দেব এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে রবিবার দেবের সমর্থনে প্রচার করতে ঘাটালে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে এক সঙ্গে রোড-শো করতেও দেখা যাবে তৃণমূলের দুই যুব সাংসদকে। আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এখন জনসভা নিয়ে ব্যস্ত অভিষেক। একই সঙ্গে দলের সাংগঠনিক সভা নিয়েও তাঁর ব্যস্ততা তুঙ্গে। এর মধ্যেই সময় বার করে রবিবার দেবের সমর্থনে প্রচারে নামছেন অভিষেক।
তবে তৃণমূলের অনেকের দাবি, অভিষেক যে দেবের সমর্থনে প্রচার করতে ঘাটালে যাবেন, তা এক প্রকার ঠিকই ছিল। তৃণমূলের অন্দরের খবর, লোকসভায় যে কয়েকটি কেন্দ্র তৃণমূল পাখির চোখ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ঘাটাল। তার কারণ হিসাবে ঘাটাল কেন্দ্রে বিজেপির প্রভাব বৃদ্ধিকেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে এক লক্ষের কিছু বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন দেব। দেব পেয়েছিলেন ৭,১৭,৯৫৯টি ভোট। ভারতী পেয়েছিলেন ৬,০৯,৯৮৬টি ভোট। এর পর ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের শঙ্কর দোলুইকে হারিয়ে ঘাটালের বিধায়ক হয়েছেন বিজেপির শীতল কপাট। ডেবরা এবং পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপির ভোটের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। পাশাপাশি, ঘাটাল লোকসভার কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃ়ণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল বহু বার প্রকাশ্যে এসেছে। আর সেই কারণেই ঘাটাল নিয়ে এ বার একটু বেশি সক্রিয় তৃণমূল।
তৃণমূল যে ঘাটাল নিয়ে বেশি সক্রিয়, তার প্রভাব দেখা গিয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে, দেব লোকসভা ভোটে দলের হয়ে না লড়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পর। তার আগে ঘাটালের তিনটি প্রশাসনিক পদ— ঘাটাল কলেজ, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি এবং বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফাও দেন সাংসদ দেব। তার পরেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে দেব লিখেছিলেন, ‘‘সংসদে আমার শেষ দিন।” এতেই অনেকের মনে হয়েছিল, ঘাটাল থেকে আসন্ন লোকসভায় দেব যে আর দাঁড়াতে চাইছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদিও সরাসরি এ ব্যাপারে কখনওই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানাননি দেব। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্করের সঙ্গে বিবাদের কারণেই দেব রাজনীতি নিয়ে খানিক ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়েছিলেন। মূলত শঙ্করের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই আর ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন না দেব। শঙ্করের সঙ্গে বিবাদের কারণে দেব যে রাজনীতি নিয়ে খানিক ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়েছিলেন অনেক দিন ধরে, তা-ও নেতৃত্বের অজানা ছিল না। সম্প্রতি ঘাটাল উৎসব এবং শিশু মেলার কমিটি গঠন নিয়ে ওই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। তা-ও শীর্ষ নেতৃত্বের কানে পৌঁছেছিল।
ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে এগোচ্ছিল, তাতে জল্পনা তৈরি হয়, আসন্ন লোকসভা ভোটে আর প্রার্থী হতে চাইছেন না অভিনেতা-সাংসদ। তবে এর পরেই তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেন দেব। আসন্ন লোকসভা ভোটে দেবের ঘাটাল থেকে প্রার্থী হওয়া নিয়ে যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটে। মমতা এবং অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পরের দিন তৃণমূল সাংসদ দেব নিজেই জানিয়ে দেন, লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে তিনিই লড়বেন। ঘটনাচক্রে, দেবের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকের পরে শঙ্করকেও ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়েছিল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দেবের মন পরিবর্তন করে তাঁকে আবার ভোটে লড়তে রাজি করানোর নেপথ্যে ছিলেন স্বয়ং অভিষেক। গত লোকসভা নির্বাচনে দলের আর দুই তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানের ক্ষেত্রে তেমনটা করেনি তৃণমূল। মিমি আর ভোটে না দাঁড়ানোর কথা জানানোর পর আর তাঁর সঙ্গে সে ভাবে আলোচনায় বসতে দেখা যায়নি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। নুসরত বা মিমি— দু’জনের কাউকেই এ বার লোকসভার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। ব্যতিক্রম হয়েছে দেবের ক্ষেত্রে। দলের অন্দরের খবর, অভিষেক মনে করছেন, জয় নিশ্চিত করতে ঘাটালের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রার্থী হতে পারেন দেবই। ঘাটালের মানুষের দেব-আবেগ এবং অভিনেতার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আবার ঘাটাল লোকসভাকে তৃণমূলের হাতেই রাখতে চাইছেন তিনি। আর এটাই নাকি ঘাটাল রক্ষায় তাঁর ‘মাস্টার প্ল্যান’। তাই এ বার স্বয়ং দেবের হয়ে ভোটের প্রচারে নামতে রবিবার ‘দেব-ভূম’ ঘাটাল যাচ্ছেন তিনি। অভিষেক শেষ ঘাটাল গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত ভোটের আগে। তৃণমূলের ‘নবজোয়ার’ যাত্রা চলাকালীন। সেখানে গিয়ে চমকও দিয়েছিলেন তিনি। মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস ঘাটালেই অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। দলের সেনাপতি ভোটপ্রচারে আসছেন শুনে ঘাটালের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যস্ততা তুঙ্গে। রোড শোতে কোনও রকম খামতি রাখতে চান না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy