প্রচারে সিপিএম প্রার্থী বৈদ্যনাথ বসু। ডানদিকে, আব্দুল গনি।-নিজস্ব চিত্র।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
হাওড়ায় পাঁচলা, উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রে এই নিয়ে কম হ্যাপা পোহায়নি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দলনেত্রীর সতর্কবাণী যে নেহাতই বুলি, প্রমাণ দিচ্ছে জগৎবল্লভপুর।
২০১১য় এখানে জেতেন তৃণমূলের আবুল কাশেম মোল্লা। কিন্তু এ বার দল টিকিট দিয়েছে এলাকায় নতুন মুখ আব্দুল গনিকে। কাশেম গিয়েছেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে। নিজের কেন্দ্র বদলের জন্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী না করলেও এবং নিজে তাতে জড়িত না থাকার দাবি করলেও জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, এটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই পরিণতি। জগৎবল্লভপুরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। তৃণমূল শাসিত জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই বদল হয় সভাপতির। উন্নয়নমূলক কাজও বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন।
প্রার্থী বদলে এ সব সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও তা যে খুব একটা কাজে আসেনি, তা দেখা গেল নতুন প্রার্থীকে নিয়ে দুই গোষ্ঠীর টানাটানিতে। প্রার্থীর হয়ে প্রচারের কাজ কারা করবে এই নিয়েই শুরু হয়েছে লড়াই। সেই লড়াইতে তারা এতটাই ব্যস্ত যে নির্বাচনের কাজই (শুধুমাত্র নির্বাচন কমিটি গঠন ছাড়া) সে ভাবে শুরু হয়নি এখানে। শেষ হয়নি দেওয়াল লিখনের কাজ। বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী পরিচিতির কাজও অসম্পূর্ণ।
উল্টোদিকে, প্রার্থীপদ ঘোষণা হওয়ার দিন থেকেই প্রচারে নেমেছেন সিপিএম প্রার্থী বৈদ্যনাথ বসু। নিজেই তদারকি করছেন দেওয়াল লিখনের। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যে অন্তত ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ঘোরা হয়ে গিয়েছে তাঁর।
নির্বাচিত বিধায়ক সরানোর পরেও এমন অবস্থা কেন?
তৃণমূলের একাংশের মতে এর মূলে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। জগৎবল্লভপুর বিধানসভাকেন্দ্র পড়ে তাঁর সংসদ এলাকায়। তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে বিরোধী গোষ্ঠীর গোলমালেই এই অবস্থা। জগৎবল্লভপুর বিধানসভাকেন্দ্রের মধ্যে ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সাতটি পঞ্চায়েত পড়ে। সাংসদের সঙ্গে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর গোলমাল মূলত ওই সাত পঞ্চায়েত নিয়ে। সেটা এতটাই গুরুতর যে দিন কয়েক আগে প্রকাশ্যে রাস্তাতেই দু’পক্ষ বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে। ওইদিন দলীয় সম্মেলন ছিল বড়গাছিয়ায়। তাতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল প্রার্থী ও সাংসদের। ডোমজুড় থানার সামনে তৃণমূলের একদল কর্মী-সমর্থক ভিড় করেছিলেন প্রার্থীকে মোটরবাইক মিছিল করে বড়গাছিয়া পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য। সাংসদের বিরোধী গোষ্ঠীর মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রার্থী আসার আগেই সেখানে হাজির হয়ে সাংসদ ওই কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের বলেন, ‘‘প্রার্থীকে হাইজ্যাক করলেই কী ভোটের কাজ করা হয়ে গেল। এখানে দাঁড়িয়ে কী করছেন? সম্মেলনে চলুন।’’ পরে সম্মেলনেও সাংসদের অনুগামীদের সঙ্গে তাদের বিরোধীদের গোলমাল বাধে।
নিজের কেন্দ্রে দলের এমন অবস্থা নিয়ে কী বলছেন প্রার্থী?
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এই ‘ভুলভুলাইয়ার’ মাঝে পড়েও কার্যত আপ্লুত প্রার্থী আব্দুল গণি। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য কেন্দ্রে নতুন প্রার্থীকে নিয়ে নানা সমস্যা শুনেছি। এখানে আমাকে সকলেই চাইছেন। সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারাটাই আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।’’
চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সিপিএমও। জগৎবল্লভপুরে গত লোকসভায় তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৮৭ হাজার ৭৪১টি। সিপিএমের ছিল ৬১ হাজার ৭৮৮টি। বর্তমানের জোটসঙ্গী কংগ্রেস ভোট ৮ হাজার ১৭৮টি ভোট। দুই ভোট এক হলেও তা তৃণমূলের থেকে বেশি নয়। তবে এ বার তৃণমূলের সঙ্গে ব্যবধান কমবে বলেই আশাবাদী তাঁরা। ব্যবধান আরও কমিয়ে তা জয়ে বদলানো যায় কি না তারই চেষ্টায় মরীয়া বৈদ্যনাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy