US Russia battle for influence in central Africa where Vladimir Putin mercenaries Wagner Group playing a key role dgtl
US Russia Influence in Central Asia
মধ্য আফ্রিকার দেশে মস্কো বনাম ওয়াশিংটন! বৃহত্তম মহাদেশের ‘মন জিতছে’ সেই ওয়্যাগনার বাহিনী?
মধ্য আফ্রিকায় রুশ ভাড়াটে ফৌজ ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’কে কাজে লাগিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে মস্কো। সেখানে পা জমানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ওয়াশিংটনও।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
আফ্রিকায় ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়াচ্ছে রাশিয়া। এই কাজে ভাড়াটে সেনা ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’কে কাজ লাগিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁদের সাহায্যেই মধ্য আফ্রিকায় বড় আকারের সেনা ছাউনি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে মস্কোর। শুধু তা-ই নয়, ‘অন্ধকার মহাদেশে’ ফ্রান্স বা আমেরিকা যাতে পা জমাতে না পারে সে দিকও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে ক্রেমলিন।
০২১৯
আমেরিকার গোয়েন্দাদের দাবি, ২০১৭ সাল থেকে আফ্রিকায় আক্রমণাত্মক বিদেশ নীতি অনুসরণ করছে রাশিয়া। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশটির অন্তত আধ ডজন রাষ্ট্রে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে মস্কো। সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে রুশ ভাড়াটে সেনা ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’-এর কাঁধে।
০৩১৯
বর্তমানে মধ্য আফ্রিকার একাধিক দেশ ক্রমাগত বিদ্রোহী এবং চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজে সেখানকার সরকারকে সাহায্য করছে ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’। আরও খোলসা করে বলতে গেলে, ভাড়াটে সেনার হাত ঘুরেই সেখানে পৌঁছচ্ছে মস্কোর যাবতীয় সহযোগিতা। আর এ ভাবেই ধীরে ধীরে মধ্য আফ্রিকার দেশগুলির সরকার থেকে শুরু করে আমজনতার ‘নয়নের মণি’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে রাশিয়া।
০৪১৯
আফ্রিকায় ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’-এর জয়যাত্রা শুরু হয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান দিয়ে। ২০১৩ সালে থেকে সেখানে একরকম গৃহযুদ্ধের মধ্যে পরিস্থিতি রয়েছে। ওই বছর ক্ষমতা দখল করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ফলে কুর্সি ছাড়তে হয় প্রেসিডেন্টকে। ২০১৯ সালে ১৪টি সশস্ত্র গোষ্ঠী শান্তি চুক্তিতে সই করে। কিন্তু কিছু দিন পরেই ছ’টি দল সেই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে যায়। ফলে ফের শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা।
০৫১৯
স্থানীয়দের দাবি, এর পরই আসরে নামে রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়্যাগনারের যোদ্ধারা। তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এঁটে উঠতে পারেনি। ফলে ২০২১ সালে রাজধানী বাঙ্গুই ছেড়ে চম্পট দেয় তারা। এতে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকানে ফেরে শান্তি। আর এর ষোলো আনা কৃতিত্ব ‘ওয়্যআগনার গ্রুপ’কেই দিয়ে থাকেন মধ্য আফ্রিকার দেশটির বাসিন্দারা।
০৬১৯
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকানের পাশাপাশি নাইজার, মালি এবং বুরকিনা ফাসোয় রুশ ভাড়াটে বাহিনীর সাহায্যে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান মজবুত করেছে মস্কো। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশটির অন্যান্য রাষ্ট্রেও এই একই পদ্ধতিতে প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। পাশাপাশি ধীরে ধীরে সেখানকার দেশগুলিতে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলছেন তিনি।
০৭১৯
গত বছর (পড়ুন ২০২৪) সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকানের রাজধানী বাঙ্গুই থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে একটি সেনা ছাউনি নির্মাণের কাজ শেষ করে রাশিয়া। সূত্রের খবর, ২০৩০ সালের মধ্যে মস্কো সেখানে ১০ হাজার বাহিনী মোতায়েন করবে। মধ্য আফ্রিকার দেশটির রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজ়ান্ডার বিকান্তোভ জানিয়েছেন, ‘‘এখানকার নিরাপত্তার উন্নতির জন্য এই ধরনের একটি ঘাঁটির খুবই প্রয়োজন ছিল।’’
০৮১৯
আফ্রিকায় রুশ প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সদস্য স্যামুয়েল রামানি। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশটিতে লাগাতার আমেরিকা-বিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। কারণ আফ্রিকায় জমি হারালে আর্থিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে বড় লোকসানের মুখে পড়বেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।’’
০৯১৯
রামানির দাবি, সেই কারণেই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকানে নিজেদের অবস্থান দিন দিন আরও মজবুত করছে রাশিয়া। সেখানে পায়ের তলার মাটি সরে গেলে আফ্রিকার অন্য দেশগুলিতেও মস্কোর চাল মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
১০১৯
আফ্রিকায় রুশ ভাড়াটে সেনা ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’-এর বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযোগ নেই, তা ভাবলে ভুল হবে। ২০২২ সালে মালিতে প্রায় ৩০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সেখানকার সেনা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ওয়্যাগনার যোদ্ধারা। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ইসলামীয় কট্টরপন্থীর পাশাপাশি নিরপরাধ সাধারণ মালিবাসীও ছিলেন বলে অভিযোগ।
১১১৯
আফ্রিকার কাজ করা মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকানের সরকারি সেনাবাহিনীকে নির্যাতনের নানা পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে রুশ ভাড়াটে ফৌজ। এর মধ্যে রয়েছে হাত কাটা, নখ উপড়ে ফেলা এবং গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা।
১২১৯
রুশ ভাড়াটে সেনা ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’কে অনেকেই প্রেসিডেন্ট পুতিনের নিজস্ব বাহিনী হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন। একটা সময়ে এর প্রধান ছিলেন তাঁর রাঁধুনি অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ (স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন) চালাচ্ছে মস্কো। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ডনবাস এলাকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কব্জা করতে এই ওয়্যাগনারকে কাজে লাগিয়েছিলেন পুতিন।
১৩১৯
ইউক্রেন যুদ্ধের আগে লিবিয়া, সিরিয়া, মোজ়াম্বিক, সুদানের মতো দেশে গৃহযুদ্ধে জড়িয়েছিল এই রুশ ভাড়াটে বাহিনী। কিন্তু ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই বিদ্রোহী হন প্রিগোঝিন। রণক্ষেত্র ছেড়ে মস্কোর দিকে বাহিনী নিয়ে এগোতে শুরু করেন তিনি। যদিও সেই ‘বিদ্রোহ’ সফল ভাবে মোকাবিলা করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এর পর ওই বছরের অগস্ট মাসে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ওয়্যাগনার প্রধান।
১৪১৯
মারা যাওয়ার আগে অবশ্য একটি ভিডিয়োবার্তা দিয়েছিলেন প্রিগোঝিন। সেখানে হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে তাঁকে সাহারা মরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। আফ্রিকার মানুষকে মুক্তি এবং আনন্দের স্বাদ দিতে এবং তাঁদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’ কাজ করবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, প্রিগোঝিনের মৃত্যুর সময়ে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকানে রুশ ভাড়াটে সেনার সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় হাজার।
১৫১৯
রুশ ভাড়াটে বাহিনীর প্রধান প্রিগোঝিনের মৃত্যুর পর আফ্রিকায় মস্কো জমি হারাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ২০২২ সালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকানের সরকারকে ‘ওয়্যাগনার গ্রুপ’-এর বিকল্প খুঁজতে চাপ দেয় আমেরিকা। কিন্তু তাতেও তেমন কাজ হয়নি।
১৬১৯
২০২৩ সালে আমেরিকার বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ‘ব্যানক্রফ্ট গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট’-এর সঙ্গে বৈঠক করে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান সরকার। ওই বছরই তাঁদের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও হয়। তার পরও মধ্য আফ্রিকার দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাটি ‘ওয়্যাগনার বাহিনী’র বিকল্প হয়ে উঠেছে, তা বলা যাবে না।
১৭১৯
ওয়াশিংটনের সংস্থা ‘ব্যানক্রফ্ট গ্লোবাল’-এর জন্ম হয় ১৯৯৯ সালে। শুরু দিকে এর নাম ছিল ‘ল্যান্ডমাইন ক্লিয়ারেন্স ইন্টারন্যাশনাল’। ২০১১ সালে নিজেদের নাম বদল করে ওই সংস্থা। বর্তমানে মোট ন’টি দেশে মোতায়েন রয়েছেন এর রক্ষীরা। এর মধ্যে পাঁচটি রাষ্ট্র আফ্রিকার। বাঙ্গুইতেও পা পড়েছে তাদের।
১৮১৯
আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে রয়েছে চিন এবং তুরস্কও। বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশটিকে একাধিক সেনাঘাঁটি তৈরি করেছে বেজিং। সেখানে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে দেশগুলিকে ঋণের ফাঁদে জড়ানোর ছক করছেন ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
১৯১৯
অন্য দিকে বিবদমান আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে সেখানে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে তুরস্ক। সম্প্রতি এই মহাদেশটিতে বেড়েছে ইউরোপের দেশটির পণ্যের চাহিদা। এ ছাড়া সেখানকার খনি এবং নির্মাণ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে আঙ্কারার একাধিক সংস্থা।