(বাঁ দিক থেকে) ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
তিনি নিজে তৃণমূলের যে পদ ছাড়তে চেয়েছেন, সেই পদ থেকে তাঁকে ‘সরানো হল’ কী ভাবে? প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। বুধবার বিকেলেই একটি বিবৃতি জারি করে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে তৃণমূল অপসারণ করেছে কুণালকে। সেই বিবৃতিতে সই ছিল তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের। কুণাল তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্তের জবাবে ডেরেককে কটাক্ষ করেন ‘কুইজ় মাস্টার’ বলে। কুণাল বলেন, ‘‘আমি কুইজ় মাস্টারকে কুইজ়ের প্রশ্ন করতে চাই, আমি কত তারিখ রিলিফ চেয়েছিলাম। কী করে উনি তার পরেও আমাকে ‘সরানো হল’ জানিয়ে এই রকম প্রেস বিবৃতি দেন?’’
বুধবার বিকেলে তৃণমূলের তরফে কুণালের অপসারণের বিবৃতি প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন কুণাল। তিনি প্রথমেই বলেন, ‘‘প্রথমত, আমি এই ধরনের কোনও কাগজ বা চিঠি পাইনি। আর দ্বিতীয়ত, আমি নিজেই অনেক আগে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে ওই দু’টি পদ সরিয়ে দিয়েছিলাম। নেতৃত্বকেও পদ ছাড়তে চেয়ে আর্জি জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি এই পদের উপযুক্ত নই, তাই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হোক। আর আজ তাঁরা প্রেস বিবৃতি জারি করে জানাচ্ছেন, আমাকে ‘সরানো হয়েছে’! এর অর্থ কী?’’
ঘটনাচক্রে কুণালের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই বুধবার সকালে কুণাল উত্তর কলকাতায় একটি রক্তদান শিবিরে গিয়ে বিজেপির প্রার্থী তথা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের প্রশংসা করেছিলেন। তাঁকে দক্ষ নেতা বলেও সম্বোধন করেছিলেন। তার পরেই তাঁর অপসারণের চিঠি প্রকাশ্যে আসায় কুণালের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তবে কি ওই মন্তব্যই তাঁর অপসারণের কারণ? এই প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্নই ছুড়ে দিয়েছেন কুণাল। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আজ আমি কোথায় ভুল বলেছি? আমার ভিডিয়ো দেখুন। দেখতে পাবেন, আমি আমার দলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উচ্চারণ করেছি। এ-ও বলেছি আমি ওঁর হয়েই কাজ করব। কিন্তু তাপসদার সঙ্গে আমি দীর্ঘ দিন রাজনীতি করেছি। এক দলে ছিলাম। এখন উনি অন্য দলে চলে গিয়েছেন। তাই বলে রক্তদান শিবিরে যদি দেখা হয়, ওঁর সঙ্গে মারামারি করব? আর যদি তা না করি আমার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠবে? কেন বার বার এই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে আমাকে?’’ এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট দ্বিচারিতা রয়েছে— এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন কুণাল। তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘‘যে মিঠুন তৃণমূলের নেত্রীর কুৎসা করেন, সেই মিঠুনকে নিজের পিতা বলে দাবি করছেন দেব। তাঁকে ‘গদ্দার’ বলা হলে আপত্তি তুলছেন। দেব যখন মিঠুনকে সমর্থন করেন, তখন এই কুইজ় মাস্টার
জেগে ওঠেন না? কুইজ় মাস্টারের পিছনে থাকা পরিচালকেরা জেগে ওঠেন না? কেন তখন কোনও প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয় না?’’
কুণালকে প্রশ্ন করা হয়, নেপথ্যে থাকা ‘পরিচালক’ বলতে তিনি কাদের বোঝাতে চাইছেন? জবাবে কুণাল বলেন, ‘‘কারা হবেন? দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বই হবেন। তাঁরা মহানুভব। ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুন।’’
আত্মপক্ষ সমর্থনে কুণাল এ কথাও বলেছেন যে, শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ ছিল না। কিন্তু যে হেতু শুভেন্দু তাঁর নেত্রীকে আক্রমণ করেছেন, তাই তিনিও তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এর পরেই কুণালকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘কুণাল ঘোষের চাকরি গিয়েছে।’’ শুনে কুণালের মন্তব্য, ‘‘দল যখনই আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে, তখন বিরোধীরাই সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হয়েছে। কারণ আমি ওঁদের সমালোচনা করেছিলাম। এখন নেতৃত্ব ঠিক করুক ওঁরা কার মুখে লাগাম পরাতে চান!’’
তবে সাংবাদিক বৈঠকে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও শোনা গিয়েছে কুণালের। তাঁর নামে তৃণমূলের প্রেস বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘এমন তো নয় ওঁদের সঙ্গে আমার কথা হয় না। ওঁরা তো আমাকে ফোন করে এক বার বলতেই পারতেন যে, তুমি যে আর্জি জানিয়েছিলে, তা গ্রহণ করা হল। কিন্তু তা না করে প্রেস বিবৃতি দিয়ে লিখেছেন, আমাকে সরানো হল। তবু এর পরেও আমি বলব, আমি তৃণমূলের এক জন সাধারণ সৈনিক হিসাবে তৃণমূলে আছি, ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থেকে যাওয়ার চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy