দেবশ্রী রায়। ছবি: সংগৃহীত।
মানুষের ভালবাসাই তাঁর এগিয়ে চলার মূল মন্ত্র। এখনও স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করেন। ব্ল্যাক কফিতে চুমুক দিয়ে নতুন ওয়েব সিরিজ় শুধু নয়, ইন্ডাস্ট্রির অতীত ও বর্তমানের তুলনামূলক দিকনির্দেশ করলেন দেবশ্রী রায়। জানালেন তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অভিনেত্রীর মনের মধ্যে দীর্ঘ দিনের জমে থাকা আক্ষেপও টের পেল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: ‘কেমিস্ট্রি মাসি’ নিয়ে কী রকম প্রতিক্রিয়া পেলেন?
দেবশ্রী: সত্যি বলছি, ট্রেলার প্রকাশের পর থেকে খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কনসেপ্টটা দর্শকের পছন্দ হচ্ছে। সবে সিরিজ়টা মুক্তি পেয়েছে। এখনও নিজে দেখার সুযোগ পাইনি। আশা করছি, খুব জলদি জানতে পারব।
প্রশ্ন: এই প্রথম ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করলেন। রাজি হওয়ার পর মনের মধ্যে কোনও ভয় কাজ করেছিল?
দেবশ্রী: একদম নয়। আমি কিন্তু এক সময় ছবির পাশাপাশি সিরিয়াল করতাম। তখন ছবির নায়িকারা সিরিয়াল করতেন না। কিন্তু পর পর ‘দেনাপাওনা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘নগরপারে রূপনগর’ ইত্যাদি করেছিলাম। ও দিকে মুম্বইয়ে ‘মহাভারত’ করেছি। নতুন কিছু করতে আমি সব সময়েই মুখিয়ে থাকি।
প্রশ্ন: কয়েক বছর আগে দীর্ঘ বিরতির পর সিরিয়ালে (সর্বজয়া) ফিরেছিলেন। ছবিও এখন বুঝে করেন। আপনাকে কি রাজি করানো কঠিন?
দেবশ্রী: (হেসে) হ্যাঁ। কেরিয়ারের শুরু থেকেই বেছে কাজ করতে পছন্দ করি। ‘উনিশে এপ্রিল’ জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর আমার দায়িত্ব বেড়ে যায়। খুব ছোট বয়সে অভিনয় শুরু করি। এখনও কিন্তু অনুরাগীরা আমার অভিনয় দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। কাজ করার জন্য যে কোনও চরিত্রে রাজি হতে পারব না।
প্রশ্ন: কাজের প্রস্তাব কম আসে, না কি আপনার প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বেশি?
দেবশ্রী: প্রচুর ‘না’ বলি। বিট্টু (সোহম চক্রবর্তী) ‘শাস্ত্রী’র জন্য বলতে তখনও মনে হয়েছিল যে, আবার না বলতে হবে। তার আগে পাঁচটা ছবি আমি ইতিমধ্যেই ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ও গল্পটা শোনানো শেষ করার আগেই রাজি হয়ে যাই। অভিনেত্রী হিসেবে মনে হয়, কোন কাজটা করব আর কোনটা করব না, সেটা একটু হলেও বুঝতে পারি।
প্রশ্ন: হাসপাতালে মিঠুন চক্রবর্তীকে আপনি দেখতে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ওঁর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে নাকি?
দেবশ্রী: এই তো সরস্বতী পুজোর দিন দেখে এলাম। খুব ভাল আছেন। হাসপাতালে বসেই বলছিলেন যে, দ্রুত শুটিং শুরু করবেন। কিন্তু আমি বলেছিলাম চিকিৎসকরা এখন বিশ্রাম নিতে বলেছে। শুনে বললেন, ‘‘ধুস! ডাক্তাররা ও সব বলে।’’ মিঠুনদা চিরকাল ফুল অফ এনার্জি (হাসি)।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময় প্রথম সারির নায়িকা ছিলেন। কিন্তু বেছে কাজের পক্ষপাতী। কেরিয়ারের মধ্যগগনে কখনও হারিয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করত না?
দেবশ্রী: আমার সময়ে তৎকালীন অভিনেত্রীদের অনেকেই তিনটে শিফ্টে কাজ করতেন। আমি কিন্তু করিনি। নির্দিষ্ট সময়ে একটাই কাজ করেছি। প্রয়োজনে কখনও এক-দু’বার করতে হয়েছে। অন্যথায় ওই মাঝে দু’ঘণ্টা অন্য কোথাও দেব— ও রকম মানসিকতা আমার কোনও দিন ছিল না, আজও নেই।
প্রশ্ন: এখনকার ইন্ডাস্ট্রিতে এই যে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য সমাজমাধ্যমে...।
দেবশ্রী: (থামিয়ে দিয়ে) আমাকে দেখুন। সমাজমাধ্যমে থাকিও না। রিলও বানাই না! রোজ কথা বলতেই হবে, তা হলে আমি থাকব না হলে হারিয়ে যাব— এই ধারণায় আমি বিশ্বাস করি না। প্রচলিত ট্রেন্ডে গা ভাসাতে রাজি নই। পোষ্যদের নিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকি। দিব্যি আছি। ছ’মাস বাড়িতে বসে থাকলেও ক্ষতি নেই। তাতে দেবশ্রী রায় হারিয়ে যাবে না, দেবশ্রী রায় থাকবে।
প্রশ্ন: ফেসবুকে তো আপনার ফ্যান ক্লাবের পেজ আছে। ‘লাঠি’ বা ‘১৯শে এপ্রিল’-এর মতো ছবি নিয়ে নিশ্চয়ই এখনও প্রতিক্রিয়া পান।
দেবশ্রী: অবশ্যই। ওঁরা পাঠাতে থাকেন। আমি খোঁজ রাখি। (নিজের ফোন বার করে ফেসবুকে অনুরাগীদের মন্তব্যের স্ক্রিনশট দেখালেন)। অনুরাগীদের সুন্দর সুন্দর কথায় সত্যিই আমার মনটা ভরে যায়। তাই বুঝতেই পারছেন, এমন কিছু করব না, যাতে অনুরাগীরা বলেন যে, ইস্ দেবশ্রী রায়কে এটা করতে হল!
প্রশ্ন: অনুরাগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা কি শিল্পীদের খেয়াল রাখা উচিত?
দেবশ্রী: দেখুন, প্রচুর লড়াই করে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলাম। তারকা-কন্যা নই। হঠাৎ হাতে চাঁদও পেয়ে যাইনি। ছোটবেলায় মা হাত ধরে ফ্লোরে নিয়ে যেতেন। পাঁচ জনের সঙ্গে অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। কত মানুষ জানতে চান, আমি কেন ফিরছি না। পুরোদমে কাজ করছি না। দর্শক এখনও আমার থেকে অর্থপূর্ণ কাজ আশা করেন।
প্রশ্ন: পরিশ্রম করে পাওয়া এবং সহজে পাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে বলে মানেন?
দেবশ্রী: অবশ্যই। কত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আমরা এক সময়ে কাজ করেছি আজকের প্রজন্ম ধারণাই করতে পারবে না। না ছিল মেক আপ ভ্যান, এসি ফ্লোর তো কল্পনারও অতীত! আউটডোরে লোকের বাড়িতে, এমনকি, বাসের মধ্যে চাদর টাঙিয়েও পোশাক বদলেছি। এ রকমও দিন গিয়েছে যখন রিকশা করে মা আমাকে মেনকা সিনেমা পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। কারণ তাতে কিছু টাকা সাশ্রয় হত। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে স্টুডিয়োয় যেতাম।
প্রশ্ন: নতুনদের উদ্দেশে কোনও পরামর্শ?
দেবশ্রী: দিয়ে লাভ নেই। কারণ প্রেক্ষাপটটাই বদলে গিয়েছে। আবার এটাও ঠিক, সব কিছু নিয়ে দোষারোপ করে লাভ নেই।
প্রশ্ন: এখনকার বাংলা ছবি দেখেন?
দেবশ্রী: কেউ রিপোর্ট ভাল বললে তখন দেখি।
প্রশ্ন: আপনার শেষ দেখা বাংলা ছবি?
দেবশ্রী: এই তো মিঠুনদার ‘কাবুলিওয়ালা’ দেখলাম। তার আগে ‘অপরাজিত’ দেখেছিলাম।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে এখন অনেক নতুন নায়িকা উঠে আসছেন। এই প্রজন্মের মধ্যে কোন কোন নায়িকার অভিনয় ভাল লাগে?
দেবশ্রী: সত্যি বলতে নতুনদের মধ্যে সে রকম কারও কাজই দেখা হয়নি। দেখলে নিশ্চয়ই কিছু বলতে পারতাম।
প্রশ্ন: আপনি এত বেছে কাজ করেন। কিন্তু আপনাদের প্রজন্মের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত তো আজও চুটিয়ে কাজ করছেন।
দেবশ্রী: আমাকে যে টিকে থাকতেই হবে, সেটা মনে করি না। মানুষ আমাকে ভুলবেন না, সেটা বিশ্বাস করি। কাজ করতেই হবে এ রকম কোনও তাগিদও আমার নেই। যথাযত চরিত্র না পেলে করব না।
প্রশ্ন: রানি মুখোপাধ্যায় আপনার বোনঝি। রানি এখন বলিউডে নারীকেন্দ্রিক ছবির নিজস্ব একটা ঘরানা তৈরি করেছেন। ‘মর্দানি’ বা ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিগুলো প্রশংসিত। এ রকম নারীকেন্দ্রিক ছবিতে অভিনয় করতে ইচ্ছে করে না?
দেবশ্রী: কেউ ভাবছেন কই? টলিউডে দেবশ্রী রায়কে নিয়ে কেউ ভাবেন? কেউ ভাবছেন না!
প্রশ্ন: এটা কি কোনও আক্ষেপ থেকে বললেন?
দেবশ্রী: ভাবলে তো এত দিনে নিশ্চয়ই সে রকম ছবি হয়তো করে ফেলতাম। বলছি তো, চ্যালেঞ্জিং চরিত্র হলে আমি এখনও রাজি। ‘১৯শে এপ্রিল’ এর মাধ্যমে ২০ বছর পরে সিনেমা হলের সামনে নাকি গাড়ি এসে থেমেছিল। কারণ তার আগে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, ভদ্রলোকে সিনেমা হলে ঢুকতেন না। উত্তমকুমারের প্রয়াণের পর বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সিংহভাগ স্টুডিয়োতে বড় বড় তালা ঝুলত। কোনও কাজ ছিল না। কখন দর্শক আবার সিনেমা দেখতে শুরু করলেন? আমার সঙ্গে তাপসের (তাপস পাল) জুটির হাত ধরে। সেই ছবির নাম ‘দাদার কীর্তি’।
প্রশ্ন: ‘দাদার কীর্তি’-র পরিচালক তরুণ মজুমদারকে আপনি নিজের ‘মেন্টর’ বলেন। ওঁর চলে যাওয়াটা নিশ্চয়ই মেনে নেওয়া কঠিন ছিল?
দেবশ্রী: মৃৎশিল্পীর মতো বাস্তবে শিল্পী তৈরি করতেন তরুণদা। তাপসকে উনি আমার চোখের সামনে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। লাঞ্চ ব্রেকে তাপসকে ফ্লোরে বসিয়ে লিপ সিঙ্ক করা শেখাতেন তনুদা। একটা ছোট্ট ঘটনা বলি?
প্রশ্ন: অবশ্যই।
দেবশ্রী: তখন সবে লিপ গ্লস বাজারে উঠেছে। আমি লাগিয়ে ওঁর ফ্লোরে গিয়েছি। দেখেই মেকআপ আর্টিস্টকে ডেকে বললেন, ‘‘চুমকির (দেবশ্রীর আসল নাম) ঠোঁট চকচক করছে কেন?’’ এ দিকে উনি তো জানেন না। (হাসতে হাসতে) তার পর তনুদা আমার মেকআপের সরঞ্জামের মধ্যে থেকে কৌটোটা খুঁজে বার করে মেকআপ আর্টিস্টকে বললেন, ‘‘এটা নিয়ে গিয়ে রেস কোর্সে ফেলে আসুন যাতে চুমকি আর হাতে না পায়।’’ মনে আছে, ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবির শুটিংয়ের সময় এক বার ১০ মিনিট দেরি করে পৌঁছেছিলাম বলে আমাকে ফ্লোর থেকে বার করে দিয়েছিলেন তনুবাবু। বাইরে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলেছিলাম।
প্রশ্ন: দেবশ্রী রায় হয়ে ওঠার লড়াইটা তা হলে বেশ কঠিন ছিল?
দেবশ্রী: কিন্তু তাতে আর কী হল? দেবশ্রী রায় কি পদ্মশ্রী পেয়েছেন? না পাননি। এখান থেকে আমি অন্য কোনও সেরার সম্মানও পাইনি। জাতীয় পুরস্কারজয়ী এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাওয়া দেবশ্রী রায়কে হয়তো ওগুলো দেওয়া যায় না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি মরাঠি, কিন্তু জন্মেছি আর বড় হয়েছি কলকাতায়! আমার মনে হয়, আমি যোগ্য নই তাই হয়তো পাইনি।
প্রশ্ন: অনেকটা খারাপ লাগা রয়ে গিয়েছে?
দেবশ্রী: না, না…একদম নয়। এখন সমাজটাই এ রকম হয়ে গিয়েছে। আমার পুরস্কার দর্শকের ভালবাসা।
প্রশ্ন: অতীত এবং এখনকার ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেও তো বিস্তর ফারাক।
দেবশ্রী: অনেক। ছবির শুটিংয়ের শেষ দিনে আমরা শিল্পীদের চোখে জল আসত। কারণ, আর দেখা হবে না। আউটডোরে গেলে সকলে মিলে একটা পরিবারের মতো থাকতাম। যেমন শমিত ভঞ্জ আমাকে আদর করে কখনও ‘মেয়ে’ কখনও আবার ‘পেত্নী’ বলেও ডাকতেন। অনুপ কুমার আমাকে ‘নিমকি’ বলে ডাকতেন। এঁরা আগে ফ্লোরে ঢুকে আমার ঘরটা খুঁজতেন। যাতে আমার পাশের ঘরটা পান, সে কথা বলতেন। যাতে অভিভাবকের মতো গাইড করতে পারেন। এখন তো যে যার তার মতো। কে কখন ফ্লোরে আসছে সেটাই জানতে পারি না। এই সিরিজ়টার শুটিংয়ের সময়েও দেখছিলাম সব কিছুর মধ্যেই একটা গতি এসে গিয়েছে। কারও যেন হাতে সময় নেই।
প্রশ্ন: সামনে ভোট আসছে। ২০২১ সালে আপনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে হঠাৎ সরে দাঁড়িয়েছিলেন কেন?
দেবশ্রী: ১০ বছর ধরে সাধ্যমতো নিজের কেন্দ্রে কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমাকে যেখানে (রায়দিঘি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমি ধীরে ধীরে ওখানে অস্বস্তি বোধ করছিলাম। ওখানকার রাজনীতিটা খুবই কঠিন। তাই সরে দাঁড়িয়েছিলাম।
প্রশ্ন: কিন্তু এই যে বলা হয়, দলের তরফে টিকিট না পাওয়ার কারণেই নাকি আপনি সরে দাঁড়ান।
দেবশ্রী: একদমই নয়। আমি বলেই দিয়েছিলাম যে, ভোটে লড়ব না। কারণ, এক জন বিধায়কের কাজ যে কঠিন, সেটা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম।
প্রশ্ন: আবার প্রস্তাব পেলে রাজনীতির ময়দানে আসতে চাইবেন?
দেবশ্রী: এই মুহূর্তে কিছু ভাবছি না। কারণ, আমি খুব দূরের জিনিস এখন ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না।
প্রশ্ন: নতুন কাজের কোনও ভাবনা?
দেবশ্রী: (হেসে) ছবির প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু না বলেছি।
প্রশ্ন: আর সিরিয়াল নিয়ে কোনও ভাবনা নেই?
দেবশ্রী: এক বছর টানা ‘সর্বজয়া’ করেছিলাম। সিরিয়ালে একটা অন্য ধরনের দায়বদ্ধতা থাকে। সারা দিন ফ্লোরে থাকা। রাত করে বাড়ি ফিরে আবার পরের দিন সেই একই জিনিস। যেন অফিস! খুব ক্লান্ত হয়ে যেতাম। এই মুহূর্তে কিছু ভাবছি না। কিন্তু পরে যদি আবার ভাল কোনও প্রস্তাব আসে, তখন ভেবে দেখতেই পারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy