চলতি বছরের প্রথম চার মাসে টলিউডের রিপোর্ট কার্ড কী বলছে? গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
২০২৩ সালের প্রথম চার মাস পার। মুক্তি পেয়েছে অসংখ্য বাংলা ছবি আর ওয়েব সিরিজ়। ঘোষণা হয়েছে একগুচ্ছ নতুন প্রজেক্টেরও। কিন্তু কোন বিষয়গুলি নিয়ে দর্শকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হল আর কোনগুলি সম্পূর্ণ গোল খেয়ে গেল, ফিরে দেখল ‘আনন্দবাজার অনলাইন’।
হিট
১। মিঠুনের লম্বা ইনিংস গত বছরের ডিসেম্বরে মুক্তি পেয়েছিল অভিজিৎ সেনের ‘প্রজাপতি’। সঙ্গে ছিল নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘হামি টু’ আর সন্দীপ রায়ের ‘হত্যাপুরী’। শুধুই এই দুই ছবিই নয়, গত বছরের বেশির ভাগ ছবিকেই পিছনে ফেলে রেসে এগিয়ে গিয়েছিল ‘প্রজাপতি’। দেব-মিঠুনের বাবা-ছেলের রসায়ন ভাল লেগেছিল দর্শকের। এবং সেই ভালবাসা উপচে পড়ে এ বছরও। দেখতে দেখতে সেই ছবি ১০০ দিন পার করে এ বছর। এই ছবির বিপুল সাফল্যের পরই মিঠুনকে নিয়ে নতুন করে হইচই পড়ে যায়। নানা ছবির প্রস্তাব পান তিনি। আপাতত বাংলাদেশের একটি ছবি এবং এসভিএফ-এর ‘কাবুলিওয়ালা’ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। তবে বোঝাই যাচ্ছে, মিঠুন এ বার লম্বা ইনিংস খেলার জন্যই মাঠে নেমেছেন।
২। প্রসেনজিতের ছক্কা
এ বছর জানুয়ারি মাসে মুক্তি পেয়েছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাবেরী অন্তর্ধান’। এক সপ্তাহের মাথায় দেশ-সহ কলকাতার বেশির ভাগ হলে সব শো পেয়ে যায় শাহরুখ খানের ‘পাঠান’। স্বাভাবিক ভাবেই হল কমে যায় বাংলা ছবির। এবং সেই নিয়ে বিস্তর তর্ক-আলোচনাও হয়। তবে এ সবের মাঝে ‘কাবেরী অন্তর্ধান’-এর বক্স অফিসের ক্ষতি হলেও ক্যারিশমাটিক নকশাল নেতার ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দর্শক-সমালোচকদের। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এপ্রিলে তাঁর জোড়া বাউন্ডারি। একসঙ্গে অ্যামাজ়ন প্রাইম ভিডিয়োজ়-এ ‘জুবিলি’ এবং প্রেক্ষাগৃহে অতনু ঘোষের ‘শেষ পাতা’। এক দিকে, গ্ল্যামারাস শ্রীকান্ত রায়, অন্য দিকে, সমাজের ব্রাত্য খিটখিটে হেরে যাওয়া শিল্পী বাল্মীকি। ‘শেষ পাতা’য় প্রসেনজিতের অভিনয় তাঁর সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ অভিনয়গুলির তালিকায় অন্যতম। আর ‘জুবিলি’র সাফল্যের পর মুম্বইয়েও তিনি এখন অনেকের ‘বুম্বাদা’। এ বছর অবশ্য প্রসেনজিতের অনেকগুলি ছবি এখনও বাকি। তার মধ্যে পুজোয় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘দশম অবতার’ অন্যতম আকর্ষণ।
৩। পুজোর প্যাকেজ
পুজোয় বাঙালি যে হইহই করে হলে বাংলা ছবি দেখতে যায়, তা বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রমাণিত। তাই তড়িঘড়ি স্লট বুক করতে সব বড় খেলোয়াড়ই বছরের শুরু থেকে মাঠে নেমে পড়েন। এ বছর প্রথম থেকেই দেবের ‘বাঘাযতীন’ ছবিটির কথা জানা ছিল। শুরুতে স্পষ্ট না হলেও পরে দেব ঘোষণা করেন, পুজোতেই ‘বাঘাযতীন’ আসছে। তত দিনে অরিন্দম শীলও জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোয়েল মল্লিককে নিয়ে পরবর্তী মিতিনমাসির ছবি পুজোতেই মুক্তি পাবে। তবে চমকে দিলেন নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা এত বছর কখনওই পুজোর ভিড়ে মারামারি করেননি। কিন্তু এ বার তাঁরাও বাজার ছাড়তে রাজি নন। আবীর চট্টোপাধ্যায়-মিমি চক্রবর্তীকে নিয়ে তাঁদের পুজোর ছবি ‘রক্তবীজ’। এই প্রথম তাঁরা খুব বড় পরিসরে রাজনৈতিক অ্যাকশন থ্রিলার তৈরি করছেন। ফলে পুজোর বাজার গরম হয়ে উঠেছিল। এ দিকে ইন্ডাস্ট্রির বড় খেলোয়াড় এসভিএফ বছরের অনেকটা সময় পুজোর পরিকল্পনা নিয়ে কোনও ভাবেই মুখ খোলেনি। কিন্তু শেষমেশ তারাও শামিল হল দৌড়ে। পুজোয় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কপ উইনিভার্স ‘দশম অবতার’ আসছে বাকিদের টেক্কা দিতে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-যিশু সেনগুপ্ত-অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে নিয়ে ‘বাইশে শ্রাবণ’ ও ‘ভিঞ্চি দা’র জোড়া প্রিক্যুয়েল এই ছবিটা। বহু দিন পর পুজোয় ফের সৃজি়ত-প্রসেনজিৎ। কোন ছবি কেমন হবে, সে তো পরেই দেখা যাবে। তবে এই পুজোর প্যাকেজ জম্পেশ।
৪। ওয়েব সিরিজ়ে টাটকা হাওয়া
প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই একগুচ্ছ বাংলা ওয়েব সিরিজ় মুক্তি পাচ্ছে বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটে। ‘হইচই’ ছাড়াও এ বছর ‘জ়ি ফাইভ’ বেশ কিছু বাংলা সিরিজ় ধারাবাহিক ভাবে বাজারে আনছে। সম্প্রতি সুরিন্দর ফিল্মসও ‘আড্ডাটাইমস’ নতুন ভাবে শুরু করেছে। এবং একগুচ্ছ নতুন সিরিজ়ের ঘোষণাও করেছে। তবে, ওয়েব সিরিজ়ে একটু একঘেয়েমি চলে এসেছিল বলে অভিযোগ করছিলেন দর্শক। গোয়েন্দা গল্প কিংবা যৌনতা ছাড়া বাংলা ওয়েব সিরিজ়ে নাকি কোনও কনটেন্টই পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে সেই অভিযোগ এ বছরের প্রথম চার মাসে খানিকটা হলেও কেটেছে। সুহোত্র মুখোপাধ্যায়ের ‘ডাকঘর’, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ এবং ঐন্দ্রিলা সেনের ‘শ্বেতকালী’-র মতো কিছু সিরিজ়ের কৃতিত্ব রয়েছে তার পিছনে।
মিস্
১। বিতর্ক পিছু ছাড়ে না
টলিউড মানেই কিছু না কিছু বিতর্ক চলতেই থাকে। বিচ্ছেদ-পরকীয়া তো ছোটখাটো ব্যাপার। তবে এই চার মাসেই টলিউড জড়িয়েছে আরও কিছু বড়সড় বিতর্কে। কুন্তলকাণ্ডে বনি সেনগুপ্তের গাড়ি নিয়ে টানাটানি বা ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ থেকে না জানিয়ে জয়তী চক্রবর্তীর গান বাদ পড়া— বেধেছে বিস্তর গোলমাল।
২। ব্যোমকেশ নিয়ে বিড়ম্বনা
বাজারে ব্যোমকেশের ছড়াছড়ি। তা-ও সকলের সাধ জাগে এই গোয়েন্দা গল্পেই হাত পাকানোর। ইতিমধ্যে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ব্যোমেকেশ সিরিজ়ের আট নম্বর সিজ়ন ‘ব্যোমকেশ ও পিঁজরাপোল’ মুক্তি পেয়েছে। গল্প সেই চিড়িয়াখানারই। কিন্তু সিরিজ়টি দেখতে বেশ বিদেশি শার্লক মার্কা। এখানে অনির্বাণ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরও ছিলেন বটে। তাই মেকিংয়ে তাঁর ছাপও ছিল। শোনা যাচ্ছে, তিনি এর পরেও বেশ কিছু প্রজেক্টে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করতে পারেন। এর পরই শোনা গিয়েছিল, সৃজিত মুখোপাধ্যায় ব্যোমকেশ করতে চান। প্রস্তাব নাকি প্রথমে গিয়েছিল দেবের কাছে। কিন্তু দু’জনের বিশেষ জমেনি। তাই দেব মন দিয়েছেন নিজস্ব ব্যোমকেশের ছবি করায়। পরিচালনায় থাকবেন বিরসা দাশগুপ্ত। সত্যবতীর প্রস্তাব গিয়েছিল মৌনী রায়ের কাছে। কিন্তু বাংলা সিনেমার বাজেট কম। তাই পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ঘুরে এখন সেই চরিত্র ঘরের মেয়ে রুক্মিণীরই করার কথা চলছে। এ দিকে সৃজিতও ছেড়ে দেবেন না। তিনিও বানাবেন ব্যোমকেশ। মুখ্য চরিত্রে থাকবেন অনির্বাণ ভট্টাচার্যই। দুই ব্যোমকেশের গল্পই নাকি এক। মুক্তিও পাবে একই সময়ে। একটি হলে, একটি ওটিটি-তে। এতে নির্মাতাদের কী লাভ হবে জানা নেই। কিন্তু দর্শক আর ক’টা ব্যোমকেশকে কত জায়গায় দেখবেন, তা গুনে শেষ করা যাচ্ছে না।
৩। প্রথম ঝলকেই হাসাহাসি
টলিউডে সব সময়ই সকলে চেষ্টা করছেন, সেরা কাজটা করার। কী করে দর্শককে নতুন ভাবে বিনোদন জোগানো যায়, তা নিয়ে তাঁরা সারা ক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁদের এই পরিশ্রমের কদর করতে পারেন না আমজনতা। তাই প্রথম লুক বেরোনোর পর থেকেই সমাজমাধ্যমে বিস্তর হাসাহাসি চলতে থাকে। যেমন ব্যোমকেশ লুকে দেবের পোস্টার বেরোনোর পরই সকলে তার সঙ্গে ‘অ্যামাজ়ন অভিযান’-এর তুলনা টেনে দেব ব্যোমকেশ হিসাবে কতটা বেমানান, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘শাবাস ফেলুদা’-র পোস্টার, টিজ়ার, ট্রেলার, যা-ই বেরোচ্ছে, ফেলুদা হিসাবে তিনি কতটা বেমানান, তা নিয়ে হাসাহাসি চলছেই।
৪। লক্ষ্মীর দেখা নেই
চার মাসে বহু ছবি এসেই উধাও হয়ে গেল। পরমা নেওটিয়ার ‘মিথ্যে প্রেমের গান’, শুভশ্রী-পরমব্রতর ‘ডক্টর বক্সী’, অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার ‘লাভ ম্যারেজ’, বনি-কৌশানীর ‘ডাল বাটি চুরমা’— এমন অজস্র ছবির উদাহরণ রয়েছে, যা দর্শকের মনেও নেই। নববর্ষে মুক্তি পেয়েছিল অনির্বাণ চক্রবর্তীর ‘দ্য একেন, রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’। এতগুলো মাসের মধ্যে একমাত্র এই ছবিই কিছু বলার মতো ব্যবসা করতে পেরেছে। অরিন্দম শীলের ‘মায়াকুমারী’, অতনু ঘোষের ‘আরো এক পৃথিবী’, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর মতো একাধিক মনে রাখার মতো ছবি দর্শক উপহার পেয়েছেন বটে। কিন্তু প্রযোজকেরা খুব একটা লাভের মুখ দেখেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy