গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তাঁকে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের অনেক গ্রাম ‘প্যাড উওম্যান’ বলে জানে। ইউনিসেফের হয়ে আদিবাসী গ্রামে ঘুরে ঘুরে ঋতুস্রাব নিয়ে কিশোরী থেকে সাধারণ মহিলাদের সচেতন করেছেন তিনি। শিখিয়েছেন স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার। ভেঙেছেন ‘ট্যাবু’। তিনি ঝাড়খণ্ডের কন্যা। তিনি বাংলার বধূ। সোনামণি মুর্মু (টুডু)। তিনিই লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী। যে ঝাড়গ্রাম এক সময় ছিল ‘লালদুর্গ’। যে ঝাড়গ্রাম তার পরে হয়েছিল ‘সবুজ’। তার পর গত লোকসভায় রং বদলে ‘গেরুয়া’।
ঘটনাচক্রে, মহিলাদের ঋতুস্রাব এবং তা নিয়ে অনগ্রসর অংশে অসচেতনতা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালে অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘প্যাডম্যান’ ছবিতে। ‘প্যাড উওম্যান’ সোনামণি কি সেই ছবি দেখেছেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে সোনামণি বললেন, ‘‘ওই ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই আমার অনেক বছর ওই বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়ে গিয়েছিল। সিনেমা তো সিনেমাই! কিন্তু আমি কাজটা করেছি বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে। গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে।’’
ঝাড়ঘণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার কোডিয়া গ্রামে জন্ম সোনামণির। যে গ্রাম পুরুলিয়ার বান্দোয়ান লাগোয়া। স্কুলের পড়াশোনা ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ায়। ঘাটশিলা কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞান (সাইকোলজি) নিয়ে অনার্স। তার পরে জামশেদপুরে স্নাতকোত্তর। সোনামণি সাইকোলজি পড়েছেন। তিনি কি মানুষের মন পড়তে পারেন? তরুণী সিপিএম প্রার্থী সরাসরি জবাব দিলেন না। হাসলেন। আর বললেন, ‘‘ও ভাবে কি মন পড়া যায়?’’
টানা সাত-আট বছর মহিলা ও শিশু সচেতনতার কাজ করেছিলেন। বিয়ের আগে পূর্ব সিংভূম জেলায় স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন সোনামণি। ২০১৬ সালে তাঁর স্নাতকোত্তরের বছরেই বিয়ে হয় বান্দোয়ানের বাসিন্দা মণীশ টুডুর সঙ্গে। সোনামণির স্বামী কাজ করেন স্থানীয় আসনপানি পঞ্চায়েতে। চুক্তিভিত্তিক কাজ। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই আসনপানিতেই গ্রাম সংসদে দাঁড়িয়ে সিপিএমের হয়ে জিতেছিলেন সোনামণি। এখন তিনি পঞ্চায়েত সদস্য। পঞ্চায়েত থেকে সোজা লোকসভার লড়াইয়ে! উল্লেখ্য, বান্দোয়ান বিধানসভা পড়ে ঝাড়গ্রাম লোকসভার মধ্যে। তিনি কি জানতেন দল তাঁকে প্রার্থী করবে? সোনামণি বললেন, ‘‘প্রার্থী ঘোষণার এক ঘণ্টা আগে অমিয়’দা (সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র) বললেন, তোমায় প্রার্থী করা হচ্ছে। সেই প্রথম জানি।’’ সোনামণির ছ’বছরের ছেলে রয়েছে। নাম আয়ুষদেব। তবে সে থাকে টাটানগরে মামা-মাসির কাছে। নিজে রোজগার করে সোনামণি দু’টি ঘর বানিয়ে ‘হোম স্টে’ করেছেন। পুরুলিয়ায় এখন পর্যটকের ভিড় হয়। সোনামণির হোম স্টে ভরে থাকে শনি-রবিবার। কিন্তু এখন? সোনামণি জানালেন, ‘‘এখন ভোটের প্রচার করব। ওই কাজে এখন মন দিতে পারব না।’’
গত ভোট পর্যন্ত সিপিএমের রক্তক্ষরণ অব্যাহত ছিল। যা ক্রমে রক্তশূন্যতায় পৌঁছেছে। এই ‘কঠিন’ সময়ে সিপিএম কেন? সোনামণির জবাব, ‘‘সিপিএমের নীতি আমার ভাল লাগে। বাকিরা তো সবাই এক। সব এক।’’
ঝাড়গ্রাম আসন নিয়ে সিপিএমের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিল। রাজ্য নেতৃত্বের একটি অংশ চেয়েছিলেন, ঝাড়গ্রাম আইএসএফকে ছেড়ে দেওয়া হোক। কিন্তু সিপিএমের জঙ্গলমহলের নেতাদের অনেকেই আপত্তি জানান। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ঝাড়গ্রাম অন্য কাউকে ছাড়লে দলের প্রতীকে কোনও আদিবাসী প্রার্থী দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে ভুল বার্তা যাবে। শেষমেশ সোনামণিকে প্রার্থী করে সিপিএম।
রুখাসুখা ঝাড়গ্রামের মাটিতে কি সোনা ফলাতে পারবেন সোনামণি? জবাব মিলবে ৪ জুন দুপুরে। তবে ঝাড়খণ্ডের কন্যা, বাংলার বধূ, আদিবাসী মহল্লার ‘প্যাড উওম্যান’-এর দাবি, ‘‘ভোট বাড়বে। বাড়বেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy