অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
এক সময় হিন্দি টেলিভিশনের অন্যতম চর্চিত মুখ ছিলেন তিনি। টলিউডে ছবির সংখ্যা কম। তবে যে ক’টা ছবি করেছেন, সবই কমবেশি হিট। তবু যেন কয়েক বছর ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তাল কাটে পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি যখন বাংলা ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুম্বইয়ে পা বাড়ালেন, মন ভেঙেছিল বাংলার একাধিক নায়কের। এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে ভরা সংসার পূজার। টলিউডের সঙ্গে বাড়ছে যোগাযোগ। ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে তাঁর নতুন সিরিজ় ‘ক্যাবারে’। ব্যক্তিগত জীবন থেকে কর্মজীবনের ওঠা পড়া নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের মুখে অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: নতুন বছরে মুম্বইয়ে বেশি সময় দেবেন না কি কলকাতায়?
পূজা: আসলে এই মুহূর্তে বেশ ব্যস্ততার মধ্যেই কাটছে। গত বছর থেকেই কলকাতায় যাতায়াত বেড়েছে। এই বছরটাও তেমনই হবে। ১০ দিন মুম্বইতে থাকলে ২০ দিন আমি কলকাতায় থাকি। কাজ চলছে বলে বেশি সময় এখানেই দিতে হচ্ছে। আর এটা খুব একটা নতুন কিছু নয় আমার জন্যে, এ ভাবেই চালিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন: সিরিজ়ের নাম ‘ক্যাবারে’। সত্তরের দশকের মিস শেফালি ছিলেন কলকাতার ‘কুইন অফ ক্যাবারে’। তাঁর জীবন থেকেই এই সিরিজ় অনুপ্রাণিত?
পূজা: নাহ্, এই গল্পটা একেবারে অন্য। তবে হ্যাঁ, এই সিরিজ়ে যে সময়টা ধরা হয়েছে অবশ্যই মিস শেফালি সেই সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন। ক্যাবারে বলতে যে কলকাতার ছবিটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে, এই সিরিজ়ে সেই কলকাতাকেই দেখানো হয়েছে।
প্রশ্ন: ক্যাবারে ডান্সারের চরিত্রে অভিনয় করাটা কত কঠিন? কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?
পূজা: আসলে আমাদের পেশার তাগিদে শরীরচর্চা করতে হয়। শুধু এই সিরিজ়ের জন্য নয়। আমি যে কাজই করি, তাতে যাতে সুন্দর দেখতে লাগে, সেই চেষ্টা করি। তবে এখানে এমন একটা চরিত্র করেছি যার জন্য ক্র্যাশ ডায়েট করতে হয়েছে। শুটিংয়ের সময় একেবারেই কিছু খেতাম না। দিনে এক বার খেতাম। প্রায় ১৮-২০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতাম।
প্রশ্ন: পর্দায় সুন্দর দেখাতে বলিউডের খ্যাতনামী নায়িকারা নাকি বরফ খান। আপনার তেমন কোনও টোটকা আছে নাকি?
পূজা: নাহ্, বরফ খেতে পারি না। কিন্তু বরফ জলে মুখ ডোবানোর চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। কারণ, জলে একটু ভয় রয়েছে। তাই আজ পর্যন্ত সাঁতার শেখা হয়নি। তবে আমার মনে হয়, এ সব করে আমার তেমন কিছু ফারাক পড়ে না চেহারায়। আমি ডায়েট করি।
প্রশ্ন: কলকাতার সাবেক কোনও পানশালায় ‘ক্যাবারে’-র শুটিং হয়েছে?
পূজা: হ্যাঁ, আমরা মধ্য কলকাতার নামী সব পানশালায় শুট করেছি। যেখানে পুরনো সময়ের আমেজটা রয়েছে। তবে শুট করাটা খুব কঠিন ছিল। পানশালা বন্ধ হওয়ার পর রাত ২টো থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত শুটিং হত। অত ভারী পোশাক পরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। সেখানকার লোকজন দেখে ভাবত, কী হচ্ছে এখানে! তবে আমাদের টিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা খুব ভাল।
প্রশ্ন: ক্যাবারের সঙ্গে কলকাতায় পার্ক স্ট্রিটের একটা সম্পর্ক রয়েছে, কখনও চাক্ষুষ করেছেন?
পূজা: হ্যাঁ, এক বার পার্ক স্ট্রিটের এক রেস্তরাঁয় দেখেছিলাম। পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে যে অনুভূতিটা হয়, সেটা কিন্তু মুম্বইয়ের কোথাও পাওয়া যায় না। এক একটা শহরের এক একটা স্বাদ থাকে।
প্রশ্ন: অভিনেত্রীরা খোলামেলা পোশাক পরে ছবি দিলে সমাজমাধ্যমে এখনও নানা কটূক্তি শুনতে হয়। আপনার প্রোফাইলে নেতিবাচক মন্তব্যের ছড়াছড়ি। সমাজ কি আদৌ এগিয়েছে?
পূজা: আমাদের আগামী যে প্রজন্ম আসছে, আমার মনে হয় তাঁরা খুব খোলা মনের হবে। আমি খুবই আশাবাদী। আমাদের আগের প্রজন্ম ও আমাদের প্রজন্মের মা বলতেই শাড়ি পরা নারীর ধারণা রয়েছে। তাই মেয়েদের শর্ট স্কার্টে দেখলে হয়তো ভুল নজরে দেখেন অনেকে। আমি যে ভাবে আমার ছেলেকে বড় করছি তাতে ও নিজের মাকে দেখছে বিকিনিতে। তাই অন্য মেয়েরা বিকিনি পরলে কখনওই কুনজরে দেখবে না। আমার মনে হয় এগুলোকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা উচিত। শরীর ঢেকে রাখাই ভাল চরিত্রের লক্ষণ— এটা ভুল ধারণা। অভিনেতাদের চরিত্রের প্রয়োজন অনেক ধরনের পোশাক পরতে হয়। আমি যেমন ব্যক্তিগত জীবনে একেবারেই সাজগোজ করি না। আর আমার সমাজমাধ্যমের পাতায় যাঁরা উল্টোপাল্টা লেখেন, আমি তাঁদের ‘ব্লক’ করি না। কারণ, তাঁরা যত খুশি লিখুন, আমি তো বদলাব না নিজেকে!
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমের কটাক্ষ কখনও আপনাকে আঘাত করেছে?
পূজা: বেশ কয়েক বছর আগে রাখিতে আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে ছবি দিয়েছিলাম। সেটাকে নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করা হয়। নজর খারাপ হলে আমি বিকিনি পরি কিংবা বোরখা— সবটাই নোংরা মনে হবে।
প্রশ্ন: ছেলের বয়স তিন। সন্তানকে বড় করার সময় কি বাড়তি সতর্কতা রয়েছে?
পূজা: মহিলাদের সম্মান করাটা সচেতন ভাবে শেখাচ্ছি। ও যাতে নিজের মা ও অন্য মেয়েদের মধ্যে কোনও তুলনা না টানে, সেই শিক্ষা দিচ্ছি।
প্রশ্ন: এতগুলো বছর হল ইন্ডাস্ট্রিতে। কলকাতায় কাজ পাওয়া আর মুম্বইয়ের লড়াইয়ের মধ্যে কোনটা বেশি কঠিন বলে মনে হয়?
পূজা: আসলে মুম্বই অনেক বড় শহর। যেখানে সারা দেশ থেকে লোক আসে। কলকাতায় শুধু বাংলার ছেলেমেয়েরাই রয়েছে। মু্ম্বইয়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, তাই কাজ পাওয়া একটু কষ্টের। কিন্তু যার মধ্যে প্রতিভা আছে, সে ঠিক কাজ পাবে।
প্রশ্ন: লড়াই করতে করতে কখনও ক্লান্ত লাগে?
পূজা: নাহ্, ক্লান্তি আসে না। কারণ, আমি কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামিনি। ও কেন পাচ্ছে, আমি কেন পাচ্ছি না— এ সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। যার ভাগ্যে যতটা থাকবে, ততটুকুই পাবে। অনেক সময় অন্য নায়িকার জায়গা আমি নিয়েছি, আবার আমার জায়গায় অন্যকেও নেওয়া হয়েছে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু নিজের সঙ্গে। আমি প্রতিটা কাজেই নিজের সেরাটা দিতে চাই।
প্রশ্ন: প্রথমে মা হয়ে তার পর আড়ম্বর করে বিয়ে করেছিলেন। নিজেকে ‘সাহসী’ মনে করেন?
পূজা: হয়তো সাহসী পদক্ষেপ। কিন্তু আমি কোনও ‘ট্রেন্ড’ তৈরি করতে কিছু করিনি। ২০২০ সালে জানুয়ারিতে আইনি বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সব কিছু ঠিক ছিল। জয়পুরে বিয়ে হবে, লোকজন নিমন্ত্রণ করা হয়ে যায়। কিন্তু মাঝে কোভিড চলে আসে। আমার খুব শখ ছিল পালকি চড়ে বিয়ে করতে যাব, সে সব হল না। তখন ভাবলাম ছেলেটা একটু বড় হোক, তার পর করব। ছেলের এক বছর যখন হল, তখন বন্ধুবান্ধব নিয়ে গোয়াতে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান করি। তবে যতটা করতে পেরেছি, তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই।
প্রশ্ন: অঙ্কুশ হাজরা এবং ঐন্দ্রিলা সেন ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে আর কোনও বন্ধু রয়েছে আপনার?
পূজা: এক সময় অনেক বন্ধু ছিল। কিন্তু সবাই সবার জীবনে ব্যস্ত। তবে আমার সঙ্গে শুভশ্রীর (গঙ্গোপাধ্যায়) যোগাযোগ সব সময় ছিল। মনামী ঘোষ, ইশা সাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। তবে রাতেবিরেতে ঘুরে বেড়ানোর মতো বন্ধুও নেই। সময়ও নেই আমার। কারণ, এখন একটা ছোট বাচ্চা আছে। তাকে সময় দিতে হয়।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে নির্ভেজাল বন্ধুত্ব হওয়া সম্ভব?
পূজা: আমার মনে হয়, এটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। সব ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল-মন্দ সব ধরনের মানুষ থাকে। যদি কারও সঙ্গে সেই আত্মার যোগ থাকে, তা হলে ঠিক বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
প্রশ্ন: আপনার স্বামী হিন্দি সিরিয়ালের নায়ক। বাংলা সিনেমার কত জন নায়কের মন ভাঙে আপনার বিয়ের খবরে?
পূজা: (অট্টহাসি) অনেকেরই মন ভেঙেছিল। পরে তারাই আমাকে বলে যে, মন ভেঙেছে। নামগুলো বলতে পারব না। তবে, এখন ফিরে তাকালে বড্ড ছেলেমানুষি মনে হয়।
প্রশ্ন: দেবের সঙ্গে আপনার জুটি হিট ছিল। ২০১৮ এর পর আর ছবি করলেন না কেন?
পূজা: ‘হইচই আনলিমিটেড’-এ শেষ বার কাজ করেছিলাম। তার পর আর একটা ছবির কথা হয়। তবে শেষমেশ কী হল, জানি না!
প্রশ্ন: দেব তো এখন প্রযোজক, আপনাদের জুটি কি আবার ফিরবে?
পূজা: জানি না, আমি নিশ্চয়ই চাইব কাজ করতে। তবে এখন ওর উপর নির্ভর করছে। ও চাইলে হবে। প্রযোজক যে হেতু, নিশ্চয়ই ওর কাজের একটা ধরন রয়েছে। তবে দর্শক এখনও ভালবাসেন আমাদের জুটিকে।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ে কাজের পরিমাণ কমেছে বলেই নাকি আপনি কলকাতায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন?
পূজা: আমাকে কোনও দিনই আলাদা করে চেষ্টা করতে হয়নি। কাজ এসেছে আমার কাছে। ‘ক্যাবারে’র ট্রেলার দেখে বাংলাদেশের দুটো ছবির প্রস্তাব পেয়েছি। কাজ করে কাজ পেয়েছি বরাবর।
প্রশ্ন: জাতীয় টেলিভিশনে এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। কাজ কমিয়ে দিলেন কেন?
পূজা: সত্যি বলতে কি, মা হওয়া পর টিভিতে কাজ কমিয়ে দিই। টেলিভিশনে কাজ করলে বাচ্চাকে সময় দেওয়া যায় না। ব্যক্তিগত জীবনেও সময় পাওয়া যায় না। ৩০ দিন লোকে সিরিয়াল দেখেন। যার ফলে ৩০ দিন কাজ করতে হয়। আমি আর সে রকম কাজ করতে চাই না।
প্রশ্ন: ওটিটি-র মাধ্যমে অনেকে নিজের অভিনয় গুণ নতুন করে প্রমাণ করেন। এই সিরিজ় থেকে কি তেমন কিছু প্রত্যাশা রয়েছে?
পূজা: আমার মনে হয় যে পরিচালকেরা ভাবেন, পূজা শুধু গ্ল্যামারস, বাণিজ্যিক ছবির নায়িকাই হতে পারে, সেই ধারণা এই সিরিজ় বদলে দেবে। আর সুযোগ না দিলে অভিনয় গুণ তো বোঝা যায় না। আমি যে সুযোগটা পেয়েছি, তাতেই সবটা দিয়েছি বলেই মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন: এখানে কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে?
পূজা: রাজা চন্দ, ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও অনেক পরিচালকই রয়েছেন।
প্রশ্ন: সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত কোন বাংলা ছবি দেখলেন?
পূজা: আমি ছবি দেখতে থাকি। ‘প্রধান’ দেখেছি, তার আগে ‘প্রজাপতি’ দেখেছি, খুব ভাল লেগেছে ছবিগুলো। অভিজিৎদা (সেন) খুব ভাল পরিচালক। ওর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।
প্রশ্ন: সবই দেবের ছবি দেখা হয়েছে?
পূজা: (হাসি) হ্যাঁ।
প্রশ্ন: ‘প্রধান’-এ একটি চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল। শেষমেশ আপনাকে দেখা গেল না কেন?
পূজা: আমার একটু ডেটের সমস্যা হচ্ছিল। তাই করা হয়নি। আশা করছি, ভবিষ্যতে কাজ করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy