মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সাধ ছিল হাওড়া সদর লোকসভায় প্রার্থী হওয়ার। প্রার্থিতালিকায় নাম না-দেখে ফোঁস করে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন ঘোষণা করেছিলেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। দুটোর কোনওটা তো হয়ইনি, উল্টে দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত যে বুথে বাবুনের নাম ছিল, সেখানে সোমবার তিনি নিজের ভোটটাও দিতে পারলেন না। বেলা সাড়ে ১২টার সময়ে তিনি বুথে গিয়ে দেখেন, ভোটার তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। কিন্তু নামের পাশে লেখা ‘ডিলিটেড’। অতঃপর ভোট না-দিয়েই বুথ থেকে ফিরতে হয় তাঁকে। যে ঘটনায় মর্মাহত বাবুন। বুথে পৌঁছতেই প্রিসাইডিং অফিসার তাঁকে জানিয়ে দেন, ‘ডিলিটেড’ অর্থাৎ ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে।
ভোট না দিতে পেরে মমতার ভাই বলেন, ‘‘হাওড়ায় নাম তোলার পর এটাই ছিল আমার প্রথম ভোট। কিন্তু তা আমি দিতে পারলাম না। এই ঘটনায় আমি মর্মাহত।’’ বাবুন কাউকে দায়ী করেননি। তবে তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি এক জন বৈধ ভোটার। যবে থেকে তিনি ভোটাধিকার পেয়েছেন, তবে থেকে সব ভোটে তিনি ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এ বারই পারলেন না। বাবুন এ-ও বলেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে জানানোর পাশাপাশি আমি হাওড়া জেলার নেতৃত্ব অরূপ রায় এবং কল্যাণ ঘোষকেও গোটা ঘটনা জানিয়েছি।’’
বছর দেড়েক আগে হাওড়া কর্পোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটে নাম তুলেছিলেন বাবুন। সেটি দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভার অন্তর্গত। সেই সময় থেকেই হাওড়ার তৃণমূলে গুঞ্জন ছিল, বাবুন প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌত্য শুরু করেছেন। কিন্তু তা আর হয়নি। গত ১০ মার্চ ব্রিগেড থেকে হাওড়া সদরের প্রার্থী হিসেবে বিদায়ী সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামই ঘোষণা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বাবুন যা করেন, তাতে আলোড়িত হয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। দেখা যায়, বাবুন দিল্লি চলে গিয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে দেখা করা শুরু করেন। স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল তৈরি হয়, বাবুন কি বিজেপিতে যাচ্ছেন? দিল্লি থেকেই সংবাদমাধ্যমকে বাবুন বলেছিলেন, ‘‘প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষটার প্রতি আমার অ্যালার্জি রয়েছে। মোহনবাগানের এজিএমে ও আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছিল, তা ভুলিনি। তা ছাড়া ওর যোগ্যতা নিয়েও আমার সংশয় রয়েছে। প্রসূনকে প্রার্থী করায় আমার মনে হচ্ছে, যে ক্লাস ফাইভ পাশ করতে পারে না, তাকে দিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করানো হচ্ছে। প্রসূনের থেকে অনেক ভাল ভাল প্রার্থী ছিল। কিন্তু তাদের প্রার্থী না করে ওকে প্রার্থী করা হল। আমার মতে, ওর মতো বাজে লোককে না দেওয়াই উচিত ছিল।’’ বাবুন এ-ও জানিয়েছিলেন, তিনি নির্দল হয়ে লড়বেন।
এ নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে বঙ্গ রাজনীতিতে, সেই সময়ে শিলিগুড়িতে ছিলেন মমতা। দিদি সেখানেই সাংবাদিক বৈঠক করে ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করে দেন। মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।’’ একই সঙ্গে ভাই বাবুনের কাজ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওর অনেক কাজই আমি অনেক দিন ধরে পছন্দ করি না। কিন্তু সব কথা তো বাইরে বলা যায় না। আজ বলছি। আমাদের পরিবারে কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ।’’
মমতার ধমক শোনার পর অবশ্য বাবুন কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, তিনি নির্দল হয়ে ভোটে লড়বেন না। ভোটে লড়েননি বাবুন। বিদ্রোহ থেমে গিয়েছিল তখনই। কিন্তু ভোটটাও দিতে পারলেন না তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy