ভোটার কার্ড হাতে চারুবালা বিশ্বাস। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
ভোট দিতে গিয়ে ভোটার জানতে পারলেন— তিনি মৃত। তাই সোমবার লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েও ভোট দেওয়া হল না ৭৪ বছরের চারুবালা বিশ্বাসের।
চারুবালা বিশ্বাস বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে হরিণঘাটা বিধানসভা এলাকার ভোটার। তাঁর বাড়ি চাকদহ থানার হরিআঁখি পূর্ব গ্রামে। মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে বসে ওই ঘটনার কথা জানিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি। চারুবালা বলেন, ‘‘আমায় ভোট দিতে দিল না। বলল, আমি নাকি মরে গিয়েছি!’’ কথা বলে জানা গেল, ওই বৃদ্ধা কানে খুব একটা ভাল শুনতে পান না। সে ভাবে গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন না এখন। তবে চারুবালা যে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের হরিণঘাটা বিধানসভার হিংনারা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ‘জীবিত’ ভোটার, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই তাঁর বা তাঁর পরিবারের।
ওই বৃদ্ধার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে দশটার পরে বাড়ি থেকে ভোট দিতে বেরোন চারুবালা। তাঁর বাড়ি থেকে খানিক দূরেই হরিআঁখি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে তাঁর ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পড়েছিল। তিনি সেখানকার ১০ নম্বর বুথের ভোটার। ভোট দিতে যাওয়ার সময়ে চারুবালার সঙ্গে ছিলেন শোভা বিশ্বাস, যিনি সম্পর্কে তাঁর জা। মঙ্গলবার শোভা বলেন, ‘‘এর আগে বিধানসভা এবং গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমার জা চারুবালা ভোট দিয়েছিলেন। সেই সময়ে ভোট দিতে তাঁর কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু এ বারে সমস্যা হল।’’
শোভা জানাচ্ছেন, নির্বাচন কমিশনের তরফে আগাম যে বাড়ি-বাড়ি ভোটারদের স্লিপ দেওয়া হয়, সেটি হাতে পাননি চারুবালা। যাঁরা সেই সময়ে এসেছিলেন, তাঁরা চারুবালার বুথ-নম্বর লেখা ওই স্লিপ খুঁজে পাননি। তাঁকে জানানো হয়েছিল, হাতে ভোটার কার্ড নিয়ে নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে গেলেই হবে। সেখানে ভোট দিতে পারবেন চারুবালা বিশ্বাস। সেই মতো সোমবার ভোটার কার্ড হাতে নিয়ে ভোট দিতে যান চারুবালা। সে সময়েই চারুবালাকে জানানো হয়— তিনি নাকি মারা গিয়েছেন। শোভার কথা, ‘‘ওই বুথের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেও কিছু হয়নি। ওঁরা জানালেন, ভোটার তালিকায় ওঁর নামের জায়গায় ‘মৃত’ বলে উল্লেখ করা রয়েছে। যে কারণে তাঁদের কিছু করার নেই। সব শুনে উনি ভোট না দিয়েই বাড়ি ফিরে গেলেন।’’
কেন এই রকম ঘটল? এই বিষয়ে কল্যাণীর মহকুমা শাসক অভিজিৎ সামন্ত বলেন, ‘‘এ ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। কাগজপত্র খতিয়ে দেখলে বিষয়টি বোঝা যাবে।’’
ওই ঘটনায় সোমবার দিনভর এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন চারুবালা বিশ্বা। ভোটার তালিকায় জীবিত মানুষকে ‘মৃত’ বলে উল্লেখ থাকা নিয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা বিজেপি-র জুয়েল মল্লিক বলেন, ‘‘এই পরিবারের সদস্যেরা আমাদের দলের ভোটার। দেখে-দেখে আমাদের ভোটারদের কাউকে মৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার, ১২ জন ভোটারের নাম অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’’ বিজেপি নেতার আরও দাবি, ‘‘এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। এটা বুঝতে পেরে আমাদের ভোটারদের সমস্যায় ফেলছে।’’
যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের শ্রীকান্ত রায় বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমাদের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি হেরে যাবে বুঝতে পেরে এ সব রটাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy