Advertisement
০৩ অক্টোবর ২০২৪

বুধ-বৃহস্পতিবার অফিসে বেশি কাজ রাখবেন না

অ্যাটলেটিকোর ‘চার সেকেন্ড’ রুল। মোরিনহোর স্ট্র্যাটেজি। বায়ার্নের রিজার্ভ বেঞ্চ। রিয়ালের অ্যাটাক। ফাইনালে পৌঁছবে কারা? ভবিষ্যদ্বাণী করলেন অর্জুন ভৌমিককী, প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের আগে যা বলেছিলাম, সেটা মিলে গেল তো! কয়েকটা আনএক্সপেকটেড সারপ্রাইজ ছাড়া এমনটাই কিন্তু হওয়ার ছিল। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদ আর বায়ার্ন মিউনিখ কিন্তু যোগ্য দল হিসেবেই সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এমনিতেই আমার মতে শেষ তিন-চার বছরের মধ্যে সব থেকে ‘কম্পিটিটিভ’ লিগ।

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৬
Share: Save:

কী, প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের আগে যা বলেছিলাম, সেটা মিলে গেল তো!

কয়েকটা আনএক্সপেকটেড সারপ্রাইজ ছাড়া এমনটাই কিন্তু হওয়ার ছিল। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদ আর বায়ার্ন মিউনিখ কিন্তু যোগ্য দল হিসেবেই সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এমনিতেই আমার মতে শেষ তিন-চার বছরের মধ্যে সব থেকে ‘কম্পিটিটিভ’ লিগ।

বায়ার্ন আর ম্যান ইউনাইটেড-এর ম্যাচটাই দেখুন না। বায়ার্ন কিন্তু সব দিক থেকেই ম্যান-ইউকে নাকের জলে চোখের জলে করে ছেড়েছে। কেমন দশ জন মিলে ডিফেন্ড করতে হচ্ছিল ম্যান ইউকে দেখেছেন তো? ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেই দেখুন না কেমন অবস্থা রেড ডেভিলদের। আমার কিন্তু সব সময় মনে হয়েছে, বায়ার্ন অনেক বেশি স্ট্রং আর ইভেন টিম। সেমিফাইনালে যাওয়াটা স্বাভাবিকই ছিল।

চেলসির সুবিধা হল হোসে মোরিনহোর মতো এক কোচকে পাওয়া। প্লেয়ারদের কথা ছেড়ে দিন, ওই রকম একজন কোচ পাওয়া মানেই তো খেলা অর্ধেকটা জিতে গেল চেলসি। বিশেষ করে নক আউট পর্যায়ে তো মোরিনহোর ইন্সট্যান্ট ডিসিশন মেকিং আর বিপক্ষকে মাপার ক্ষমতা বিশাল কাজে দেবে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সেমিফাইনালে আসাতেও আমি কিন্তু অবাক হয়ে যাইনি। কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে যে ভাবে নাস্তানাবুদ করেছে, সেটা এক্সপেক্টেডই ছিল। যে কোনও টিমকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে অ্যাটলেটিকো। এ বার আসি রিয়াল মাদ্রিদের কথায়। রিয়ালের আক্রমণ যে কোনও টিমের কাছেই দুঃস্বপ্ন। বিপক্ষ কোচের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য ওটাই যথেষ্ট। আর কোপা ডেল রে-তে গ্যারেথ বেল-এর ওই রকম গোলের পর তো সে কথা বলাই যায়।

গ্যারেথ বেল-এর আক্রমণ বিপক্ষের ত্রাস হবেই

এ বার এক এক করে ম্যাচের কথায় আসি। পেপ গুয়ার্দিওলা যখন অ্যাটলেটিকোর কোচ ছিলেন, তখন একটা রুল চালু ছিল ‘৮ সেকেন্ড রুল’। তার মানে মাঠের যে কোনও জায়গায় হোক না কেন, বল নিজেদের প্লেয়ারদের থেকে বিপক্ষের পায়ে চলে গেলে, ৮ সেকেন্ডের মধ্যে নিজেদের পায়ে নিয়ে আসতে হবে। আমার তো মনে হয়, নতুন কোচ দিয়েগো সেমিওনে সেটাকেই অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন। যে করেই হোক চার সেকেন্ডের মধ্যে নিজেদের পায়ে নিয়ে আসতে হবে বল। তা সে টোটাল ফুটবল হোক কী তিকিতাকা হোক নিয়ম একটাই ‘চার সেকেন্ডে বল পায়ে আনো’। টিমটাও তো সাঙ্ঘাতিক। ক্যাপ্টেন গাবি, জ্যাভি, ব্রাজিলের দিয়েগো, কোকে, ডেভিড ভিলা আর অবশ্যই নাম করতে হবে দিয়েগো কোস্টা-র। ব্রাজিল তো এ বার আঙুল কামড়াবে, কেন কোস্টা ব্রাজিল ছেড়ে স্পেনের নাগরিকত্ব নিল! বিশ্বকাপেও কিন্তু কোস্টা সাড়া ফেলবে। এমনকী চেলসি থেকে লোন নেওয়া গোলকিপার থাইবোট কোর্টিস-ও চেলসির পক্ষে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। আমার মতে ও কিন্তু পরবর্তী পেত্রে চেক। ওর সেই প্রতিভা আছে। ২৪ বছর পর অ্যাটলেটিকো সেমি ফাইনাল খেলছে। আবার কবে খেলবে কে জানে? ছোট দলের পক্ষে প্লেয়ার ধরে রাখাটাই তো সমস্যার!

সে দিক থেকে দেখতে গেলে, চেলসির সমস্যা অনেক। সম্পদ বলতে কোচ মোরিনহো। উনি মাস্টার। বিশেষ করে ট্যাক্টিক্যাল গেমে যে কোনও টিমকে কাঁদিয়ে ছাড়তে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে দশটার মধ্যে ন’টা সিদ্ধান্ত কিন্তু মোরিনহোর ঠিক হয়। এটা সেমিফাইনালে অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর হবে। মনে রাখবেন আন্ডারডগ টিম নিয়ে এর আগে কিন্তু মোরিনহো দু’-দু’বার কাপ জিতেছেন। তাই স্যামুয়েল এটোর কথা বাদ দিয়েও বলব চেলসির আসল হিরো কিন্তু ওদের কোচ। চেলসির শক্তি অবশ্যই যুবশক্তি আর শক্তপোক্ত রক্ষণ। সমস্যাও কিন্তু কম নেই ওদের। এটো-র চোট আছে। টোরেস-রও আর সেই সোনালি দিন নেই। গোটা টিমটাই কিন্তু স্ট্রাগল করছে। তাই এক কথায় যদি বলতে হয়, আমার বাজি থাকবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের উপর।

এ বার আসি পরের সেমিফাইনালের কথায়। রিয়াল মাদ্রিদের সব থেকে সুবিধা হল, ওরা পরপর কড়া সব প্রতিপক্ষের সামনাসামনি হয়েছে। প্রি-কোয়ার্টর ফাইনালে শালকে ০৪ বা কোয়ার্টর ফাইনালে ডর্টমুন্ডের মতো টিমকে হারানো চাড্ডিখানি কথা নয়। কিন্তু ওরা সেটা করে দেখিয়েছে। সে দিক থেকে বায়ার্নের প্রতিপক্ষ কিন্তু তেমন জোরালো ছিল না। এই সময়ে ম্যান ইউ-এর থেকে অনেক কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী ডর্টমুন্ড। রিয়ালের একটাই খারাপ দিক দেখতে পাচ্ছি। সেটা হল, ওরা বড্ড বেশি রোনাল্ডোর উপর ভরসা করছে। কিন্তু মনে রাখবেন, একা কোনও প্লেয়ার দিনের পর দিন ম্যাচ জিতিয়ে যাবে তেমনটা হতে পারে না। দিয়েদো লোপেজ বা গ্যারেথ বেল-ও নিঃসন্দেহে সেমিফাইনালে জ্বলে উঠবে। কিন্তু আসল কেরামতিটা হবে দুই টিমের ডিফেন্ডারদের।

আমার মনে হয়, রক্ষণ যাদের ভাল হবে, তারাই জিতবে এই ম্যাচ। সেখানে কিন্তু একটু হলেও এগিয়ে বায়ার্ন। আমাকে নম্বর দিতে হলে, যদি বায়ার্নকে ৯ দিই, তবে রিয়ালকে ৮-এর বেশি দিতে পারব না। বায়ার্ন সেন্ট্রাল ডিফেন্স নিয়ে ভুগলেও, রিজার্ভ বেঞ্চটা সত্যিই অন্যদের ঈর্ষার কারণ। রিবেরি, ক্রোস বা মারিও গোটজি তো যে কোনও ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। অ্যাটাক তো দু’টিমেরই ভাল, আগেই বললাম।

কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মেন্টালিটি কিন্তু অনেক বেশি বায়ার্নের লাগছে।

টিমের ভারসাম্যটাও বায়ার্নের দিকেই বেশি। অবশ্য ওই রকম একটা রিজার্ভ বেঞ্চ থাকলে চিন্তাটা প্রথমেই অর্ধেক হয়ে যায়।

তাই আমার মনে হয়, ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ-কেই দেখতে পাব অ্যাটলেটিকোর বিরুদ্ধে খেলতে।

সে যাই হোক না কেন রাত বারোটা পনেরো থেকে রাত দু’টো পর্যন্ত খেলা দেখে, পরের দিন অফিসে যেতে সবারই অসুবিধা হয়। আমার তো হয়ই। কিন্তু কী করা যাবে, ঘুম একটু কম হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল বলে কথা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arjun bhowmik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE