দুর্গাপুজো নিয়ে পাল্টা সুস্মিতার প্রশ্নের মুখে হিমন্ত। — গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভোটপ্রচারে বাংলায় এসে দুর্গোৎসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এ বার সেই সূত্রে হিমন্তকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অসমের শিলচরের বাসিন্দা সুস্মিতা দেব। হিমন্তের আপত্তি ছিল, দুর্গাপুজোকে দুর্গোৎসব বলা নিয়ে। হিমন্তকে বাঙালি-বিরোধী বলে দাবি করে পাল্টা সুস্মিতা প্রশ্ন তুললেন, আপার অসমে কেন দুর্গাপুজো কমিটিগুলি বাংলা ভাষায় ব্যানার পর্যন্ত টাঙাতে পারে না?
অসমে ভোট মেটার পরেই সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে বাংলায় ভোটপ্রচারে টেনে এনেছে বিজেপি। আর রাজ্যে পা দেওয়া ইস্তক ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির একের পর এক নমুনা দিয়ে যাচ্ছেন হিমন্ত, এমন অভিযোগ বিরোধীদের। সন্দেশখালি, মুসলিম তোষণ নিয়ে মমতাকে আক্রমণের পর হিমন্তের নিশানা থেকে বাদ গেল না বাংলার দুর্গাপুজোও। হিমন্তের আপত্তি, দুর্গাপুজোকে দুর্গোৎসব বলা নিয়ে। দাবি, পুজো কখনও ‘উৎসব’ হতে পারে না, পুজো পুজোই। বাংলা থেকে এই ধারণার উৎপত্তি বলেও দাবি করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। এ বার তারই পাল্টা জবাব এল প্রতিপক্ষ শিবির থেকে। অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দেওয়ার জন্য তৃণমূল এগিয়ে দিল অসমেরই তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতাকে। জনসভার সেই অংশটির ভিডিয়ো ক্লিপ সমাজমাধ্যমে তুলে ধরে সুস্মিতার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘প্রথমে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর উত্তর দেওয়া উচিত যে, কেন আপার অসমের দুর্গাপুজো কমিটিগুলি ব্যানারে বাংলা ভাষা ব্যবহার পর্যন্ত করতে পারে না!’’ সেই সঙ্গেই সুস্মিতা লিখেছেন, ‘‘অন্ধের কী বা দিন কী বা রাত... বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকা মানুষকে প্রচার করতে পাঠানো উচিত হয়নি।’’
দুর্গাপুজোকে বাঙালি ‘দুর্গোৎসব’ বলতেই অভ্যস্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। কিন্তু হিমন্তের আপত্তি দুর্গাপুজোর সঙ্গে ‘উৎসব’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে। তিনি দুর্গাপুজোকে কেবল পুজো রূপেই দেখতে চান, উৎসব নয়। এই মন্তব্যের মধ্যেও অনেকে ধর্মীয় মেরুকরণের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। বস্তুত, দুর্গাপুজো নিয়ে বিজেপির ‘বহিরাগত’ নেতাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া শোনা গিয়েছে ২০১৪ সালের পর থেকেই। গত বিধানসভা ভোটের প্রচারেও অমিত শাহেরা জনসভায় দাঁড়িয়ে নিয়মিত দাবি করতেন যে, বাংলায় দুর্গাপুজো হয় না। তার পরেও ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। যদিও এ বারের লোকসভা ভোটের প্রচারে বাংলায় এসে আর সেই দাবির কথা শোনা যাচ্ছে না বিজেপি নেতাদের গলায়। তার বদলে এ বার নতুন ডামাডোল দুর্গাপুজোকে ‘উৎসব’ বলা যায় কি না, তা নিয়ে।
২২ বছর কংগ্রেস করার পর ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অসমের হিমন্ত। তার পর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপি নেতা হিসাবে সকলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছেন তিনি। ২০২১ সালে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, রাজ্যে বিজেপির উত্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক মেরুকরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও, অসমে হিমন্ত যে সব কাজ করেছেন এবং যে সমস্ত কথা বলেছেন অবলীলায়, বাংলায় সেই পথে চললে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বঙ্গ বিজেপিরই অনেক নেতার মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy