Actor Ranjeet has Established Himself As Leading Villain of Bollywood dgtl
Ranjeet
পর্দায় মোট ৩৫০ ‘ধর্ষণ’! বন্ধুর নাম ব্যবহার করা রঞ্জিতকে চিকিৎসায় রাজি হননি মহিলা ডাক্তার
ছেলেকে পর্দায় মেয়েদের শ্লীলতাহানি করতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রঞ্জিতের মা। শেষে রঞ্জিতের সহঅভিনেত্রী রাখি এসে তাঁকে বোঝান, তাঁর ছেলে আসলে অভিনয়-ই করেছেন!
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ১১:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
আধখোলা জামার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া লকেট যেন বাড়িয়ে দিত অভিনীত খলচরিত্রের ক্রূরতা। পর্দায় মোট ৩৫০ বার ‘ধর্ষণ’ করেছেন তিনি। মদ্যপান করেননি, এ রকম ফিল্ম খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একনিষ্ঠ নিরামিষাশী। যথাসম্ভব দূরে থাকতেন সব রকম নেশা থেকেও। খলনায়ক রঞ্জিতের রিল লাইফ এবং রিয়েল লাইফ ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর।
০২১৯
রঞ্জিতের আসল নাম গোপাল বেদী। জন্ম ১৯৪২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। হিন্দি ছবির ভক্ত রঞ্জিত এত বার দেব আনন্দের ‘গাইড’ এবং ‘হাম দোনো’ দেখেছিলেন যে, ছবি দু’টির প্রতিটি সংলাপ তাঁর মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
০৩১৯
ছবি দেখতে ভাল লাগলেও রঞ্জিত প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে তাঁর প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছিল। কিন্তু খোদ প্রশিক্ষকের মেয়ের সঙ্গেই তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ফলে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অকালেই ফুরিয়ে গেল প্রশিক্ষণের মেয়াদ।
০৪১৯
জীবনের এ রকম এক উদ্দেশ্যহীন সময়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় রাজস্থানের কোটার বাসিন্দা রঞ্জিত সিংহ ওরফে রনি-র। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে রনির ভাল সম্পর্ক ছিল।
০৫১৯
রনির ভরসায় মুম্বই আসেন রঞ্জিত। বাড়িতে ছবিতে অভিনয়ের কথা বলেননি। বলেছিলেন, তিনি বেড়াতে যাচ্ছেন। মুম্বইয়ে তারকা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলাপ হয়। রঞ্জিত সুযোগ পান মোহন সেহগলের ‘সাওন ভাদো’ ছবিতে। তার পরের বছরই দিলীপ কুমার তাঁকে সুযোগ দেন ‘রেশমা অউর শেরা’ ছবিতে।
০৬১৯
দিলীপ কুমার তাঁকে পরামর্শ দেন নাম পাল্টানোর। নতুন পরিচয়ের জন্য তিনি বেছে নেন রঞ্জিত সিংহের নাম-ই। গোপাল বেদী থেকে তাঁর নতুন নাম হয় ‘রঞ্জিত’। পরে বলেছিলেন, তিনি কোনওদিন ভাবতেও পারেননি এই চেহারা নিয়ে অভিনয় করবেন! রনি ওরফে রঞ্জিত না থাকলে তাঁর অভিনেতা হওয়া হত না। মনে করেন গোপাল বেদী ওরফে রঞ্জিত।
০৭১৯
১৯৭১ সালেই মুক্তি পায় ‘শর্মিলি’। এই ছবির প্রিমিয়ারে গিয়ে লজ্জায় প্রায় মাথা কাটা যায় রঞ্জিতের। ছেলেকে পর্দায় মেয়েদের শ্লীলতাহানি করতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রঞ্জিতের মা। শেষে রঞ্জিতের সহঅভিনেত্রী রাখি এসে তাঁকে বোঝান, তাঁর ছেলে আসলে অভিনয়-ই করেছেন!
০৮১৯
ধীরে ধীরে রঞ্জিতের মা বুঝে যান, প্রতি ছবির শেষেই তাঁর ছেলেকে পুলিশ বা নায়কের হাতে প্রহৃত হতে হবে। তিনি আত্মীয়দের সঙ্গে ছেলের ছবি দেখতে গেলে শেষ অবধি দেখতেন না। বলতেন, ছবির শেষ অংশ অন্য এক দিন দেখবেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে মজা করে এ কথা বলেন রঞ্জিত নিজে।
০৯১৯
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে রঞ্জিতের পরিচয় হয়ে যায় ‘রেপ কিং’ বা ‘ধর্ষণের রাজা’ বলে। এমনকি, ধর্ষণের সিকোয়েন্সে রঞ্জিতের অভিনয় ছবির ইউএসপি হয়ে দাঁড়ায়! তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘হাত কি সাফাই’, ‘নমক হালাল’, ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’, ‘শরাবি’, ‘লওয়ারিশ’, ‘ধর্মাত্মা’, ‘লায়লা মজনু’, ‘বিশ্বাত্মা’, ‘রকি’, ‘হিরো’ এবং ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’।
১০১৯
‘ডাকু অউর জওয়ান’ ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৮ সালে। রঞ্জিতের কথায়, এই ছবিতে রীনা রায়ের সঙ্গে তাঁর ধর্ষণ-দৃশ্য ছিল বিপজ্জনক। চার দিকে জ্বলন্ত প্রদীপের মধ্যে শুটিং করতে হয়েছিল।
১১১৯
রঞ্জিতের মনে পড়ে নবাগতা মাধুরী দীক্ষিতের কথাও। ১৯৮৯ সালে ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’ সিনেমায় মাধুরীর সঙ্গে তাঁর ধর্ষণের দৃশ্য ছিল। শুটিংয়ের পরেও নাকি মাধুরীর আতঙ্কের ঘোর কাটেনি।
১২১৯
অভিনেত্রী মহলের বাইরেও তাঁকে ভয় পেতেন মহিলারা। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘জমানত’। ছবিতে কেউটে সাপ নিয়ে শট দিতে হয় রঞ্জিতকে। যদিও সাপের দেহ থেকে বিষ বার করে নেওয়া হয়েছিল আগেই, তবু শট দেওয়ার পরে এক চিকিৎসককে ডাকা হয়, রঞ্জিতকে পরীক্ষা করার জন্য। কারণ শুটিংয়ের মধ্যে বিরক্ত সাপটি বেশ কয়েক বার ছোবল দিয়েছিল রঞ্জিতকে।
১৩১৯
কিন্তু রঞ্জিতকে দেখতে হবে শুনে সেই মহিলা চিকিৎসক নাকি ভয়ে আসেনইনি। তাঁর দৃশ্য এলেই নাকি সেন্সর বোর্ডের এক মহিলা সদস্য রাগে আর ঘেন্নায় চোখ বন্ধ করে ফেলতেন। লাম্পট্যকেও এতটাই বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে পেশ করতেন তিনি।
১৪১৯
কিন্তু সামান্যতম অস্বস্তিও কি হত না? রঞ্জিত জানিয়েছিলেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সে সব কাটিয়ে ফেলেছিলেন। বরং, উল্টোদিকে নায়িকার অস্বস্তি দূর করতে তিনি তাঁদের কানে কানে বলে যেতেন, এর পর শটে কী কী করতে হবে। মানে, কখন তাঁর চুল ধরে টানতে হবে, কখন তাঁর মুখকে ঠেলে সরিয়ে দিতে হবে, এ রকম নানা রকম পরামর্শ দিতেন তিনি।
১৫১৯
তবে শুধুই ঘৃণা নয়। ব্যক্তিগত জীবনে মহিলাদের ভালবাসাও পেয়েছেন এই খলনায়ক। ১২ বছর লিভ ইন করার পরে বিয়ে করেছিলেন বান্ধবী পুষ্পাকে। কিন্তু দেড় বছর যেতে না যেতেই তাঁকে ছেড়ে পুষ্পা চলে যান।
১৬১৯
এর কয়েক বছর পরে রঞ্জিত ঠিক করেন তিনি ছবি পরিচালনা করবেন। ছবির নাম ঠিক হয় ‘কারনামা’। সে ছবিতে নবাগতা নাজনিন ওরফে অলকাকে তিনি নায়িকা করবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু শেষ অবধি প্রযোজকের চাপে নবাগতার বদলে ছবিতে নিতে হয় ফারহা, কিমি কাতকর, বিনোদ খন্নার মতো তারকাদের।
১৭১৯
ছবিতে সুযোগ না পেলেও অলকা হয়ে যান রঞ্জিতের ঘরনি। বাবা মায়ের পরামর্শ ও সম্মতিতেই ১৯৮৬ সালে অলকাকে বিয়ে করেন রঞ্জিত। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি বিয়ের পরে অন্য মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হননি বলে দাবি রঞ্জিতের। স্ত্রীর প্রতি কমিটেড থাকতেই চেয়েছেন।
১৮১৯
রঞ্জিত-অলকার মেয়ে দিব্যাঙ্কা ফ্যাশন ডিজাইনার। ছেলে, চিরঞ্জীব ছবিতে অভিনয় করুন, সে রকমই ইচ্ছে রঞ্জিতের। তবে চিরঞ্জীব নিজে বেশি আগ্রহী ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়ে।
১৯১৯
প্রায় পাঁচ দশক ধরে কয়েকশো ছবিতে অভিনয় করা সত্তরোর্ধ্ব রঞ্জিত এখনও কাজের জগতে সক্রিয়। পর্দার নিষ্ঠুর এই খলনায়ক ব্যক্তিগত জীবনে ভালবাসেন বাগান করতে, ছবি আঁকতে আর রান্না করতে। নিজে নিরামিষ খেলেও প্রিয় জনদের জন্য জমিয়ে রান্না করেন বারবিকিউ চিকেন।