ওমপ্রকাশ মিশ্র
এক পুরনো ছাত্রের ফোন মাস্টারমশাইকে।
‘এ কী অবস্থা স্যার? কলকাতার একটা কেন্দ্রে কংগ্রেস যাকে দাঁড় করাচ্ছে, সে তোলাবাজ, তার নামে তো ৩০-৩৫টা ফৌজদারি মামলা ঝুলছে! কিছু করুন।’
‘আমি আর কী করব? দেখছ তো, আমারই প্রার্থীপদ বাতিল হল।’
২৪ ঘণ্টা আগেই ঘোষণা হয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমপ্রকাশ মিশ্র নন, দীপা দাশমুন্সিই ভবানীপুরে কংগ্রেস প্রার্থী।
উপযাচক হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়তে চাওয়া ও তাতে অধীর চৌধুরী সম্মতি দেওয়ার পরে ওমপ্রকাশ মিশ্র প্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন। সেই ভবানীপুরে দাঁড়াতে না পেরে তাঁকে যে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে, সেটা মেনে নিচ্ছেন বহু কংগ্রেসকর্মী। যার দরুণ অন্য কোনও কেন্দ্রে দাঁড়াননি ওমপ্রকাশবাবু। অনুরোধ আসা সত্ত্বেও।
অধীর নিজে তো বটেই, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীও তাঁকে অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছিলেন। কলকাতা, হাওড়া, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা— এতগুলো জেলার মধ্যে কয়েকটা আসন দিয়ে তাঁকে পছন্দ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু না করে দেন শিক্ষক।
ওমপ্রকাশবাবুর যুক্তি, ‘‘আমি তো ভবানীপুরেই দাঁড়াতে চেয়েছিলাম, সব দিক বিচার করে। সেটা যখন হল না, তখন অন্য কেন্দ্রে যাওয়া মানে অন্য প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া। এটা আমার ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খায় না।’’
পঞ্চান্ন বছরের এই শিক্ষকের ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য বলছেন, অভিমান। তীব্র অভিমান। সম্ভবত সেই জন্যই এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ১১টা জেলার ৩২টা কেন্দ্রে জোটের সভা করলেও ভবানীপুর কেন্দ্রে মাত্র এক দিন মিছিলে সামিল হওয়া ছাড়া কোনও সভা করেননি। ওই কেন্দ্রে ভোটের প্রচার হবে আরও সপ্তাহ দুয়েক। কিন্তু এআইসিসি-র এই সদস্যের কথায় ইঙ্গিত, ভবানীপুরে কোনও সভায় বক্তৃতা করার সময়-সুযোগ তিনি বোধহয় পাবেন না। ‘‘আসলে আমার ডেটগুলো সব আরও প্রায় শতাধিক কেন্দ্রের জন্য বুক্ড হয়ে আছে,’’ যুক্তি দিচ্ছেন ওমপ্রকাশ।
মেঠো রাজনীতি না করা এই শিক্ষাবিদের এতটা চাহিদা কেন জোটের প্রচারসভায়?
২০০৬-এ যাদবপুরে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, আর দশ বছর পরে সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে হাতে হাত ধরে মিছিল ও সভা করা ওমপ্রকাশ বলছেন, ‘‘আমি কখনও আমার অবস্থান ও বক্তব্য পাল্টে ফেলি না। টিভি-র পর্দায় মানুষ আমাকে প্রতিবাদী মুখ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। আমাকে মানুষ জোটের মুখ হিসেবে দেখেছে।’’
সিপিএমের গৌতম দেব আর কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান যখন মুখে দু’দলের জোটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন, তখন ওমপ্রকাশ মিশ্র শুধু ওটুকুতেই থেমে থাকেননি। গত ৩০ ডিসেম্বর কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে যুক্তি ও অঙ্ক পেশ করে তিনি দাবি করেছিলেন, এই জোট হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব।
অথচ, বামেরা ক্ষমতায় আসার এক বছর পরে, ১৯৭৮-এ বালুরঘাট কলেজে ছাত্র পরিষদ তথা রাজনীতির জগতে প্রবেশ ওমপ্রকাশের। পরে দু’বছর পরপর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। কংগ্রেসের দলীয় সদস্যপদ ১৯৮৬ থেকে। ঘোষিত কংগ্রেসি বলে বাম আমলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে এসএফআই-এর কটূক্তির মুখেও পড়তে হয়েছে কয়েক বার। কিন্তু সামনে থেকে লড়েছেন বরাবর। তেমনই স্পষ্ট যুক্তি তাঁর, ‘‘এখন কংগ্রেসের কাছে শুধু নয়, গোটা রাজ্যের কাছে তৃণমূল বেশি বিপদ।’’
কংগ্রেসকর্মীদের একাংশ তাই বলছেন, এমন এক জনকে কি এই জোটের বাজারে নিজের মনমতো একটা আসনে প্রার্থী করা যেত না?
‘‘অধীর চৌধুরী আমার নাম ঘোষণা করার পরে ভবানীপুরে তিনটে মিটিং করি সিপিএম আর কংগ্রেসের কর্মীদের সঙ্গে। ওখানে যখন হল না, তার পরে উৎসাহ ছিল না,’’ বলছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ওমপ্রকাশ মিশ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy