(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র
সন্ন্যাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে সরাসরি রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলাদা করে নাম নিয়েছিলেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজের। সেই সময় ওই মন্তব্যের পাল্টা ‘ইমামদের রাজনীতি’ নিয়ে সরব হলেও নির্দিষ্ট কারও নাম নেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের একটি সভায় বঙ্গীয় ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রউসউদ্দিন পুরকাইতের নাম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করলেন শুভেন্দু।
সম্প্রতি বঙ্গীয় ইমাম পরিষদের তরফে প্রকাশিত একটি বিবৃতি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দেওয়ার আর্জি জানানো হচ্ছে। নীচে স্বাক্ষর রয়েছে রউসউদ্দিনের। যদিও এই লিখিত বিবৃতির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
মঙ্গলবার দুপুরে নন্দীগ্রামে তমলুকের পদ্মপ্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সমর্থনে বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার ‘সংকল্প সভা’ হয়। সেখানেই তাঁর বক্তব্যে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, কিছু ইমাম তৃণমূলের হয়ে প্রচার করছেন। এই সূত্রেই উঠে আসে রউসউদ্দিনের নাম। বিরোধী দলনেতার কথায়, “এই রইসউদ্দিন পুরকাইত সাহেব একটা লিফলেট ছেড়েছেন। আমি এই ইমাম সাহেবকে বলি, ২০২১ সালের পরে সংখ্যালঘু কিংবা মুসলিমদের উপর যে অত্যাচারগুলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার করেছে, সেগুলি নিয়ে কেন মুখ খোলেননি?” এই অত্যাচারের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে শুভেন্দু তুলে আনেন আনিস খানের মৃত্যু, গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়া এবং বগটুইকাণ্ডের কথা। বিতর্কের সূত্রপাত শনিবার। শনিবার হুগলির গোঘাটে একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, “সব সাধু সমান হয় না। সব স্বজন সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের এক জন মহারাজ আছেন। আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকায় তারা দীর্ঘ দিন ধরে আছে। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ‘ডাইরেক্ট পলিটিক্স’ করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’
রবিবার রাজ্যে ভোটের প্রচারে এসে এই নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। পুরুলিয়া এবং বিষ্ণুপুরের জনসভা থেকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সাধু-সন্তদের অপমান করার অভিযোগ তুলে সরব হন তিনি। বিষ্ণুপুরের সভা থেকে মোদী বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল সাধু-সন্তদের গালিগালাজ করছে। ইস্কন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ বিভিন্ন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাকে গৌরবান্বিত করেছে। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সাধুরা এবং এই সংগঠনগুলি দেশকে নষ্ট করছে। আমার অভিযোগ, এখানকার মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে আমাদের সাধুদের এবং মহান সংগঠনগুলিকে গালিগালাজ করছেন। বদনাম করছেন। হিন্দুদের ভাগীরথীতে ডুবিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অনেক ভেবেচিন্তে এই কথা বলানো হয়েছিল। ভোটব্যাঙ্কের জন্য সাধুদের অপমান করা হচ্ছে।’’
ইতিমধ্যেই বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন কার্তিক মহারাজ। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তাঁর ‘মানহানি’ হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। কার্তিক মহারাজের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনও সারবত্তা নেই। সম্মানহানির চেষ্টায় তিনি ‘অসত্য’ এবং ‘বিভ্রান্তিকর’ মন্তব্য করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ওই সন্ন্যাসী। ওই আইনি চিঠিতে আগামী চার দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর বক্তব্যের জন্য জবাব চাওয়া হয়। চার দিনের মধ্যে জবাব না দিলে কার্তিক মহারাজ আইনি পদক্ষেপ করবেন বলেও জানানো হয় চিঠিতে। অন্য দিকে, রাজ্যের শাসকদলের দাবি, দেশে প্রত্যেকেরই আইনি পদক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতি আস্থা রয়েছে দলের। তবে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো সামাজিক সংগঠনগুলিকে বিজেপি রাজনীতি করতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসকদল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy