Advertisement
Back to
Mamata Banerjee on Kartik Maharaj

সভার সময়সূচি বদল করে রামকৃষ্ণ মিশন ‘বিতর্ক’ নিয়ে মোদীর কথার ‘জবাব’ দিতে বিষ্ণুপুর-মঞ্চে মমতা

শনিবার আরামবাগের জনসভায় রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বিশেষ কয়েক জন সাধুর বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক’ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

(বাঁ দিক থেকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কার্তিক মহারাজ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

(বাঁ দিক থেকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কার্তিক মহারাজ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ১৫:৫১
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর আক্রমণের জবাব দিতে নিজের নির্বাচনী প্রচারের সময়সূচি পরিবর্তন করে বিষ্ণুপুরে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার বিষ্ণুপুরের মঞ্চ থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণ’ এবং ‘সন্ন্যাসীদের আক্রমণ’ করার অভিযোগ এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সোমবার দুপুরে সেই বিষ্ণুপুরে গিয়ে মমতা বললেন, ‘‘আমার এখানে মিটিং ছিল না। আমার অন্য মিটিং আছে। আমাকে গালাগালি দিতে এসেছিল...! তাই ২৪ ঘণ্টার নোটিসে আমি এসেছি মিথ্যা কথার জবাব দেওয়ার জন্য।’’

মোদীকে জবাব দেওয়ার পাশাপাশিই মমতা তাঁর ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের ব্যাখ্যাও করেছেন। সে দিনের মতোই বলেছেন, তিনি কোনও প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে কিছু বলেননি। ওই সব প্রতিষ্ঠানের ‘ব্যক্তিবিশেষ’ সম্পর্কে বলেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম বা ইস্কন সম্পর্কে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ ভাবে ‘রাজনীতি’ করার বা রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার কথা বলেননি। বলেছিলেন ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কয়েক জন সাধু-সন্ন্যাসীর কথা। তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন মমতা। সেই বক্তব্যে তিনি অনড়ই থেকেছেন।

ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত শনিবার আরামবাগে মমতার জনসভায়। সেখানে রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কয়েক জন সাধুর বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক’ বক্তব্য পেশ করেন মমতা। বিশেষত, মুর্শিদাবাদের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কার্তিক মহারাজের নাম করে তিনি বলেন, ‘‘ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ‘ডাইরেক্ট পলিটিক্স’ করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। মোদী রবিবার বাংলায় নির্বাচনী প্রচার করতে এসে তাঁর তিনটি সভা থেকেই মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে টেনে আনেন স্বামী বিবেকানন্দের প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ, স্বামী বিবেকানন্দ এবং স্বামী প্রণবানন্দের মতো আধ্যাত্মিক গুরুদের অপমান এই দেশ কখনও সহ্য করবে না।’’

তারই ‘জবাব’ মমতা দিয়েছেন সোমবার— ‘‘ইলেকশনের সময় স্বামী বিবেকানন্দ দেখাতে এসেছে! শুনুন, আমিই স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি বাঁচিয়েছিলাম। বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল। কর্পোরেশনকে দিয়ে কিনিয়েছিলাম। তাই স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি আজও স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িই আছে। চিরকাল থাকবে।’’ সেখানেই না-থেমে মমতা বলতে থাকেন, ‘‘সিস্টার নিবেদিতার বাড়ি কে বাঁচিয়েছিল? আমি বাঁচিয়েছিলাম। সিস্টার নিবেদিতা দার্জিলিংয়ে দেহত্যাগ করেছিলেন। সেই বাড়ি আমি আদায় করেছিলাম। দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের স্কাইওয়াক কে করে দিয়েছে? বেলুড় মঠের এত জেটি কে করে দিয়েছে? যখন যা বলেছিলেন, তাই করে দিয়েছি। জয়রামবাটীতেও কাজ হয়েছে। জয়রামবাটী তো সারদা মায়ের জন্মস্থান। আমি সেখানে এক বার নয়, হাজার বার এসেছি। আপনি (মোদী) ক’বার গিয়েছেন?’’

শনিবার আরামবাগের সভায় মমতা আরও জানিয়েছিলেন, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কারা রাজনৈতিক ‘পক্ষপাতিত্ব’ করছেন, তাঁদের তিনি চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি আইডেন্টিফাই করেছি কে কে করেছেন। আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে কী হেল্প করিনি! সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে, স্বাধিকার নিয়ে... তখন কিন্তু আমি পুরো সমর্থন দিয়েছিলাম। এখন জানতে পারি, দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে। বলে, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধুসন্তেরা এই কাজ? রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই সম্মান করে।... কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না কোনও দিনও। এটা আমি জানি। তা হলে আমি অন্যকে কেন ভোট দিতে বলব?’’

তখনই মমতার ওই বক্তব্য নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নেমেছিল রাজ্য বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘ইমামেরা আবেদন করতে পারেন আর কার্তিক মহারাজ প্রতিবাদ করলে অসুবিধা?’’ রবিবার মোদী বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার এ বার সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে! ইস্কন, স্বামী বিবেকানন্দের বানানো রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সেবা এবং সৎ কাজের কথা গোটা দুনিয়া জানে। আর মুখ্যমন্ত্রী তাদের সঙ্ঘের সন্ন্যাসীদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন! মঞ্চ থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন!’’

সোমবারের জবাবি সভায় মমতার পাল্টা ব্যাখ্যা, ‘‘আমি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে নই। কেন আমি একটা ইনস্টিটিউশনের (প্রতিষ্ঠানের) বিরুদ্ধে হব? আর আমি অসম্মানই বা কেন করব? কয়েক দিন আগেও মহারাজ অসুস্থ ছিলেন। আমি তো তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম।’’ গঙ্গাসাগরের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কথা টেনে এনে মমতা বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অফিস আছে। আশ্রম আছে। ওরা এত ভাল! মানুষের কাজ করে, ওরা সত্যি আমাকে ভালবাসে। সেটা নয়। আমি বলেছি দু’-এক জনের কথা। আমি একটি লোকের নাম করে বলেছিলাম। তাঁর নাম কার্তিক মহারাজ। তিনি আমাদের এজেন্ট বসতে দেননি। ভোটের দু’দিন আগে মুর্শিদাবাদে যে অশান্তি হয়েছিল, তার হোতা ছিলেন উনিই। আমি সেই জন্য বলেছিলাম। এবং বলে যাবও।’’

মমতা তাঁর শনিবারের মন্তব্য নিয়ে ক্ষমা না-চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন বলে জানিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের কার্তিক মহারাজ। সোমবার তাঁর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য একটি আইনি চিঠিও পাঠান মুখ্যমন্ত্রীকে।

মমতা অবশ্য তার পরেও তাঁর আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। বরং আবার কার্তিক মহারাজের নাম করেই বলেছেন, ‘‘উনি আগে অধীর (চৌধুরী) করতেন। এখন বিজেপি করেন। মুর্শিদাবাদের যে জায়গাটায়, রেজিনগরে, দু’দিন আগে দাঙ্গা করেছিল, সেইখানটায় ওঁর আশ্রম। উনি আশ্রম চালান। আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম, ওখানে তৃণমূলের এজেন্ট নেই কেন? তখন আমাকে বলল, ওখানে কার্তিক মহারাজ বলেছে, তৃণমূলের এজেন্টকে আমরা বসতে দেব না।’’ সোমবার বিষ্ণুপুরের মঞ্চ থেকে কার্তিক মহারাজকে চ্যালেঞ্জ করেই মমতা বলেছেন, ‘‘ওখানে কিছু লোককে (উনি) খেপিয়েছেন, যারা ছানার ব্যবসায়ী। খবর আমিও রাখি। এলাকায় এলাকায় গিয়ে ধর্মের নামে আপনি বিজেপি করে বেড়ান। আমি বলছি, আপনি করুন! কিন্তু বিজেপির চিহ্নটা বুকে লাগিয়ে রেখে করুন। লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? আমি যেটা বলি, আমি প্রমাণ ছাড়া বলি না।’’ আত্মপক্ষ সমর্থনে জনতার উদ্দেশে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘‘আমাদের রাজ্য বাংলা। আর সেখানে তৃণমূলের এজেন্ট বসবে না! আর ভোটের দু’দিন আগে দাঙ্গা বাধিয়ে দেবে। তাদের আমি ছেড়ে দেব? আপনারা কী মনে করেন? ছেড়ে দেওয়া উচিত?’’

বিষ্ণুপুরের সভা থেকে মোদীর বিরুদ্ধে বিষ্ণুপুরের কৃষকরদের ফসল ‘নষ্ট’ করার অভিযোগও এনেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কৃষকেরা জানাল, তাদের জমিগুলো নষ্ট করে দিয়ে, তাদের ফসলগুলো নষ্ট করে দিয়ে এই ভাবে মিটিং করে শুধু আমাকে গালাগালি দিতে এসেছিল। তাই মিথ্যা কথার জবাব দেওয়ার জন্য আর কৃষকদের সমর্থনে এই মিটিংয়ে আমি এসেছি। এ-ও বলে দিয়ে যাচ্ছি, আপনাদের যাঁদের যাঁদের ফসল নষ্ট হয়েছে, প্রশাসন দেখে নেবে। যাতে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পান, তার ব্যবস্থাও করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Kartik Maharaj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE