সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচনী রাজনীতির ময়দানে তরুণ প্রজন্মকে ইতিমধ্যেই সামনে আনা হয়েছে। এ বার সংগঠনেও প্রজন্মের বদল সেরে ফেলতে চায় সিপিএম। সম্মেলন-পর্বের ঢাকে কাঠি পড়তেই প্রজন্ম বদলের প্রক্রিয়া নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্কও শুরু হয়েছে। বয়স-বিধি এবং তরুণদের বেশি করে জায়গা দেওয়ার বার্তা সামনে রেখেই আগামী বছর ২২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি হুগলির কোন্নগরে হতে চলেছে সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন। পুজোর পরেই শুরু হবে এরিয়া কমিটির সম্মেলন প্রক্রিয়া। জেলা সম্মেলন চলবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস জুড়ে।
মহালয়ার দিন সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। সম্মেলন-পর্বের জন্য দলীয় নির্দেশিকা ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে সেখানে। সেই নির্দেশিকার নির্যাস: যত দূর সম্ভব মতৈক্যের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে হবে। যদি সম্মেলনের কক্ষ থেকে কমিটির জন্য বিকল্প নাম উঠে আসে, তা হলেও কমিটির কলেবর ঠিক রাখতে হবে। ভোটাভুটি হলে ‘সরকারি প্যানেলে’ মোট যত সদস্য-সংখ্যা রয়েছে, সেই সংখ্যাই বেছে নিতে হবে। তার নীচে ব্যালট ছেড়ে দিলে হবে না, নানা মত রাখতে সংখ্যা বাড়ানোও যাবে না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কমিটির ক্ষেত্রে বয়ঃসীমা মেনে যে সব ভাগ করা আছে, সেই বিন্যাস মেনে চলতে হবে। সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটিতে জেলার প্রতিনিধিদের একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, এই রকম যান্ত্রিক ভাবে বয়সের ধাপ না-মেনে ‘কাজের লোক’ দেখে বিধিতে কিছু শিথিলতা হলে আপত্তি কোথায়? জবাবি বক্তৃতায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ব্যাখ্যা করেছেন, সংগঠন ও নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মকে তুলে আনার জন্য সচেতন ভাবে, আলাপ-আলোচনা করেই দলে বয়স-বিধি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে যেমন খুশি চলার সুযোগ নেই!
সিপিএমের পরবর্তী পার্টি কংগ্রেস বসবে তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে, আগামী বছর এপ্রিলে। সীতারাম ইয়েচুরির আকস্মিক প্রয়াণের পরে পার্টি কংগ্রেসে দলকে নতুন সাধারণ সম্পাদক বেছে নিতে হবে। ওই দায়িত্বের জন্য কেরলের এম এ বেবির পাশাপাশি বাংলার রাজ্য সম্পাদক সেলিমের নাম দলের শীর্ষ স্তরে বিবেচনায় রয়েছে। শুধু দলের কাজই নয়, ইয়েচুরির অনুপস্থিতিতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদককে বিজেপি-বিরোধী জোটে (এবং কংগ্রেসের সঙ্গে) সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। সেই নিরিখেই কেরলের কোনও নেতার চেয়ে বাংলার সেলিম এগিয়ে। তবে রাজ্যের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি দিল্লি যাবেন কি না, সেই প্রশ্নের মীমাংসা এখনও ধোঁয়াশায় মোড়া। সেলিমকে দল শেষ পর্যন্ত সর্বভারতীয় দায়িত্বে নিয়ে গেলে রাজ্যে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তীদের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের আভাস রায়চৌধুরীর নাম নিয়ে সিপিএমের নানা মহলে চর্চা রয়েছে। রাজ্য কমিটিতে অবশ্য এই প্রসঙ্গ ওঠেনি। প্রসঙ্গত, পলিটব্যুরোর তরফে সমন্বয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরে আজ, বৃহস্পতিবারই প্রথম বার কলকাতায় আসছেন প্রকাশ কারাট। উপলক্ষ, প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রাজ্য সিপিএমের উদ্যোগে ইয়েচুরি-স্মরণ।
আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ ও আন্দোলন যে ভাবে এগিয়েছে, সেই প্রসঙ্গও এ দিন রাজ্য কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে আরও গ্রামাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া, সংখ্যালঘু অংশের মানুষকে আরও বেশি করে শামিল করার কথা এসেছে। তবে রাজ্য সম্পাদক সেলিম বৈঠকে ফের বার্তা দিয়েছেন, দল কোনও ভাবেই ঝান্ডা নিয়ে সর্বত্র ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিবাদকে ‘দখল’ করতে যাবে না! নাগরিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ যে ভাবে ভারসাম্য রেখে চলছে, সেটাই পথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy