বক্তৃতা করছেন কুণাল ঘোষ, পাশে তাপস রায়। —নিজস্ব চিত্র।
ছিল একটি ক্লাবের রক্তদান শিবির। কিন্তু ভোটের মরসুমে সেই অরাজনৈতিক সামাজিক অনুষ্ঠানে পুরোদস্তুর মিশে গেল রাজনীতি। পাশাপাশি বসলেন তৃণমূল ছেড়ে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হওয়া তাপস রায় এবং তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। বিজেপির তাপসকে পাশে বসিয়ে তৃণমূলের কুণাল তৃণমূলের কর্মীদের উদ্দেশেই বার্তা দিলেন, দলের কেউ যেন ছাপ্পা ভোট দেওয়ার চেষ্টা না করেন। শান্ত এলাকায় যেন শান্তিতে ভোট হয়। মানুষই ঠিক করে নেবেন কে তাঁদের পছন্দের প্রার্থী।
বুধবার মে দিবসে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল কলকাতার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ক্লাব। শ্যামসুন্দরতলায় অনুষ্ঠিত সেই কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন কুণাল। কুণাল যখন পৌঁছন তখন মঞ্চে বসে রয়েছেন তাপস এবং উত্তর কলকাতার বিজেপি জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। জানা গিয়েছে, কুণাল পৌঁছনোর আগেই তাপসের বলা হয়ে গিয়েছিল।
বক্তৃতা করতে উঠে কুণাল বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধি তাপস রায়ের সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। উনি যত দিন জনপ্রতিনিধি ছিলেন, তত দিন মানুষকে পরিষেবা দিয়েছেন। দিন-রাত তাঁর দরজা মানুষের জন্য খোলা থাকত। মানুষ যখন তাঁকে ডেকেছেন তখন পেয়েছেন।’’ এর পরে কুণাল এ-ও বলেন, ‘‘আমরা তাপস রায়কে এক পরিবারে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পারিনি। আজকে উনি প্রার্থী। কিন্তু অন্য দলের। আমাদের দলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা আমাদের দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করব। তাপসদার দলের কর্মীরা তাঁর জন্য কাজ করবেন।’’
এখানে থেমে গেলে একটা কথা ছিল। কিন্তু কুণাল থামেননি। তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘এখানে কোনও ছাপ্পা ভোট হবে না। যাঁর ভোট তাঁকে দিতে দিন। মানুষ ঠিক করে নিন, কে প্রকৃত প্রার্থী। যদি কোথাও কোনও ছাপ্পা হয়, জেনে রেখে দেবেন তৃণমূল নেতৃত্বই বারণ করবে, কোনও অবস্থায়, কোনও বুথে মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা ভোটও যেন না পড়ে।’’
কুণাল যখন মঞ্চে মাইক হাতে এ হেন বক্তৃতা করছেন, তখন দেখা যায় বিজেপি নেতা তমোঘ্ন তাপস রায়ের কানে কানে ফিসফিস করে কী যেন বলছেন। তাপসকেও দৃশ্যতই অবাক দেখিয়েছে। বুধবারের রক্তদান শিবিরে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল এবং বিজেপির কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা ছিলেন আড়াআড়ি বিভক্ত। এক দিকে বিজেপি এবং অন্য দিকে তৃণমূল কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মাঝখানে বেশ খানিকটা ফাঁক।
তৃণমূল ছেড়ে তাপস রায়ের বিজেপি-যাত্রার নেপথ্যে এক এবং অদ্বিতীয় কারণ যে সুদীপ, তা বঙ্গ রাজনীতিতে মোটামুটি সর্বজনবিদিত। মে দিবসের সকালে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন একটি মিছিল ডেকেছিল। তাতে আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন উত্তর কলকাতার প্রার্থী সুদীপ। সেখানে তাপস সংক্রান্ত প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘আমার উল্টো দিকে কে প্রার্থী তাঁর খোঁজ রাখি না। আমি প্রতি বার ভোটে লড়ি আগের বারের ব্যবধান ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য। এ বারও তাই করছি।’’
তবে তৃণমূল নেতা কুণালের বক্তব্য শাসকদলের মধ্যে নতুন করে জল্পনা তৈরি করে দিয়েছে। তৃণমূলের অনেক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, কুণাল এক বারও বলেননি সুদীপকে জেতান। ব্যক্তি সুদীপের প্রশংসাও করেননি। উল্টে তাপসের তারিফ করে অনেক শব্দ খরচ করেছেন। ‘প্রকৃত প্রার্থী’ শব্দবন্ধ সেই জল্পনাকে আরও খানিকটা উস্কে দিয়েছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে সুদীপ-বিরোধিতাকে সপ্তমে নিয়ে গিয়েছিলেন কুণাল। এ-ও বলেছিলেন, সুদীপ প্রার্থী হলে উত্তর কলকাতায় বিজেপির দু’জন প্রার্থী হবে। এক জন পদ্মফুলে, এক জন জোড়াফুলে। সেই পর্বে অবশ্য ইতি পড়েছে। এখন আর কুণাল সরাসরি সেই কথা বলছেন না। বরং তাঁর বক্তব্য, দল যখন প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে, তখন সুদীপই তাঁর প্রার্থী। যদিও বুধবারের ঘটনা তৃণমূলের মধ্যে নতুন করে জল্পনার দরজা খুলে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy