US paid 72 lakh dollars for Alaska in 1867 know the cost of Greenland dgtl
US on Greenland
১৫৮ বছর আগে আলাস্কা কিনতে খসেছিল ৭২ লক্ষ! গ্রিনল্যান্ড পেতে ট্রাম্পকে দিতে হতে পারে কত?
১৮৬৭ সালে রাশিয়ার থেকে আলাস্কা কিনতে ৭২ লক্ষ ডলার খরচ করেছিল আমেরিকা। শেষ পর্যন্ত ডেনমার্ক রাজি হলে গ্রিনল্যান্ডের জন্য কত টাকা দিতে হবে ওয়াশিংটনকে?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার গোঁ ধরছেন আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথের মুখে এই বিষয়ে তাঁর করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। উত্তর মেরুর অন্তর্গত ওই দ্বীপের দাম চোকাতে কত ডলার খরচ হবে যুক্তরাষ্ট্রের? ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এর চুলচেরা বিশ্লেষণ।
০২১৯
এর আগে ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার থেকে আলাস্কা কিনে নেয় আমেরিকা। এর জন্য সেই সময়ে ওয়াশিংটনের খরচ হয়েছিল ৭২ লক্ষ ডলার। আলাঙ্কার চেয়ে আয়তনের নিরিখে গ্রিনল্যান্ড অনেকটাই বড়। আর তাই দ্বীপটি কেনার ক্ষেত্রে দাম ৫০ শতাংশ বেশি হবে বলে মনে করেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
০৩১৯
আমেরিকার উত্তরে এবং কানাডার পশ্চিম প্রান্তে ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪১২ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে আলাস্কার অবস্থান। সেখানকার তাপমাত্রা বছরের অধিকাংশ সময়েই থাকে হিমাঙ্কের নীচে। তবে কৌশলগত দিক থেকে আলাঙ্কা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাটিতে রয়েছে খনিজ তেলের ভান্ডার।
০৪১৯
সংবাদ সংস্থা ডেলি মেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যে টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আলাস্কা কিনেছিল, বর্তমানে তার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ডলার। অন্য দিকে গ্রিনল্যান্ডের আয়তন প্রায় ৮ লক্ষ ৩৬ হাজার বর্গ মাইল। আলাঙ্কার চেয়ে এর দর ৫০ শতাংশ বেশি হলে ওয়াশিংটনকে দিতে হবে আনুমানিক ২৩ কোটি ২ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার।
০৫১৯
১৯৪৬ সালে এক বার গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা। ওই সময়ে ১০ কোটি ডলারের সোনার বিনিময়ে দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন। বর্তমানে ওই টাকার অঙ্ক ১৬০ কোটি ডলারের বেশি দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে ডেলি মেল। আর্থিক বিশ্লেষকদের কথায়, গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রকৃত খরচ স্পষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয়।
০৬১৯
অন্য দিকে পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপটি কিনে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে ট্রাম্পের। সেটা তিনি আদৌ পাবেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অবশ্য এ সবের তোয়াক্কা করছেন না। গ্রিনল্যান্ড কব্জা করতে প্রয়োজনে তিনি যে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন, ইতিমধ্যেই তাঁর ইঙ্গিত দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।
০৭১৯
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি গ্রিনল্যান্ড নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন ট্রাম্প। সেখানে খোলাখুলি ভাবেই উত্তর মেরুর দ্বীপটিকে কব্জা করার কথা বলেছেন তিনি। জাতীয় এবং আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ডের আমেরিকার সঙ্গে সংযুক্তিকরণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
০৮১৯
এর পরই কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটন কী ভাবে গ্রিনল্যান্ড দখল করবে, তা জানতে চাওয়া হয়। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্প বলেন, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজকে যে ব্যবহার করা হবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। রিপাবলিকান নেতার ওই মন্তব্যের পরই দুনিয়া জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়।
০৯১৯
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে প্রথম বার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পকে গ্রিনল্যান্ড কেনার কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে রয়েছে স্বশাসিত সরকার। তবে আন্তর্জাতিক ভাবে ডেনমার্কের অধিকার এর উপর স্বীকৃত। ট্রাম্পের প্রস্তাবে অবশ্য পত্রপাট না বলে দেয় কোপেনহেগেন।
১০১৯
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডারিকসেন বলেছেন, ‘‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কেরও নয়। গ্রিনল্যান্ড হল গ্রিনল্যান্ডবাসীদের।’’ অন্য দিকে ট্রাম্প ‘অপারেশন গ্রিনল্যান্ড’-এর কথা বলতেই একরকম ফুঁসে ওঠেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী মুট এগেদে। পাল্টা হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘কেউ এই ভূমি কব্জা করবে, তা আমরা কখনওই বরদাস্ত করব না।’’
১১১৯
মজার বিষয় হল, গ্রিনল্যান্ডে আমেরিকার সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটি রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত নেটো শক্তিজোটের অন্তর্গত ডেনমার্কের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। এ হেন পরিস্থিতিতে গ্রিনল্যান্ড বিবাদকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন-কোপেনহেগেনের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
১২১৯
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯১৭ সালে ডেনমার্কের থেকে ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ কিনেছিল ওয়াশিংটন। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কোপেনহেগেন পেয়েছিল আড়াই কোটি ডলারের সোনা। বর্তমানে এর বাজারমূল্য প্রায় ৬১ কোটি ৬২ লক্ষ ডলার।
১৩১৯
১৮০৩ সালে একই ভাবে ফ্রান্সের থেকে লুসিয়ানা ক্রয় করে যুক্তরাষ্ট্র। সে বার ওয়াশিংটনের খরচ হয়েছিল দেড় কোটি ডলার মূল্যের সোনা। আজকের দিনে যা প্রায় ৪১ কোটি ৮৮ লক্ষ ডলার।
১৪১৯
তবে গ্রিনল্যান্ড ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন ফরাসি বিদেশমন্ত্রী জ়িন নোয়েল ব্যারট। ট্রাম্প এ ধরনের কোনও পদক্ষেপ করলে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ান আমেরিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি। পাশাপাশি, বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতাকে সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যারট।
১৫১৯
প্রায় একই কথা বলতে শোনা গিয়েছে জার্মানির চ্যান্সেলার ওলাফ স্কোলজ়ের গলায়। তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমান সময়ে সীমান্ত লঙ্ঘন করে অন্য দেশের জমি দখলের নীতি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সেটা পূর্ব (রাশিয়ার দিক থেকে) বা পশ্চিম (আমেরিকার দিক থেকে) যে কোনও প্রান্তেই ঘটুক না কেন।’’
১৬১৯
গ্রিনল্যান্ডের পাশাপাশি পানামা খাল দখলও নেওয়ার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। গত শতকের গোড়ায় আমেরিকাই প্রশান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগরক্ষাকারী এই খালটি খনন করেছিল। পরে ১৯৯৯ সালে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার হাতে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছিল ওয়াশিংটন।
১৭১৯
ট্রাম্পের অভিযোগ, বর্তমানে পানামা খাল দিয়ে যাওয়ার সময়ে আমেরিকার পণ্যবাহী জাহাজগুলিকে বেশি পরিমাণে শুল্ক দিতে হচ্ছে। এই আর্থিক লোকসান কোনও ভাবেই মেনে নিতে রাজি নন তিনি। পানামার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ের মার্টিনেজ় আচা অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘শুধু পানামার জনগণের হাতে এই খালের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তাদের হাতেই এই খালের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’’
১৮১৯
গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) নভেম্বরে ভোটে জেতার পর ট্রাম্পের প্রথম নজর পরে কানাডার উপর। স্বাধীন দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য করার কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন সেখানকার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
১৯১৯
আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। তার পর সেনাবাহিনীকে গ্রিনল্যান্ড দখলের নির্দেশ দিতে পারবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে নিজেরই তৈরি পশ্চিম ইউরোপের নেটোভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার যুদ্ধ বাধবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়।