গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পর পর কয়েকটি ঘটনা। প্রতিটি ঘটনার কেন্দ্রে একটিই নাম— সন্দেশখালি। গোপন ক্যামেরায় তোলা সেই গঙ্গাধর কয়ালের দ্বিতীয় ভিডিয়ো ফাঁস হওয়া থেকে শুরু করে সন্দেশখালির এক তৃণমূলকর্মীকে বিজেপি সমর্থকদের বেধড়ক মারধর এবং শেষে নাম না করে সন্দেশখালির স্টিং ভিডিয়োকে ‘স্বীকৃতি’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ও তাঁর কড়া সমালোচনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সব মিলিয়ে রবিবার, ছুটির সারাদিন সন্দেশখালি নিয়েই সরগরম রইল বঙ্গ রাজনীতি।
দ্বিতীয় স্টিং ভিডিয়ো
শনিবার রাত থেকেই শুরু ঘটনাপ্রবাহ। নতুন একটি স্টিং ভিডিয়োয় প্রকাশ্যে এসেছে সন্দেশখালি২-এর বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধরের বক্তব্যের দ্বিতীয় পর্ব। ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে সেখানে গঙ্গাধরকে হিসাব দিতে শোনা যায় সন্দেশখালিতে ভোটের জন্য কত মদ এবং অস্ত্র-শস্ত্রের প্রয়োজন। ‘প্রতি বুথের জন্য পাঁচ হাজার টাকার মদ আর অন্তত ৫০টি পিস্তল’, সবিস্তার বলতে শোনা যায় তাঁকে। সন্দেশখালির ওই এলাকায় তিনটি অঞ্চলে মোট ৫০টি বুথ। গঙ্গাধরের হিসাবে সেক্ষেত্রে আড়াই লক্ষ টাকার মদের প্রয়োজন সেখানে। এর পাশাপাশি ৫০টি পিস্তলের প্রতি পিস্তল পিছু ১২টি করে গুলি কার্তুজও দাবি করেছেন বিজেপির মণ্ডল সভাপতি।
নীরবতা ভাঙল দিল্লির পদ্ম
গত সপ্তাহে শনিবার সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রথম স্টিং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। বলেননি। যেখানে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধরকে বলতে শোনা গিয়েছিল সন্দেশখালির ঘটনা গোটাটাই সাজানো। সেখানে কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। অর্থ দিয়ে ওই আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। তবে তার পর থেকে একে একে বহু ভিডিয়োতেই সন্দেশখালির অভিযোগকারিণীরা তাঁদের উপরে হওয়া নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োরও সত্যতা যাচাই করেনি। তার পর থেকে দিল্লির নেতাদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল এ-ও জানতে চেয়েছিল যে, মোদী কি তবে মিথ্যা বলছেন? কিন্তু জবাব আসেনি। বৃহস্পতিবার রাজ্যে এসেছিলেন অমিত শাহ। স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে কোনও কথাই বলেননি তিনি। বরং এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে পুরনো ঘটনার প্রসঙ্গই টেনে আনেন। কিন্তু রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদী বললেন।
মোদীর ‘নতুন খেলা’
শনিবার রাতে যখন ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী কলকাতায়। তবে ভিডিয়ো নিয়ে তাঁর বক্তব্য শোনা গেল পরের দিন সকাল ১১টার পরে। রবিবার রাজ্যের চারটি লোকসভা কেন্দ্রে চারটি জনসভা ছিল মোদীর। প্রথম সভাতেই সন্দেশখালির ভিডিয়ো প্রসঙ্গ উঠে আসে মোদীর কথায়। ভাটপাড়ায় অর্জুনের সমর্থনে সভায় মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে কী চলছে, সারা দেশ তা দেখতে পাচ্ছে। সেখানকার অত্যাচারী নেতাদের তৃণমূলের পুলিশ বাঁচিয়েছে। এখন আবার ওখানে নতুন খেলা শুরু করেছে। তৃণমূলের গুণ্ডারা সন্দেশখালির মা-বোনেদের ভয় দেখাচ্ছে। কারণ, ওখানে অত্যাচারীর নাম শাহজাহান শেখ। ওঁকে ক্লিনচিট দিতে চায় তৃণমূল।’’ অর্থাৎ নাম না করেও এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কথায় উঠে এল স্টিং ভিডিয়ো এবং তার পরবর্তী ঘটনাক্রমের প্রসঙ্গ। পরে হাওড়ার সাঁকরাইলেও বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীর সমর্থনে সভায় মোদীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সন্দেশখালিতে কী হয়েছে, গোটা দেশ দেখেছে। মহিলাদের উপর অত্যাচারীদের এখন বাঁচাতে নেমে পড়েছে তৃণমূলের গোটা দল। তৃণমূল এখনও ওঁদের জন্য ব্যাটিং করছে।’’ তবে মোদীর এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব খুব শীঘ্রই আসে মমতার সভা থেকে।
মমতার পাল্টা জবাব
রবিবার মমতারও জোড়া সভা ছিল। একটি আমডাঙায় অন্যটি উলুবেড়িয়ায়। আমডাঙার সভা থেকেই মোদীকে মিথ্যাবাদী বলে আক্রমণ করেন মমতা। সন্দেশখালির সঙ্গে রাজভবনের ঘটনার তুলনা টেনে মোদীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনেদের সম্মান কী ভাবে নষ্ট করেছেন, লজ্জা করে না? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি তো রাজভবনে লাটুসাহেব। সেখানে মেয়েরা ভয়ে যেতে পারছে না। কী প্রধানমন্ত্রী! আপনার কি উচিত ছিল না তাঁকে (রাজ্যপালকে) পদত্যাগ করিয়ে সরিয়ে নেওয়ার। এখনও সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন? সন্দেশ তো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। সন্দেশ হচ্ছে, দেশের খবর কী? মোদী হারছেন, মোদী বিদায় নিচ্ছেন।’’ পরে উলুবেড়িয়ার সভাতেও সন্দেশখালি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে ওরা (বিজেপি) চক্রান্ত করল। ওখানে মা-বোনেরা জানেনও না তাঁদের হাত দিয়ে কী লিখিয়ে নিয়েছে।’’
সন্দেশখালিতেও ধুন্ধুমার
এ দিকে সন্দেশখালি নিয়ে যখন মঞ্চে দুই নেতার বাগ যুদ্ধ চলছে, তখন খাস সন্দেশখালিতে শুরু হয়ে যায় অন্য ‘যুদ্ধ’। প্রথমে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী তথা সন্দেশখালি আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা রেখা পাত্রের নেতৃত্বে সন্দেশখালি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। তার কিছু পরেই সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর সামনে এক তৃণমূল কর্মীকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ওই তৃণমূল কর্মীকে লাঠি দিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। পরে কারণ জানতে চাওয়া হলে আক্রান্তের বক্তব্য, তিনি তৃণমূল করেন, এটাই তাঁর অপরাধ। তৃণমূলের বিধায়ক তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, বিজেপি প্রার্থী রেখা এই সব কাজ করাচ্ছেন।
সন্দেশখালি নিয়ে কমিশনে তৃণমূল
রবিবার আরও একটি ঘটনা ঘটেছে সন্দেশখালি নিয়ে। দু’দিন আগেই তৃণমূল জানিয়েছিল, সন্দেশখালির ঘটনার জন্য জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান রেখা শর্মার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাবে তারা। তৃণমূলের বক্তব্য, রেখা তাঁর পদের অপব্যবহার করে সন্দেশখালির মহিলাদের দিয়ে ভুয়ো অভিযোগ করিয়েছেন। রবিবার এই মর্মেই দিল্লির জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতরে তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন দলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। চিঠিতে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির সঙ্গে ‘যোগসাজশ’-এর অভিযোগের পাশাপাশি তৃণমূল জানিয়েছে, ভোটের সময় জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ করছেন। তাই অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। ওই অভিযোগে রেখার সঙ্গে স্থানীয় বিজেপি নেত্রী পিয়ালী দাসও ‘ষড়যন্ত্র’-এ যুক্ত বলে অভিযোগ করে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy