কস্তুরী দাস
তিনি ছিলেন ‘অনিচ্ছুক’। কিন্তু তাঁকেই প্রার্থী হতে হল। আর তাঁকে প্রার্থী করে মহেশতলায় নিজেদের পরিবারতন্ত্র ফের কায়েম রাখলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলা তৃণমূলের সভাপতি, কলকাতার মেয়র ও সর্বোপরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেই ‘অনিচ্ছুক’ প্রার্থী হলেন শোভনের শাশুড়ি তথা মহেশতলার বিধায়ী বিধায়ক কস্তুরী দাস। বড় ছেলে দেবাশিস দাসের মৃত্যুর পর বিধানসভা নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে এক রকম মনস্থির করে নিয়েছিলেন মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাসের স্ত্রী কস্তুরীদেবী। কিন্তু মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও ফের তাঁকেই প্রার্থী করা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পঞ্চায়েত-পুরসভা থেকে বিধানসভা-লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে শোভনবাবুই শেষ কথা। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর শ্বশুর দুলাল দাসের পরিবারতন্ত্রের জালে ফেঁসে গিয়েছে মহেশতলা তৃণমূল।
গত মার্চ মাসের শুরু থেকে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার শুরু করেছেন সত্তর ছুঁইছুঁই কস্তুরী। সকালে পুজোর পর কোন ওয়ার্ডে প্রচার করবেন, সেই বিষয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা করে নিচ্ছেন। সকালে দুটি রুটি আর সবজি খেয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন কস্তুরীদেবী। ডায়াবেটিসের রোগী কস্তুরীকে দিনে দু’বার ইনসুলিন নিতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ২৪ বছর ডায়াবেটিস নিয়ে চলছি। এখন ক্লান্ত লাগে।’’
দক্ষিণ শহরতলি লাগোয়া মহেশতলার আদি বাসিন্দা দাস পরিবার। ১৯৯৪ সালে পুরসভার জন্মলগ্ন থেকে এলাকার ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা দুলাল দাস কাউন্সিলর। পরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। যে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুলালবাবু ১৯৯৪ সালে কাউন্সিলর হয়েছিলেন, সেই ওয়ার্ড ১৯৯৯ সালে মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় দুলালবাবুর স্ত্রী কস্তুরীদেবীকে প্রার্থী করা হয়। তার পর ২০০৪ থেকে তিন বারই স্বামী স্ত্রী কাউন্সিলর। ইতিমধ্যে ২০১১ সালে কস্তুরী দাসকে মহেশতলার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়। ২০০৯ সালে পুরসভা নির্বাচনের পর মহেশতলা পুরবোর্ডের দখল নেয় তৃণমূল। চেয়ারম্যান পদে বসেন দুলালবাবু। পুর চেয়ারম্যান দুলাল দাস আর বিধায়ক কস্তুরী দাস। মহেশতলার বিধানসভা এলাকায় সমস্ত নীতির নির্ধারক হয়ে যায় দাস পরিবার। সঙ্গে থাকেন শোভন।
এ বারে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কী বলছেন কস্তুরীদেবী?
কস্তুরীদেবীর কথায়, ‘‘ছেলের মৃত্যুর পর আমি আর চেয়ারম্যান সাহেব (দুলাল দাস) কোনও নির্বাচনে লড়াই করব না বলে এক রকম স্থির করে নিয়েছিলাম। কিন্তু গত পুরসভা নির্বাচনের সময় দলীয় কর্মীরা আমাদের প্রায় জোর করেই নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিলেন। এ বারও তাই হয়েছে। নির্বাচনে দাঁড়াব না বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু দলীয় কর্মীদের অনুরোধের পাশাপাশি আর একটি বড় কারণও রয়েছে। ‘দিদি’ বিধানসভার জয়ী প্রার্থীদের কোনও পরিবর্তন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার পর পিছনে ফেরা আর সম্ভব হয়নি।’’
কিন্তু কস্তুরীদেবীর কথার উল্টো সুর গাইছেন মহেশতলা তৃণমূলের একাধিক স্থানীয় নেতা। কী বলছেন ওই নেতারা?
স্থানীয় নেতাদের কথায়, মহেশতলা এলাকায় দাস পরিবারই তৃণমূলের সর্বেসর্বা। ‘দিদি’ এক সময় প্রার্থী বদল করবেন না বলেছিলেন বটে। কিন্তু বহু জেলায় প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে বলে নজির রয়েছে। দাস পরিবার যদি এলাকার অন্য কোনও তৃণমূল নেতাকে প্রার্থী করত, তা হলে কোনও ক্ষোভ হত না। কারণ দাস পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা মানে রাজনৈতিক ভবিষ্যত ‘ঠান্ডাঘরে’ চলে যাবে, স্থানীয় নেতারা তা জানেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy