হিরো হিরণ
পিতৃদত্ত নাম হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়। সেলুলয়েডে খানিক কেটেছেঁটে ‘হিরণ’ হয়েছিলেন। সেই নামেই তাঁর পরিচয়। দুষ্টু লোকেরা বলে, এককালে ফোন ধরে বলতেন, হিরো হিরণ বলছি! এখন অবশ্য তিনি হিরোর চেয়ে বেশি ‘নেতা’। জন্মভূমি উলুবেড়ে। কর্মভূমি প্রথমে টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়া এবং দ্বিতীয়ার্ধে খড়্গপুর। হলফনামা বলছে, স্ত্রীর নাম অনিন্দিতা। কন্যা নাইসা। বাইপাসের উপকণ্ঠে হালফিলে গড়ে ওঠা শহুরে ‘টলিউড হাব’-এ ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে সরকারি ঠিকানা খড়্গপুরের হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি।
তৃণ-ভুল!
যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। তবে বিশেষ কোনও দায়িত্ব পাননি। তিনি নাকি ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে তৃণমূলে যোগও দেননি। হতে পারে। না-ও পারে। তবে ঘটনাপ্রবাহ বলে, শেষমেশ ‘মানুষের জন্য’ কাজ করতে চেয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজেপিতে যোগ দেন হিরণ। বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে তখন পদ্মে যোগদানের হিড়িক লেগেছে। তৃণমূলত্বের ‘ভুল’ শুধরে হিরণও ঝাঁপ দিয়ে পড়েন। খড়্গপুর সদর আসনে প্রার্থী হন। জেতেনও।
তৃণ-মূল!
হিরণ খড়্গপুরের বিধায়ক। হিরণ খড়্গপুর পুরসভার কাউন্সিলরও বটে। অর্থাৎ, তৃণমূলে না থেকেও নির্বাচনী রাজনীতির তৃণমূল স্তরেই আছেন। ২০২২ সালে খড়্গপুরের পুরভোটে হিরণকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ভোটে জিতে তিনি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। পদ্মশিবিরের পরিকল্পনা ছিল পুরসভায় ক্ষমতা দখল করলে হিরণকে চেয়ারম্যান করা হবে। তবে সে হিসেব মেলেনি।
কেবলই ছবি?
২০২৩ সালের গোড়ায় একটি ছবি নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে পাশাপাশি দু’টি হলুদ সোফায় আসীন হিরণ এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল নেতা তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি। পটভূমিকায় তৃণমূলের প্রতীক ‘জোড়াফুল’। ছবি আসল না নকল, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। প্রশ্ন করায় অভিষেক বলেছিলেন, হিরণই বলুক, ছবি সত্যি না মিথ্যে! সম্প্রতি হিরণ জানান, ছবি কেবলই ছবি নয়। ঘটনাও বটে। বার বার ডাকায় তিনি গিয়েছিলেন অভিষেকের দফতরে। তবে শুভেন্দু অধিকারীকে জানিয়েই গিয়েছিলেন। শুভেন্দু বলেন, তিনিই হিরণকে বলেছিলেন, গিয়ে বক্তব্য শুনে আসতে।
ঝাঁকের কৈ ঝাঁকে কই?
২০২১ সালের নীলবাড়ির লড়াইয়ে একঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রীকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। যশ দাশগুপ্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পার্নো মিত্র, তনুশ্রী চক্রবর্তী, পায়েল সরকারেরা ভোটে হেরে আর রাজনীতিমুখো হননি। সেই ঝাঁকের মধ্যে একমাত্র জিতেছিলেন হিরণ। তিনি ঝাঁক থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সক্রিয় রাজনীতি করছেন। বিধানসভা থেকে তাঁর উত্তরণ হয়েছে লোকসভার প্রার্থিত্বে।
অধিকারী বোধ
বিধায়ক হিরণ শুভেন্দু অধিকারীর নজরে পড়েছিলেন। বিবিধ বিষয়ে বিধানসভায় বক্তৃতা করেন। শুনে মনে হয় হোমওয়ার্ক করে এসেছেন। তথ্যসমৃদ্ধ বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে বিজেপির প্রথম সারির বিধায়কদের মধ্যে হিরণ অন্যতম। তবে বিজেপির অন্দরে তাঁর ‘হিতৈষী’রা বলেন, হিরণ নিজে নিজেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাসের তলায় দেখতে পছন্দ করেন। সেই চৌহদ্দির বাইরের বাসিন্দাদের প্রতি তাঁর খুব একটা দৃষ্টি যায় না।
পদ্মকাঁটা
হিরণ যে খড়্গপুর সদর কেন্দ্রের বিধায়ক, ২০১৬ সালে সেই কেন্দ্রে জিতেছিলেন দিলীপ ঘোষ। দিলীপ মেদিনীপুরের সাংসদ হওয়ার পর উপনির্বাচনে তৃণমূল পুনরুদ্ধার করেছিল খড়্গপুর সদর। হিরণ গিয়ে সেই খড়্গপুরে আবার পদ্মফুল ফোটান। তবে দিলীপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কিছু ‘কাঁটা’ আছে বলেই পদ্মশ্রুতি। হয়তো দিলীপ-শুভেন্দু ‘মধুর’ সম্পর্কের উত্তরাধিকার সূত্রে।
কে তুমি, নন্দিনী?
অভিনয় শুরুর আগে রিলায়্যান্সে চাকরি করতেন হিরণ। থাকতেন মুম্বইয়ে। ২০০৭ সালে হরনাথ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘নবাব নন্দিনী’ ছবিতে অভিনয় দিয়ে বাংলা ছবিতে তাঁর যাত্রা শুরু। সে ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন কোয়েল মল্লিক।
দেব দীপাবলি
ঘাটালে ভোটের প্রচারের শুরু থেকেই দেবের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শুরু করেছিলেন হিরণ। গোড়ার দিকে দেব হ্যা-হ্যা করে হাসতেন। প্রতিক্রিয়া দিতেন না। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, দেব ততই একটু একটু করে হিরণের উদ্দেশে কটাক্ষ করা শুরু করেছেন। ভোটের আগে দু’জনের কথা কাটাকাটি সপ্তমে পৌঁছেছে। ঘাটালের আকাশে অকাল দীপাবলির তারাবাজি দেখছেন মানুষ।
ডক্টরবাবু
‘ডক্টর হিরণ চট্টোপাধ্যায়’। এই নামেই নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন হিরন্ময়। কিন্তু তাঁর ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিটি নাকি ভুয়ো। এমনই অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে নালিশ করেছে আম আদমি পার্টি। তবে হিরণ ‘হিরণ্ময় নীরবতা’ অবলম্বন করেননি। সপাটে জানিয়েছেন, তাঁর পিএইচডি আগেই হয়ে গিয়েছে। খড়্গপুর আইআইটি থেকে তিনি ‘পোস্ট পিএইচডি’ করছেন এবং তাঁর এই গবেষণা ‘স্পনসর্ড’। বেসরকারি এক সংস্থার হয়ে তিনি গবেষণা করছেন খড়্গপুর আইআইটির এক অধ্যাপকের কাছে। তবে কিনা, প্রতিপক্ষ দেব ছাড়েননি। ‘ডক্টরবাবু’ বলে মিহি চিমটি কেটে দিয়েছেন।
জামাই কা ফেয়ারওয়েল
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে ‘জামাই’-এর একটা ছাপ রয়েছে। বাস্তব জীবনে তিনি জামাই হিসেবে কেমন, তা নিয়ে কোনও খবর নেই। কিন্তু ২০১৫-২০২০ সালের মধ্যে হিরণ অভিনীত তিনটি ছবির নাম ‘জামাই ৪২০’, ‘জামাই বদল’ এবং ‘জিও জামাই’। তবে এখন ‘জামাই’-এর ভূমিকাকে বিদায় দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লোকসভার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।
রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy