Advertisement
E-Paper

বাম-কংগ্রেসের জঙ্গিপুরে লড়াই দুই ফুলের, ‘বিশ্বাস’ হারিয়ে নিস্তরঙ্গ সাগরদিঘি, বিড়ির ঝাঁজ কি দেখা যাবে?

মুর্শিদাবাদ জেলার এই আসন চিরকাল কংগ্রেস এবং সিপিএমের হাতেই থেকেছে। কিন্তু সর্বশেষ ফল বলছে, প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এ বার তৃণমূল এবং বিজেপি। জোট বেঁধে সিপিএম, কংগ্রেস কি অঙ্ক বদলাতে পারবে?

What is the political situation of Jangipur constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৪ ২০:১২
Share
Save

মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর কখনও কংগ্রেস, কখনও সিপিএমের থেকেছে দীর্ঘ সময়। এই আসন থেকে টানা চার বার সাংসদ হয়েছেন সিপিএম নেতা জয়নাল আবেদিন। পরে এখান থেকেই পর পর দু’বার সাংসদ হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি রাষ্ট্রপতি হলে এই আসন থেকে প্রথমে উপনির্বাচন ও পরে ২০১৪ সালের ভোটে জয়ী হন প্রণবপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ২০১৯ সালে বিপুল ভোটে তাঁকে হারিয়েই বড় জয় পেয়েছিল তৃণমূল। সেই বছরেই কংগ্রেস তৃতীয় এবং সিপিএমকে চতুর্থ স্থানে পাঠিয়ে জঙ্গিপুরে দ্বিতীয় হয়ে যায় বিজেপি।

পাঁচ বছর আগের সেই বদলের পরে এ বারেও লড়াই নিয়ে বিশেষ জল্পনা থাকার কথা নয়। দুই ফুলের মধ্যেই যে এক ও দুই হওয়ার লড়াই জারি থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আচমকা নতুন প্রশ্ন তুলে দেয় সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেসের জয়। সাধারণ ভাবে উপনির্বাচনে শাসকদলেরই জয় হয়। জেতা আসন হলে তো কথাই নেই। কিন্তু সেই চলতি ধারণাকে হারিয়ে দিয়েছিল সাগরদিঘি। ২০২১ সালে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জেতা আসন তৃণমূল হেরে যায় প্রায় ২৩ হাজার ভোটে।

কংগ্রেসের হয়ে জিতেছিলেন বাইরন বিশ্বাস। হইচই পড়ে গিয়েছিল তাঁর জয়ের কারণ নিয়ে। অনেকে মনে করেছিলেন, রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলকে ছেড়ে বাম-কংগ্রেস জোটকে ‘কাছের’ করে নিচ্ছে। কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলেনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের সমর্থন বদলের কোনও প্রমাণ মেলেনি। একদা মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সংগঠন দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং বর্তমানে বিজেপির অন্যতম প্রধান ‘মুখ’ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বাইরনের পুরনো সখ্য নিয়েও এক সময়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাইরন যোগ দেন তৃণমূলে। সেই আচরণকে অনেকেই ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সাগরদিঘির জলে কোনও তরঙ্গ নেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে আলোচনার বাইরে সাগরদিঘি। নিস্তরঙ্গ।

মাঝে ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে ইদ্রিস আলির জয় ছাড়া সেই ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত সিপিএমের হাতেই ছিল জঙ্গিপুর। সেই জঙ্গিপুরে প্রণব প্রার্থী হন ২০০৪ সালে। তার আগে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবেই কেন্দ্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন প্রণব। তাঁর ইচ্ছা ছিল, লোকসভা ভোটে জিতে আসবেন। সে বার নিজের আসন বহরমপুরের সঙ্গে জঙ্গিপুরে প্রণবকে জেতাতে মরিয়া লড়াই দিয়েছিলেন অধীর চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অধুনা ‘বন্ধু’ দল সিপিএমকে হারানোই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। প্রথম বার কম ভোটে হলেও ২০০৯ সালে লক্ষাধিক ভোটে জয় পান প্রণব। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বার সেখানে প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল। অনেকে বলেন, পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ প্রণবই সেটা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে তার কোনও সমর্থন মেলেনি।

What is the political situation of Jangipur constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এর পরের সাধারণ নির্বাচনে প্রণবপুত্র অভিজিৎ জিতেছিলেন লোকসভা ভোটের নিরিখে খুব কম ব্যবধানে। দ্বিতীয় সিপিএম, তৃতীয় তৃণমূল আর চতুর্থ বিজেপি। কিন্তু ২০১৯ সালে ছবি উল্টে যায়। উত্তর ও মধ্যবঙ্গে মোদী-হাওয়ার ঢেউ বিজেপিকে নিয়ে যায় দ্বিতীয় স্থানে। তবে পদ্মের মাফুজা খাতুনের থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোট বেশি পেয়ে জয় পান তৃণমূলের খলিলুর রহমান। অভিজিৎ হন তৃতীয়। চতুর্থ স্থানে ছিলেন সিপিএমের জ়ুলফিকার আলি। তবে বাম-কংগ্রেসের যৌথ ভোট বিজেপির থেকে খানিকটা বেশিই ছিল।

এ বার আবার খলিলুরকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। কংগ্রেসের প্রার্থী মোর্তজা হোসেন কংগ্রেসের প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের ভাই সিরাজুল ইসলামের নাতি। প্রসঙ্গত, সাত্তার লালগোলা থেকে সাত বার বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধেই মোর্তাজাকে লড়তে হচ্ছে। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই বামেদের সঙ্গে তাঁর আসনে সমঝোতা না হওয়ায় দু’বার জেতা জেলা পরিষদের আসন হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।

তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর আবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’। জঙ্গিপুর জেলার সংগঠনের মাথায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির খলিলুরকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বসিয়েছিলেন মমতা। বাবা নুর মহম্মদ অতীতে কংগ্রেসের টিকিটে লড়লেও বিড়ি ব্যবসায়ী হিসেবেই প্রতিষ্ঠা খলিলুরের। সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসের সঙ্গে মাঝে গোলমাল হলেও তৃণমূলের মধ্যে খলিলুরকে নিয়ে সে ভাবে কোনও বিতর্ক নেই।

বিজেপি গত লোকসভা ভোটেও মুসলিম মুখের উপরে ভরসা রেখেছিল জঙ্গিপুরে। মুর্শিদাবাদ আসনে যেমন টিকিট পাননি হুমায়ুন কবীর তেমনই এই আসনে মাফুজা। তার বদলে জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ বিজেপির প্রার্থী। লক্ষ্য, মুসলিম ভোট সে ভাবে পাওয়া যাবে না ধরে নিয়ে হিন্দু ভোট এককাট্টা করা। কারণ, বিজেপির দাবি, এ বার জঙ্গিপুরের মুসলিম ভোট অনেক ভাগে বিভক্ত হতে পারে।

এ বার জঙ্গিপুরের ভোটে আরও দুই চরিত্র রয়েছেন। নির্দল হয়ে ভোটে লড়ছেন সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরনের মামাতো ভাই আসাদুল বিশ্বাস। আসাদুলের দাবি, তাঁর পিসেমশাই তথা বাইরনের পিতা বাবর আলি বিশ্বাসই তাঁকে প্রার্থী হতে বলেছেন। দ্বিতীয় চরিত্রটি হলেন স্থানীয়দের কাছে ‘শিল্পপতি’ হিসাবে পরিচিত শাহজাহান বিশ্বাস। তিনি আবার সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানির দাদা। নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ টিকিট দিয়েছে তাঁকে। তৃণমূলের অন্দরের আলোচনায় শোনা যায়, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরে অধীরের বিরুদ্ধে এই শাহজাহানকেই প্রার্থী করতে মমতাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৎকালীন ‘পর্যবেক্ষক’ শুভেন্দু। কিন্তু তিন আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই তৃণমূলের প্রতীকে ভোটে দাঁড়ানো হয়নি শাহজহানের। এ বার তাই নওশাদের দলের ঝান্ডা নিয়ে জঙ্গিপুরের যুদ্ধে অবতীর্ণ তিনি।

তবে জঙ্গিপুরে ভোট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন বিড়ি শ্রমিকেরা। তাঁদের মজুরি নিয়ে আন্দোলন অনেক দিনের। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে হবে। খলিলুর এবং বিড়ি শিল্পের বড় কারবারি তথা জঙ্গিপুর আসনের তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনকে এ নিয়ে উদ্যোগী হতে বলেছিলেন অভিষেক। বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। তবে কাজের দিন কমে গিয়েছে বলেই অভিযোগ। ফলে লোকসভা নির্বাচনের হাওয়ায় বিড়ির মজুরি নিয়ে ধোঁয়া দিচ্ছে বিরোধীরা। সে হাওয়ার ঝাঁজ কেমন দাঁড়াবে, তা-ও দেখবে জঙ্গিপুর।

Lok Sabha Election 2024 Jangipur Politics Dillibari

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।