Advertisement
E-Paper

কোটিপতি প্রার্থীর ভিড়ে বিহারের দুর্দশা ঘুচবে কি

রাস্তার একপ্রান্তে বিজেপির দফতর। প্রদেশ বিজেপি সভাপতি সম্রাট চৌধরির উপস্থিতিতে সেখানে চলছে জরুরি বৈঠক। ভিড় জমেছে আর দফতরের সামনে-পিছনে সারি সারি গাড়ি।

নীতিশ কুমার। —ফাইল চিত্র।

নীতিশ কুমার। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন সাহা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ০৮:৩০
Share
Save

পটনার বীর চন্দ পটেল পথ-এ ঝাঁ চকচকে গাড়ির ভিড়ে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এখানেই পাশাপাশি বিজেপি আর আরজেডির প্রদেশ দফতর। আর রাস্তার উল্টো দিকে দোতলা বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দলীয় কার্যালয়। বড়-মেজো-সেজো নেতারা দলের দফতরে এসেছেন। সঙ্গে এনেছেন অনুগামীদের। নেতাদের রক্ষা করতে এসেছে পুলিশ, সিআরপি-র গাড়ি। গোটা রাস্তাটার ধার ঘেঁষে তাই গাড়ির বহর তো থাকবেই।

রাস্তার একপ্রান্তে বিজেপির দফতর। প্রদেশ বিজেপি সভাপতি সম্রাট চৌধরির উপস্থিতিতে সেখানে চলছে জরুরি বৈঠক। ভিড় জমেছে আর দফতরের সামনে-পিছনে সারি সারি গাড়ি। পাশেই আরজেডির দফতরে সামনে স্থায়ী ভাবে দাঁড় করানো বিরাট হ্যারিকেন। পাঁচিলের বাইরে গাড়ি রেখে ভিতরে নেতারা মজেছেন ভোট-গল্পে। দু’টি দফতরের বাইরেই অনেকগুলি প্রচার ভ্যান। কোনওটায় নরেন্দ্র মোদী, কোনওটায় লালু-তেজস্বীর ছবি আর তাঁদের মূল বক্তব্য। নীতীশ কুমারের জেডিইউয়ের দফতরের পাশেও সারি সারি প্রচার ভ্যান। নামজাদা সংস্থার হরেক মডেলের গাড়ির এই জগতটাকে দেখে যদি মনে হয়, লক্ষ্মী তাঁর প্যাঁচাকে নিয়ে বিহারের সচিবালয়ের ঘরের কোণে বসে রয়েছেন, তা হলে বিরাট ভুল হবে। কারণ, কয়েক মাস আগেই জাত-অর্থনৈতিক সমীক্ষা বিহারের বিপরীত ছবিটাকেই তুলে ধরেছে।

সমীক্ষা জানিয়েছে, এ রাজ্যের ৬৩ শতাংশ পরিবারের মাসিক রোজগার ১০ হাজার টাকার থেকে কম। এর মধ্যে, ৩৪ শতাংশের বেশি পরিবারের মাসিক রোজগার মাত্র ৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ, দিনে ২০০ টাকা। প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। রাজ্যের ১৮ শতাংশ পরিবার প্রতি মাসে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা রোজগার করে থাকে। ২০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে মাসিক রোজগার প্রায় ১০ শতাংশ পরিবারের। এখানকার ৫০ লক্ষ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে গিয়ে মজদুরি করেন। তার পরেও বিহারের ৯৪ লক্ষ পরিবারকে গরিবির মধ্যেই দিন কাটাতে হয়।

অন্য একটি চিত্রও তুলে ধরা যেতে পারে। সেটা চার বছর আগের ছবি। ২০২০ সালের শেষে ভোট হয়েছিল বিহারে। বিধানসভায় যে ২৪৩ জন প্রার্থী জিতেছিলেন, তার মধ্যে ২৪১ জনের সম্পত্তির হিসাব তুলে ধরেছিল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)। দেখা গিয়েছিল, ২৪১ জনের মধ্যে ১৯৪ জনেরই সম্পত্তি কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ, বিধায়কদের ৮১ শতাংশই কোটিপতি। বিজেপিতে যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, দ্বিতীয় আরজেডি, তার পরে নীতীশের দল। ফলে লোকসভা ভোটেও এর অন্যথা হওয়ার নয়। যেমন, ১৩ মে বিহারে চতুর্থ পর্বে পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে। এর তিনটিতে লড়ছে আরজেডি। তাদের সব প্রার্থীই কোটিপতি। বিজেপিও লড়ছে তিনটিতে। তাদেরও সব প্রার্থী কোটিপতি।

বিহারের সাধারণ মানুষের অনটনের যে ছবিকে তুলে ধরল জাত-অর্থনৈতিক সমীক্ষা, তা নিয়ে অবশ্য নেতাদের মাথাব্যথার শেষ নেই। জাতের সমীকরণ নিয়ে যেমন ভোট-নকশা তৈরি করছেন তাঁরা, তেমনি রয়েছে গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে আমজনতাকে টেনে তোলার প্রতিশ্রুতি। সমীক্ষা প্রকাশের পরেই নীতীশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন, ৬০০০ টাকার কম মাসিক রোজগার যাদের, এমন ৯৪ লক্ষ গরিব পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। বিহার ক্ষুদ্র উদ্যোগ প্রকল্পে সেই টাকা ধার্য হবে, পরিবারগুলি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

অনটনের আবহে লোকসভা ভোটে বিকোচ্ছে তেজস্বী যাদবের বিহার প্যাকেজের দাবি। প্যাকেজ না দিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য প্রতিটি সভায় প্রধানমন্ত্রীকে দুষছেন তিনি। বলছেন, বিহারকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তাঁরা। উন্নয়নের অংশীদারিকে জাত সমীক্ষার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে রাহুল গান্ধী যুক্তি দিয়েছেন, বিহারে অন্যান্য অনগ্রসর জাতি, তফসিলি জাতি ও জনজাতি মিলিয়ে সংখ্যাটা ৮৪ শতাংশ। উন্নতির অঙ্ককে সেই হিসাবেই চালিত করতে হবে।

আর বিজেপি? জাত সমীক্ষা নিয়ে শুরুতে সমালোচনা করলেও এর মূল কারিগর নীতীশকেই এখন নিজেদের শিবিরে টেনে নিয়েছে তারা। তবে জাতপাতের রাজনীতি আর গরিবদের আবেগ নিয়ে খেলা করার অভিযোগ এনে ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরকে নিশানা করছেন মোদী। সামাজিক ন্যায় আন্দোলনের নেতা কর্পূরী ঠাকুরকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার বিরাট হোর্ডিংও শোভা পাচ্ছে বিজেপি দফতরের বাইরে। কর্পূরী ঠাকুরের ছেলে রামনাথ রাজ্যসভায় জেডিইউয়ের সংসদীয় দলের নেতা। মোদীর বিরাট প্রশংসা করে বললেন, ‘‘পিছড়ে বর্গের জন্য বিহারে কাজ অনেক হয়েছে। জাত সমীক্ষার পর সেই কাজের গতি আরও বেড়ে যাবে’’।

রাজনীতির তরজা চলতে চলতে এ বারের ভোটেও কোটিপতি প্রার্থীদের অনেকেই হয়তো জিতবেন। তবে বিহার সেই বিহারেই পড়ে থাকবে কি না, কে জানে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Bihar Spot Reporting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}