Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
আরও চড়ছে নারদ-পারদ

আমার প্রিয় কাকলি

দোলাচল শেষ। ‘দুষ্টুদের’ আগলে রাখারই সিদ্ধান্ত নিলেন দিদি। নারদকে মেনে নিয়ে কাকলি ঘোষদস্তিদারকে যেমন কাছে টেনে নিলেন, তেমনই কামারহাটির মাটিতে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, গারদে থাকলেও মদন মিত্র কিন্তু ‘ভদ্র’। ওঁর লড়াইটা ‘আমিই লড়ব।’

আমডাঙার সভায় নেত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত কাকলি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

আমডাঙার সভায় নেত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত কাকলি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

দোলাচল শেষ। ‘দুষ্টুদের’ আগলে রাখারই সিদ্ধান্ত নিলেন দিদি।

নারদকে মেনে নিয়ে কাকলি ঘোষদস্তিদারকে যেমন কাছে টেনে নিলেন, তেমনই কামারহাটির মাটিতে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, গারদে থাকলেও মদন মিত্র কিন্তু ‘ভদ্র’। ওঁর লড়াইটা ‘আমিই লড়ব।’

বারাসতের সাংসদ কাকলি এবং কামারহাটির বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র উভয়েই নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত। বিরোধীদের মতে, দিদির এ দিনের মন্তব্যের পর এত দিনে ধন্দের অবসান হল। নারদের পাশে রইলেন দিদি আর দুর্নীতির নাগপাশে রইল তৃণমূল।

অথচ শুরুটা ছিল একেবারে উল্টো। প্রথম দিন থেকে নারদকে ঝেড়ে ফেলারই চেষ্টা করেছিলেন দিদি। তাই গোড়ায় বলেছিলেন, নারদ ফুটেজটা ভেজাল। কিন্তু পরে যখন দেখলেন সেই দাবিটাই ভেজাল মনে করছেন মানুষ, তখন থেকেই বদলে বদলে যাওয়া শুরু হল। কখনও বাঁকুড়ার দলীয় প্রার্থীকে দেখিয়ে বললেন, ও কিন্তু চোর নয়। আবার বাগদার প্রার্থীকে উদ্দেশ করে বললেন, উনি সৎ মানুষ। তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে গত রবিবার এ-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন, আগে জানলে নারদের অভিযুক্তদের টিকিটই দিতাম না। কিন্তু অন্তরে ইচ্ছা থাকলেও সেই উইকেটেও টিকে থাকতে পারলেন না দিদি। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীবারের সন্ধ্যায় উলুধ্বনি দিয়ে নারদকে মেনে নিলেন।

প্রসঙ্গত বুধবার বারাসতের সভায় নারদ-অভিযুক্ত সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের ঠাঁই হয়নি। তা নিয়ে ঘরে বাইরে টীকাটীপ্পনি হতেই বিষ্যুৎবার ঘুম থেকে উঠে তাঁকে ফোন করেন দিদি। আমডাঙার সভায় ডেকে নেন কাকলিকে। ‘‘আমার প্রিয় কাকলি...’’ বলে শুরু করেন সভা।

আমডাঙার পর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। সেখানে আবার নারদ প্রসঙ্গে ভাইদের পক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে দিদি বললেন, ‘‘সব সংসারেই কিছু না কিছু ঘটে থাকে। মায়ের পাঁচটা ছেলে থাকলে এক আধটা দুষ্টু হয়। কিন্তু ওঁদের চোর বলছেন কারা? ওঁরা চোরেদের ঠাকুরদা!’’ অর্থাৎ দুষ্টুমি যে হয়েছে, সেটা মেনেই নিলেন। এর পর কামারহাটির সভায় পৌঁছন মমতা। সেখানে আরও স্পষ্ট ভাবে নারদের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন তিনি। বলেন, ‘‘নারদ কাণ্ডে দু’লক্ষ টাকা করে নেওয়া হলে ১৪ জন মিলে ২৮ লক্ষ টাকা বেরোবে। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত হবে।’’ সেই সঙ্গে মদন মিত্রের জন্য সহানুভূতি কুড়োনোর জন্য বলেন, ‘‘মদন জেলে আছে, তা দেখে ওঁদের আহা কী মজা। কিন্তু ওঁর স্ত্রী, ছেলে, বউমা তো রয়েছে। মদন বাইরে থাকলে যে ভোট পেত তার থেকে বেশি পাবে এ বার। ছাড়া বাঘের থেকে আহত বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর।’’

কিন্তু এ সবই তো ভোটের বাজারে ভোকাল টনিক! আসল প্রশ্ন হল, কেন শেষমেশ নারদকে মেনে নিলেন দিদি? কেন দূরত্ব রাখতে পারলেন না?

তৃণমূল সূত্রের মতে, সেই চেষ্টা দিদি করেছিলেন। কারণ দিদি বুঝতে পারছিলেন, নারদের ছায়া ভবানীপুরেও পড়ছে। তাই সটান বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আগে জানলে নিশ্চয়ই ভাবতাম।’’ কিন্তু তাতে দিদির দলেই বিদ্রোহের পরিস্থিতি হয়েছে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়-শুভেন্দু অধিকারীরা সরাসরি দিদির কাছে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া মুকুল রায় আবার মমতাকে বুঝিয়েছেন, টাকা নিলেও দলের জন্যই নেওয়া হয়েছে। কারও কারও মতে, তার মাধ্যমে দিদিকে এই ঘটনায় জড়িয়ে ফেলার প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিও রয়েছে। তাই নারদকে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর।

কিন্তু ভোটবাক্সে এর কুপ্রভাব পড়বে না তো? মমতার কথাতেই ধরা পড়েছে, আশঙ্কাটা তাঁরও রয়েছে। কামারহাটিতে এ দিন প্রথমে তিনি বলেন, ‘‘মদন না থাকলে কী হবে, কামারহাটিতে আমিই আছি জোড়াফুল নিয়ে।’’ কিন্তু যাওয়ার আগে বলে যান, ‘‘মদনকো খোদা রোশন করেগা।’’ তার মানে কী? মদনের ভগবানই ভরসা?

অন্য বিষয়গুলি:

Kakoli Ghosh Dastidar Mamata Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE