বামফ্রন্টের কর্মীদের সঙ্গে হাত হাত মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর ডাক দিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। কুলটির নিয়ামতপুরে এ দিন প্রথম জনসভাটি করেছেন রাহুল। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীকে পাশে নিয়ে রাহুলের এই সভার পর জোটপন্থীরা আরও উচ্ছ্বসিত। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সব বাম প্রার্থীদের নাম বলে তাঁদের জয়ী করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে নিজের দলকে এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল।
দুর্নীতি থেকে উড়ালপুল বিপর্যয়, প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা থেকে গণতন্ত্র ধ্বংস করার অভিযোগ— একাধিক ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দিন তীব্র আক্রমণ করেছেন রাহুল। গাঁধী পরিবারের সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের মিথ ভেঙে দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ মোদীর সঙ্গে এ দিন একই আসনে বসিয়ে দিয়েছেন রাহুল। বলেছেন মোদীর সঙ্গে মমতার কোনও ফারাক নেই। রাহুল বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশে গণতন্ত্রকে শেষ করার চেষ্টা করছেন। অরুণাচলে আমাদের সরকার ভেঙেছেন। তার পরে উত্তরাখণ্ডেও একই কাজ করেছেন। কারণ তিনি চান, সারা দেশে একটাই নেতা থাকবেন, তিনি নিজে।’’ এর পরই রাহুল বলেন, ‘‘দেশে মোদী যা করছেন, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই করছেন। তিনিও চান একজনই নেতা থাকবেন। আর কেউ থাকবেন না। সংসদে তৃণমূলের এমপিদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁরা বলেন, আমাদের দলে একজনেরই কথা চলে। আমাদের কোনও কথা শোনা হয় না।’’ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসার পর যে ভাবে কংগ্রেস ভাঙিয়েছে তৃণমূল, তারও তীব্র সমালোচনা করেন রাহুল।
উড়ালপুল বিপর্যয় প্রসঙ্গেও মমতাকে কুলটির সভায় বিঁধেছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় পুল ভেঙে পড়ল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, এটা নিয়ে রাজনীতি হওয়া উচিত নয়। ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ওই পুল তো একটা প্রতীক। মানুষ কাজ করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় এনেছিলেন। ওই পুল দেখিয়ে দিল পাঁচ বছরে ধরে সেখানে কোনও কাজ হয়নি।’’ উড়ালপুল তৈরির কাজে তৃণমূল নেতার যোগ থাকার প্রসঙ্গেও খোঁচা দেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।
আরও পড়ুন:
কলকাতায় নেমেই পোস্তায় রাহুল, মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস
সারদা কাণ্ডকে ভারতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি বলে এ দিন আখ্যা দিয়েছেন রাহুল। নারদ নিউজের স্টিং অপারেশন প্রসঙ্গ তুলে মমতা-মোদী আঁতাঁতের অভিযোগও এ দিন ঘুরিয়ে তুলে দিয়েছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসের সরকার ভেঙে দিয়ে মোদী বললেন, ওখানে স্টিং অপারেশন হয়েছিল, দুর্নীতি ছিল, তাই সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখানে যখন নারদ নিউজের স্টিং ভিডিওতে দেখা গেল, তৃণমূলের ১০ জন নেতা টাকা নিচ্ছেন, তখন নরেন্দ্র মোদী কিছুই বললেন না।
বাম-কংগ্রেস জোট প্রসঙ্গে কুলটির সভায় বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন রাহুল গাঁধী। রাহুল পৌঁছনোর অনেক আগেই সভামঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন, সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি দীর্ঘ ভাষণও দেন সভায়। সভাস্থলে কংগ্রেসের পতাকার সঙ্গে বিশাল সংখ্যায় দেখা গিয়েছে, সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের পতাকাও। রাহুল ভাষণের শুরুতেই এলাকার সব জোট প্রার্থীদের জেতানোর আহ্বান জানান। কংগ্রেস প্রার্থীদের নাম বলার পর বামফ্রন্ট্রের প্রার্থীদেরও নাম বলেন রাহুল। কংগ্রেস কর্মীদের বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের কর্মীদের সঙ্গে এগিয়ে যান, হাতে হাত ধরে এগিয়ে যান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারান, বাংলায় জোটের সরকার গড়ুন।’’
দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন রাহুল। বিজয় মাল্য এবং ললিত মোদী কাণ্ডে অরুণ জেটলি আর নরেন্দ্র মোদীর সরাসরি যোগ থাকার অভিযোগ তোলেন। কালো টাকা সাদা করার কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পকে ফের ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ স্কিম বলে এ দিন কটাক্ষ করেন রাহুল। কর্মসংস্থান নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দাবি করে থাকেন সেই প্রসঙ্গে জনসভার উদ্দেশেই প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই এলাকাকে আগে শিল্পাঞ্চল বলা হত। এখানে এমন একজনও কি আছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে কাজ দিয়েছেন?’’ বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট সরকার গঠিত হলে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ হবে, বলেছেন রাহুল গাঁধী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy