (কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে) ধরা যাক আমাকে একটা সোফা দেওয়া হয়েছে। আমার যোগ্যতা এতটুকুই। তার পর একটা তাকিয়া দেওয়া হল, যেটা বাড়াবাড়ি। এর পর যিনি সোফা দিয়েছেন, তিনি কোনও অন্যায় করার পর যদি আমার কাছে ফোন আসে, তা হলে কিন্তু বলতে হবে, শুটিংয়ে আছি বা কলকাতার বাইরে আছি। পশ্চিমবঙ্গে কী ঘটেছে আমি জানি না তো! আসলে তাঁরা কেউ অপরাধী নন। তাঁরা বিভিন্ন ভাবে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। আমার কাছে অনেকেই তাঁদের খারাপ লাগা ব্যক্ত করেন। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা সাংসদ বা বিধায়ক হয়েছেন, তাঁরা রাজনীতি ছেড়ে দিলে তাঁদের জীবনে কিস্যু পরিবর্তন হবে না। কারণ, রাজনীতি তাঁদের সম্মান দেয়নি, দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। সেটাও আবার তাঁদের যোগ্যতার বিচারে।
প্রশ্ন: ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট কি আপনার কেরিয়ারে কোনও ক্ষতি করেছে?
রুদ্রনীল: একটু আগে যে বন্ধুদের কথা বলছিলাম, তাঁরাই একটা সময়, প্রায় দেড় বছর, ইচ্ছা থাকলেও আমাকে ‘কাস্ট’ করলে শাসকদলের রোষানলে পড়ার আশঙ্কা করতেন। সিনেমাহল পাবেন না। বা হয়তো শুটিংয়ে কোনও সমস্যা তৈরি হবে। আমার কাছে সেটা তাঁরা স্বীকার করেছেন আবার অনুরোধও করেছেন, ‘‘রুদ্র, তোর এত সত্যি কথা বলার কী দরকার! চুপ করে যা!’’
প্রশ্ন: আর এখন?
রুদ্রনীল: ২০২১ সালে ভবানীপুরে বিরোধী দলের প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ার আগে রুদ্রনীল ঘোষ এতটাই ভার্সেটাইল অভিনেতা ছিল যে, সব ছবিতেই তাঁকে কাস্ট করা হত। ভোটের পর তো সরাসরি জীবিকায় হাত পড়ে গিয়েছিল। একশো দিনের কাজ থেকে রুদ্রনীলের অভিনয়... (হাসি)। আমি কিন্তু শুধু আমার কথা বলছি না। আরও অনেকের সঙ্গে এটা করা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, সময়ের নিরিখে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। শাসকের আইন চলবে না, আইনের শাসন চলবে— আদালত এই বিষয়টায় এখন অনেক সতর্ক হয়েছে বলেই কিন্তু আমি ফিরে এসেছি।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে তো এখন দেহরক্ষীও থাকে। ভয়-টয় করে না?
রুদ্রনীল: দেহরক্ষী তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আমাকে অনেক পরে দিয়েছে। ২০২১ সালের ভোটে ভবানীপুরে দু’বার, ভোটের পর আরও দু’বার যখন আমার উপর আক্রমণ হল, তখন কে কোথায়! মারাও যেতে পারতাম। আমি সোজা কথা সোজা ভাবেই বলতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন: দুর্নীতির কথা বলছিলেন...।
রুদ্রনীল: এক এক করে কিন্তু শাসকদলের লোকেরাই মুখ খুলছেন। তাপস রায় বোমা ফাটিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমবঙ্গের যে বিশাল উন্নতি করেছেন, তা নয়। তবে বর্তমান শাসকদলের মধ্যে বেসিক ভ্যালুগুলোই হারিয়ে গিয়েছে। খারাপ কাজ করে খারাপ লাগার অনুভূতিটাই ডিলিট হয়ে গিয়েছে! বিভিন্ন চুরি-জোচ্চুরিতে আদালতের নির্দেশে চলা মামলাগুলোয় দলের যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের হয়ে প্রকাশ্যে গলা ফাটাতে শাসকদলের মুখপাত্রদের এতটুকুও বাধে না! বাড়িতে ফিরে পরিবারকে এঁরা মুখ দেখান কী করে, সেটা ভেবে অবাক হয়ে যাই।
প্রশ্ন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার’ রাজ্যের মানুষের একটা অংশের মধ্যে শাসকদলের ভাবমূর্তি বদলাতে পারবে বলে মনে হয়?
রুদ্রনীল: পদযাত্রা করলেও ‘চোর’ বদনাম তো মুছতে পারবেন না! লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, উনি কিন্তু ক্যামেরার সামনে এসে এক বারও চোরেদের বিরুদ্ধে একটাও শব্দ খরচ করছেন না। তিনি কিন্তু এক জন সাংসদমাত্র। তাঁর মিছিলে কয়েক হাজার পুলিশ! বাড়িতে চুরি হলে অভিযোগ করতে গেলে যে পুলিশকে আমরা খুঁজে পাই না, সেই পুলিশ তাঁর মিছিলে জড়ো হয়েছে সাধারণ মানুষের করের টাকায়! বাহ! সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত তাঁবুও চেখে পড়ছে। জানি না কোন ‘গরিব’ রাজনৈতিক দলকে এতটা আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে দেখা যায়। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে আমার বিশ্বাস, অঢেল ‘হিসেবি’ অর্থের জোগান না থাকলে এই ব্যাপক কর্মকাণ্ড করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: অভিষেকের যাত্রাভঙ্গ করতেই কি সিবিআই তাঁকে তলব করল?
রুদ্রনীল: উনি তো দেশের আইনের ঊর্ধ্বে নন। আদালত ডাকলে তাঁকে তদন্তের স্বার্থে যেতে হবে। এক বার আপনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে হাসতে হাসতে ফাঁসিকাঠে ঝুলে যাব। অথচ আদালত সমন পাঠালে হাজিরা আটকাতে আদালতে আবেদন করছেন। এর মাধ্যমে ওঁর মধ্যে যে দ্বিচারিতা রয়েছে, সেটাই প্রমাণিত হয়। ঘরের ভিতরে গিয়ে ৮-৯ ঘণ্টা জেরায় কেউ কারও নাম জিজ্ঞাসা করেন না বা ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ গান গাইতে বলেন না। আবার বাইরে বেরিয়ে এসে কেউ মাইক ভাড়া করে স্বাধীনতা সংগ্রামীর মতো ভাষণ দেন না! ওঁর সার্কাস, তাই কোথায় তাঁবু ফেলবেন সেটা একান্তই ওঁর সিদ্ধান্ত। লোকে বলছে একজন তরুণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে, ভবিষ্যৎ রাজনীতিক হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে উনি জল মেপে নিতে চাইছেন। উনি তো মাঠে নেমে রাজনীতি করেননি। ২০১৪ সালে উনি রাজনীতির ময়দান চিনেছেন। ঠিক আছে, কারও যদি মনে হয়, যে তিনি দীর্ঘ দিন বাড়ির বাইরে বেরোননি, এ বার একটু হাঁটাচলা করবেন— সেটা রাহুল গান্ধীই হোন বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে ক্ষতি নেই। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু দুর্নীতি নিয়ে কিছু বলছেন না। রাজ্যবাসী সেটা অবশ্যই মাথায় রাখছেন। আমার মনে হয়, উনি একটু অন্য কোনও সিলেবাসে মুভ করলে ভাল হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy