ষষ্ঠ দফার ভোটের আগে পথে নামছেন সাধু-সন্তেরা। — গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সপ্তম দফা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রোড-শো করার কথা উত্তর কলকাতায়। তার আগে খালি পায়ে সেই পথে নেমে পড়ছেন সাধু-সন্তেরা। উপলক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কয়েক জন সাধুর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্যের প্রতিবাদ। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) সূত্রে খবর, ষষ্ঠ দফার ভোটের ঠিক আগের দিন, শুক্রবার, সাধু-সন্তেরা মিছিল করবেন উত্তর কলকাতার গিরিশ অ্যাভিনিউ থেকে বিবেকানন্দের জন্মভিটে পর্যন্ত। যে যাত্রার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সন্ত স্বাভিমান যাত্রা’।
এই সন্ন্যাসী সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের শুরু গত শনিবার, আরামবাগে। সেখানে মমতা রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কয়েক জন সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তৃতা করেছিলেন। বিশেষত, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কার্তিক মহারাজের নাম করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ‘ডাইরেক্ট পলিটিক্স’ করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’ তার পাল্টা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন কার্তিক। দাবি জানিয়েছেন মমতার ক্ষমা চাওয়ার। স্বভাবতই, নির্বাচনী আবহে হাতেগরম সেই ‘ইস্যু’ হাতছাড়া করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী তথা বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর সাধু-সন্ত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মমতার দিকে একের পর এক নিশানা করেন মোদী। এমনকি, ভোট প্রচারের মঞ্চ থেকে মোদী এমন অভিযোগও করেন যে, জলপাইগুড়িতে (আদতে শিলিগুড়ির সেবক রোড) রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে হামলা হয়েছে তৃণমূলের মদতে। ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মোদী বলেছেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মিশন, ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ বাংলার আধ্যাত্মিক পরিচয়। এখন তো হিন্দু সন্তদের হুমকি দিচ্ছেন খোদ এখানকার মুখ্যমন্ত্রী! এর ফলে তৃণমূলের গুন্ডাদের সাহস বেড়ে গিয়েছে। কাল রাতে জলপাইগুড়িতে রামকৃষ্ণ মিশনে আশ্রমে হামলা হয়েছে। মিশনের কর্মীদের মারধর করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বাংলায় রামকৃষ্ণ মিশনকে হুমকি দেওয়া হবে, ভাবতে পারে না দেশবাসী!’’ মঞ্চ থেকে তার জবাব দেন তৃণমূল নেত্রীও। স্বভাবতই, সন্ত-বিতর্ক ভোটের শেষ কয়েকটি দফায় বড় ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করছে পদ্মশিবির। এই আবহেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পথে নামার সিদ্ধান্ত নিল।
ভিএইচপি সূত্রে খবর, সন্ত-বিতর্কের প্রেক্ষিতে বাংলায় কাজ করছে এমন বেশির ভাগ ধর্মীয় সংগঠনকে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়েছিল। তাতে এক দিকে যেমন হাজির ছিল ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, তেমনই প্রতিনিধিত্ব ছিল রামকৃষ্ণ মিশন-সহ অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের সাধু-সন্তদের। সোমবার রাতের জরুরি বৈঠকে স্থির হয়েছে, শুক্রবার সন্ত স্বাভিমান যাত্রা নিয়ে পথে নামবেন তাঁরা। সে দিন বিকেল ৩টেয় বাগবাজারের নিবেদিতা পার্কে সমাবেশ হবে। মায়ের বাড়ি থেকে গিরিশ অ্যাভিনিউ, বাগবাজার স্ট্রিট, শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় হয়ে বিধান সরণী দিয়ে বিবেকানন্দ রোডে স্বামীজির জন্মভিটেয় শেষ হবে সন্তদের পদযাত্রা। জানা গিয়েছে, গোটা পথটিই খালি পায়ে হাঁটবেন মিছিলে অংশগ্রহণকারী সাধু-সন্ন্যাসীরা। শুধু ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরাই নন, সংগঠনের পরিভাষায়, দর্শন, আরতি এবং সংবর্ধনা জানানোর আবেদন জানিয়ে ভিএইচপি এই মিছিলে সাধারণ মানুষকেও অংশ নেওয়ার ডাক দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই, ভোটেরও নয়। তবে, নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার জন্য যে ভাবে হিন্দু সাধু-সন্তদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাতে বাংলার হিন্দু সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিষদ উদ্বিগ্ন। সমস্ত প্রতিষ্ঠান এবং মঠের সন্ন্যাসীরাও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য এবং তার পরেই জলপাইগুড়িতে মিশনের উপর হামলার নিন্দা করেছেন। এর পরেই এই যাত্রার সিদ্ধান্ত হয়।’’
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই বলে দাবি করলেও তৃণমূল তা মানতে নারাজ। এ সব করে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে আপাত ভাবে ‘দুর্বল’ হয়ে পড়া বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা দেখছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, সপ্তম দফা ভোটের আগে, ২৮ মে কলকাতায় রোড-শো করার কথা রয়েছে মোদীর। তার আগে, ষষ্ঠ দফার ভোটের ঠিক আগের দিন, শুক্রবারই খালি পায়ে পথে নেমে পড়ছেন সাধু- সন্ন্যাসীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy