বামফ্রন্টের বাইরে গিয়ে একা লড়তে গেলে একটি আসনও জেতার নিশ্চয়তা নেই। উপরন্তু বাম ঐক্য এবং বৃহত্তর জোট ভাঙার দায় চাপবে। আবার মুখ বন্ধ করে একের পর আসনে ‘আত্মত্যাগ’ স্বীকার করাও মুশকিল। এই উভয় সঙ্কটে পড়ে তাই সব পক্ষকেই ‘নমনীয়তা’র বার্তা দিল বাম শরিক আরএসপি।
সেই বার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে দিল্লি থেকে আরও ৮টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল কংগ্রেস। যার মধ্যে চৌরঙ্গিতে সোমেন মিত্র, কলকাতা বন্দরে রাকেশ সিংহ, উত্তর হাওড়ায় সন্তোষ পাঠক, মধ্যমগ্রামে তাপস মজুমদার বা শ্রীরামপুরে শুভঙ্কর সরকারের নাম আছে। কিন্তু তার পাশাপাশিই আরএসপি-র জেতা আসন মালতীপুর ও ভরতপুরে প্রার্থী রেখে দিল কংগ্রেস। ভরতপুরে প্রার্থী কমলেশ চট্টোপাধ্যায়। মালতীপুরে আগে ঘোষিত হেমন্ত শর্মার বদলে আল বিরুনি জুলকারনাইনের নাম দেওয়া হয়েছে। এই দফায় মোট পাঁচ জন প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের তালিকায় বামেদের জেতা আসন এখনও পর্যন্ত থেকে যাওয়ায় ‘নমনীয়তা’ নিয়ে টানাপড়েন থেকেই যাচ্ছে!
কমরেড মানস ভুঁইয়া! সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক এ বার জোটপ্রার্থী। মঙ্গলবার সবংয়ের দশগ্রামে সিপিএমের ছাতার তলায়
পথসভার ফাঁকে তাই বন্দেমাতরমের সঙ্গেই তাঁর গলায় শোনা গেল, ‘বামপন্থীদের লাল সেলাম। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
বামফ্রন্টের শরিক হিসাবে এত দিন ২৩টি আসনে লড়ত আরএসপি। এ বার কংগ্রেসের স্বার্থে চারটি আসন তারা ছেড়ে দিয়েছে। বাকি ১৯টির মধ্যেও আবার ৯টিতে কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে! এই চাপের মুখেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে চেয়ে আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী এ দিন বলেছেন, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি-কে হঠাও, এটাই এখন লক্ষ্য। আমরা চেয়েছিলাম, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট ভাগাভাগি আটকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্মানজনক শর্তে বোঝাপড়া হোক। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমাদের সংগঠন এবং অস্তিত্ব রক্ষা করাই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে!’’ এই সমস্যা না বুঝেই কেউ কেউ আরএসপি-র নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে ক্ষিতিবাবুর অভিযোগ।
যে সব আসনে বাম ও কংগ্রেস দু’পক্ষেরই প্রার্থী থাকছে, সেখানে ‘সবল প্রার্থী’র সমর্থনে বাকিদের বসে যেতে হবে বলে দু’দিন আগে বহরমপুরে কর্মিসভায় বলে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাতেই আসলে অশনি সঙ্কেত দেখছেন আরএসপি নেতৃত্ব! কংগ্রেসের প্রার্থীকে শক্তিশালী দেখলে আরএসপি-কে ছেড়ে কংগ্রেসের পাশে সিপিএমের নিচু তলা যাতে না দাঁড়ায়, সেই আর্জিই জানাতে চেয়েছেন ক্ষিতিবাবুরা। ইতিমধ্যেই এমনটা ঘটার ইঙ্গিত মিলছে আলিপুরদুয়ারে। তাই ক্ষিতিবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘বামফ্রন্টের মধ্যে সিপিএম অন্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’’ তিনি বলেছেন, তাঁরা যথেষ্ট নমনীয়তা দেখিয়েছেন। আর নমনীয় হওয়া কঠিন। আবার একই সঙ্গে বলে রেখেছেন, ‘‘বামফ্রন্টে আরও আলোচনা হতেই পারে। আলোচনায় নমনীয়তা তো রাখতেই হবে।’’
পিডিএসের জন্য বামেদের ছেড়ে দেওয়া কাকদ্বীপে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ায় তারাও এ দিন ২৪টি আসনে লড়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। পরে সংখ্যাটা বাড়তেও পারে বলে পিডিএস নেতৃত্বের বক্তব্য। মগরাহাট পশ্চিমে পিডিএস প্রার্থী হচ্ছেন ওই কেন্দ্রেরই প্রাক্তন বিধায়ক অনুরাধা পূততুণ্ড। পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ডের আক্ষেপ, ‘‘মানুষ যখন যৌথ মঞ্চ থেকে বিকল্প সরকারের কর্মসূচি জানতে চাইছেন, তখন আসন ভাগাভাগি নিয়েই ব্যস্ত থাকছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy