রক্তকরবী মঞ্চে বাংলাদেশের দলের নাটক। —নিজস্ব চিত্র
শেষ হল রামপুরহাটের প্রবাহ নাট্যমের পঞ্চম নাট্যমেলা। রামপুরহাটের রক্তকরবী মঞ্চে ২৫-২৭ ডিসেম্বর— তিনদিনের নাট্যমেলায় ছিল দুই বাংলার নাটক। তার মধ্যে প্রবাহনাট্যমের ছিল ২টি প্রযোজনা, এ পার বাংলার ৪টি ও ওপার বাংলার ১টি নাটক। প্রশ্ন জাগে, এখন নাটক শিল্পের কোন স্তরে দাঁড়িয়ে? তার সঙ্গে তুলনার নিরিখে নাট্যমেলার মঞ্চসজ্জা, আলো, শব্দ-আবহ ভাবনা? না। এই ‘টেকনিক্যাল’ বিষয় সরিয়ে দেখব কী দেখলাম। কী নিয়ে ফিরলাম।
প্রথম দিনে প্রবাহ নাট্যমের শিশুনাটক ‘তোতা কাহিনী’- অসাধারণ একটি প্রয়াস। সুস্তব, দেবাঞ্জন, সৌমাল্য, কুশলদের মঞ্চে উপস্থিতি, সায়ন-অর্চিতাদের অবলীলায় সংলাপ উচ্চারণ প্রশংসার যোগ্য। আগামী দিনের বহু প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে এদের মধ্যেই। অন্তর্মুখ এর ‘কার কপালে’ দুর্বল মানুষের নিয়তির নির্ভরতাকে প্রহসন করে বেশ মজার একটি প্রযোজনা। মঞ্চ ভাবনায় আধুনিক এবং সাবলীল চিন্তা ভালো লাগে। দ্বিতীয় দিনের প্রথম নাটক ‘ধম্ম যখন ছোঁয়ালেন হুজুর’ মিহির সেন এর রচনা। প্রিয়ব্রত প্রামাণিকের নিরদের্শনায় একটি সুন্দর প্রযোজনা। তবে আরও ভাল করা যায়।
নাট্যমেলার মালদা জেলার লোকনাট্য শিল্পীর কাহিনি নিয়ে হালিশহর ইউনিটি মালঞ্চর ‘গণেশ গম্ভীরা’ মনে দাগ কাটে। সম্পূর্ণ নাটক জুড়ে গম্ভীরা গানের ব্যবহার গ্রাম্য স্পর্শ দেয়। গনেশের চরিত্রে বাবলু চৌধুরীর নাচ এবং গান দেখে বঝা যায়, তিনি গম্ভীরা গান নিয়ে বেশ চর্চা করেছেন। একটা জায়গায় তবু খটকা থেকে গেল, ভাষার ব্যবহার। যেখানে গম্ভীরা এবং মালদা জেলার বিষয় নিয়ে নাটক, সেখানে শুরু থেকে শেষ রাঢ় বাংলার ব্যবহার কেমন জানি লাগে। এখানে ‘বাগড়ি’ ভাষার ব্যবহার হলে প্রযোজনা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠত।
বর্ধমানের কুশীলব এর ‘শেষ কথা’ দিয়ে অন্তিমদিনের উৎসবের সূচনা হয়। মঞ্চ পরিকল্পনা দৃষ্টিনন্দন। নাটকের বিষয় এবং উপস্থাপনা একটু সাবেক মনে হলেও কাহিনির এবং অভিনয়ের টান পলক ফেলতে দেয় না। শেষ নাটক সমীর দাসগুপ্তের রচনা এবং অনন্ত হীরার নির্দেশনায় শব্দ নাট্য চর্চা কেন্দ্র, ঢাকার প্রযোজনা ‘তৃতীয় একজন’। এ নাটক চিরকালীন এক কাহিনী বলে। নারীর একাকীত্ব, পুরুষের দম্ভ এবং সব শেষে আধুনিক নারীর প্রতিবাদ। অনন্ত হীরার নিজের দল, ‘অঙ্গনে মোর’ নাট্যদল। শব্দ নাট্য চর্চা কেন্দ্রের জন্য অতিথি নির্দেশক ও অভিনেতা হিসেবে তিনি এই নাটকটি করছেন। এটি এই বাংলায় তাঁদের দ্বিতীয় শো। কাহিনির মাঝে মাঝে ওথেলোর অংশ ব্যবহার বেশ রোমাঞ্চ জাগায়। অভিনেতা অনন্ত হীরা অনবদ্য। এমন নাটক ও অভিনয় দেখার জন্যই অপেক্ষায় থাকেন নাট্যমেলার দর্শকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy