মেনকা গান্ধী। — নিজস্ব চিত্র।
“আমি মায়ের মতো সুলতানপুরকে যত্ন করেছি। মায়েরা কী চায়? পরিবারের উন্নতি হোক, সবাই সুখে থাকুক। আমিও সুলতানপুরের জন্য তাই চেয়েছি।” মেনকা গান্ধী বক্তৃতা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সুলতানপুরের স্থানীয় বিজেপি নেতা মাইক্রোফোন টেনে নিয়ে জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, “উনি আপনাদের মাতাজি! ঠিক তো?” মঞ্চের সামনের ভিড় সহর্ষে সায় দেয়। একটি প্রচারসভা শেষ করে অন্য প্রচারসভার দিকে রওনা হন মেনকা। তার আগে সুলতানপুরের সাংসদ মুচকি হেসে বলেন, “এ বার নিজের নামটা মেনকা গান্ধী থেকে বদলে মাতাজি গান্ধী করতে হবে দেখছি!”
উত্তরপ্রদেশের মানচিত্রে অমেঠী, রায়বরেলী ও সুলতানপুরের অবস্থান ত্রিভুজের তিনটি কোণের মতো। লখনউ থেকে রওনা হলে প্রথমে রায়বরেলী, সেখান থেকে অমেঠী হয়ে সুলতানপুর ছুঁয়ে ফের লখনউ ফিরে যাওয়া যায়। তা সত্ত্বেও সুলতানপুর পাশের অমেঠী, রায়বরেলীর মতো ‘ভিভিআইপি লোকসভা কেন্দ্র’ নন। ঠিক যেমন সুলতানপুরের সাংসদের গান্ধী পরিবারের পুত্রবধূ হলেও সেই ভাবে গান্ধী পরিবারের সদস্য নন মেনকা।
মেনকা গান্ধী কি বরাবরই দলছুটের দলে? মূলস্রোতের বিপরীতে? সুলতানপুরে মেনকার প্রচার দেখলে তেমনই মনে হবে। তিনি গত পাঁচ বছর সুলতানপুরের সাংসদ। এ বার ফের বিজেপি প্রার্থী করেছে। কিন্তু বিজেপির প্রার্থী হলেও মেনকার প্রচারে রামমন্দিরের কথা, হিন্দুত্ব, মুসলিম-বিদ্বেষ, পাকিস্তানের নাম করে উগ্র জাতীয়তাবাদ নেই। কংগ্রেসকে তুলোধোনাও করাও তাঁর প্রচারের কৌশলে নেই। আবার বিজেপির তেমন বড় মাপের নেতারা মেনকার জন্য সুলতানপুরের প্রচারে নেই।
২০ মে অমেঠী, রায়বরেলীর সঙ্গে সুলতানপুরেও ভোটগ্রহণ। আট বারের সাংসদ হলেও সুলতানপুরে তিনি মাত্র পাঁচ বছর সাংসদ রয়েছেন। ফের ভোটে জিততে মেনকা শুধু তাঁর কাজের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নতুন সড়ক, নতুন ট্রেন, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শহরের পাঁচশো বিদ্যুৎ ট্রান্সফর্মার বদল, এক লক্ষ তিরিশ হাজার নতুন বাড়ি—মেনকার কাজের ফিরিস্তিতে না আছে রামমন্দির, না রয়েছে ৩৭০ রদ। আগামী পাঁচ বছর আর কী কী কাজ করতে হবে, তা মানুষের থেকে শুনতে চাইছেন। দাবি উঠছে, সুলতানপুরের চিনি কলের সংস্কার প্রয়োজন। মেনকা কাজের তালিকা তৈরি করছেন।
উত্তরপ্রদেশে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের আসন সমঝোতায় সুলতানপুরে মেনকার বিরুদ্ধে সমাজবাদী পার্টি লড়ছে। কিন্তু সুলতানপুরের যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি বরুণ মিশ্র মেনে নিচ্ছেন, মেনকাকে হারানো কঠিন। কারণ, তাঁর জনসংযোগ। মানুষের যে কোনও সমস্যায় তিনি পাশে থাকেন। সুলতানপুরে তিনি নিয়মিত ‘জনতা দরবার’-এ হাজির হন। সেখানে যে কোনও সমস্যা নিয়ে যাও, মেনকা সাহায্য করবেন। আবাস যোজনায় টাকা আটকে রয়েছে, পুলিশ এফআইআর নিচ্ছে না, হাসপাতালে বিশেষ কোনও রোগের চিকিৎসায় দামি ওষুধ নেই—সঙ্গে সঙ্গে মেনকার সহকারী মোবাইলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফোন করবেন। মেনকা নিজে কথা বলবেন। সরকারি কর্তাদের কী করণীয় দেখে নিতে বলবেন। সুলতানপুরের লোকসভা কেন্দ্রের অধীন সব বিধানসভা কেন্দ্রে মেনকার সংসদীয় অফিসে গেলে একই রকম সাহায্য মেলে।
এলাকার বিজেপি নেতা উমাশঙ্কর দুবে বলেন, “মেনকাজি-র কাছে কারও জন্য কোনও সাহায্য চাইতে গিয়ে খালি হাতে ফিরিনি। উনি একেবারে আসল জায়গায় ফোন করে যা বলার বলে দেন। কাজ হয়ে যায়। এই জন্যই সবাই ওঁকে মাতাজি বলে ডাকে।”
সুলতানপুর ‘মা’ বলে ডাকলেও কি মেনকা গান্ধীর ‘মায়ের মন’ তাতে পুরোপুরি শান্ত হচ্ছে? তাঁর ৪৪ বছরের ছেলে নির্বাচনের মরসুমে ঘরে বসে রয়েছে, আর ৬৭ বছরের মা হয়ে তিনি ভোটে লড়ছেন—এতে আর কোন মায়ের মন ভাল থাকে? মেনকা গান্ধীর মনও ভাল থাকছে না। নরেন্দ্র মোদীর প্রথম সরকারে তিনি মন্ত্রী থাকলেও গত পাঁচ বছর তাঁকে মন্ত্রী করা হয়নি। এ বার বরুণ গান্ধীকে বিজেপি পিলিভিট থেকে প্রার্থী করেনি।
মেনকা প্রথমে এ নিয়ে মুখ খুলছিলেন না। এখন সংবাদমাধ্যমের সামনে মেনে নিচ্ছেন, তিনি হতাশ। দশ বছর সাংসদ থাকার পরে বরুণকে প্রার্থী না করা মেনকা তাঁর ছেলের ‘সুন্দর রাজনৈতিক কেরিয়ার’-এ ‘বাধা’ হিসেবে দেখছেন। বরুণ অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রের মোদী সরকার ও উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। বরুণকে প্রার্থী না করার পিছনে “এ ছাড়া আর কোনও কারণ থাকতে পারে না’’ বলেই মেনকার মত।
এর আগে মেনকা-বরুণ দু’জনেই বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতি থেকে বাদ পড়েছিলেন। এ বার মেনকাকে সুলতানপুরে প্রার্থী হলেও বরুণ পিলিভিট থেকে বাদ পড়েছেন। বরুণ মেনকার হয়ে প্রচারেও নামেননি। সংবাদমাধ্যমের সামনেও আসেননি। বরুণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মা মেনকাকেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। মুখে শুকনো হাসি নিয়ে মেনকা একটাই কথা বলছেন, “আমার বিশ্বাস, ও যা-ই করবে, যেখানেই যাবে, দেশের জন্য ভাল কাজ করবে।”
সুলতানপুর মেনকা গান্ধীকে ‘মাতাজি’ বলে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। মায়ের মনে ছেলের চিন্তা থেকেই যাচ্ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy