বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহা। —ফাইল চিত্র ।
সেটা ২০১৪ সাল। নরেন্দ্র মোদীর প্রতি তাঁর ভক্তি তৈরি হয়েছিল। সে বার ভোটও দিয়েছিলেন মোদীর দল বিজেপিকে। তার পরে মোদীর টানেই রাজনীতিতে পদার্পণ। ২০১৫ সালেই সাঁইথিয়া পুরসভায় বিজেপির হয়ে জিতেছিলেন। এ বার বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের প্রার্থী ‘অখ্যাত’ পিয়া সাহা।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিজেপির প্রথম প্রার্থিতালিকায় যে ২০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের ১৯ জনই রাজনীতি বা অন্য ক্ষেত্রে স্বনামে খ্যাত। কিন্তু পিয়া তা নন। যদিও অনেকের থেকেই তাঁর রাজনৈতিক লড়াই দীর্ঘ। তবু তিনি অচেনাদের দলেই। তাই তাঁর নামটা ‘পিয়া’ না ‘প্রিয়া’, তা নিয়েও শুরুতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। দু’টি নামের অর্থ এক হলেও ‘র’-ফলা নিয়ে বিভ্রান্তির কথা জানালেন পিয়াও। বললেন, ‘‘প্রথম দিন থেকেই আমার নামটা অনেকেই ভুল বলছেন। ভুল লিখছেন। এখনও সেটা চলছে।’’
পিয়া শুধু প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভক্ত নন, বিজেপির গৃহবধূ বিধায়ক চন্দনা বাউড়িও তাঁর খুব পছন্দের। দু’জনের মধ্যে একটা মিলও আছে! একই দল করার চেয়েও বড় কথা, দু’জনেই সাধারণ ঘরের বধূ।
বীরভূমের গৃহবধূ এবং বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী পিয়া বুধবার কলকাতায় এসেছিলেন বারাসতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতে। ফেরার পথে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘যে দিন আমার নাম বোলপুরের প্রার্থী হিসাবে দল ঘোষণা করেছিল, সে দিন খুব অবাক হয়েছিলাম। আমি তো ভাবতেই পারিনি! আর বুধবার আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। যাঁর টানে রাজনীতিতে আসা, সেই মোদীজির মঞ্চেই কিনা আমি বসে!’’
তবে মনে একটা আক্ষেপ নিয়েই সাঁইথিয়ায় ফিরতে হয়েছে পিয়াকে। বলছিলেন, ‘‘মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, কাছে গিয়ে পা ছুঁয়ে একটা প্রণাম করব। কিন্তু সেটা হল না। হাতজোড় করেই প্রণাম জানালাম মোদীজিকে। সেই সময়ে মনে হচ্ছিল, মাত্র দশ বছরে ঈশ্বর আমাকে এমন মঞ্চে নিয়ে এলেন!’’
এক বার পুরসভা নির্বাচনে জিতলেও দু’বার বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছেন পিয়া। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে তিনি বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন সাঁইথিয়া আসন থেকে। প্রথম বার ২৪ হাজারের মতো ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। দ্বিতীয় বার দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ১৫ হাজারের মতো ভোটের ব্যবধানে। এ বার অনেক বড় লড়াই। সাতটা বিধানসভা নিয়ে একটা লোকসভা আসন। পিয়া বললেন, ‘‘এই ভোটে মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবেন। কে প্রার্থী সেটা বড় বিষয় নয়। মোদীজিকে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আনতে মানুষ বদ্ধপরিকর। তাঁকে আর তাঁর কাজ দেখেই মানুষ পদ্ম প্রতীকে ভোট দেবেন।’’
পিয়া অবশ্য একটা সময় পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই ভক্ত ছিলেন। সেটা কলেজ জীবনে। বললেন, ‘‘বিরোধী নেত্রী থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই দেখে সত্যি ভাল লাগত। মানুষটার আন্দোলন দেখে বিস্ময় জাগত। তখন রাজনীতি বুঝতাম না। কিন্তু পরে দেখলাম কেমন সব বদলে গেল।’’ পিয়ার কথায়, ‘‘একের পর এক মহিলা নির্যাতনের ঘটনায় ওঁর বক্তব্য আমি মানতে পারিনি।’’
এখন পুরোপুরি মোদী-ভক্ত পিয়া। সংসার আর রাজনৈতিক কর্মসূচির যতই ‘চাপ’ থাকুক, যোগাসন করা চাই। এর প্রেরণাও ‘মোদীজি’। পিয়ার কথায়, ‘‘ভারতের যোগাসনকে আন্তর্জাতিক পরিচয় দেওয়ার জন্যও মোদীজিকে মনে রাখবে দেশ। এখন ২১ জুন গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন হয়। মোদীজির জন্যই তো হয়েছে। এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না।’’
স্কুলশিক্ষকের কন্যা পিয়া রাজনীতিতে পরে এলেও তাঁর স্বামী মন্টু চৌধুরী অনেক আগে থেকেই বিজেপি করতেন। পিয়ার বাপের বাড়ি সাঁইথিয়া শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। শ্বশুরবাড়ি ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। মন্টুর সঙ্গে পিয়ার পরিচয় সাঁইথিয়া কলেজে সংস্কৃত নিয়ে পড়ার সময়ে। একটা সময় পর্যন্ত চায়ের দোকান চালাতেন মন্টু। এখন সাঁইথিয়াতেই মোবাইল ফোন সারাইয়ের দোকান আছে তাঁর। অর্থাৎ, এক প্রাক্তন চা-ওয়ালার স্ত্রী এ বার আর এক প্রাক্তন চা-ওয়ালা মোদীর দলের প্রার্থী! শুনে হাসলেন পিয়া। তার পরে চলে গেলেন সংসারের কথায়। বললেন, ‘‘বাড়ির কাজে স্বামীও খুব সাহায্য করেন। রান্নাবান্নাতেও হাত লাগান। তাই রাজনীতি করতে পারি। খুব কম বয়সে বিয়ে করেছি। ছেলে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে।’’
একমাত্র পুত্র ‘প্রিন্স’ অবশ্য রাজনীতির ধারকাছ দিয়েও হাঁটেন না। তবে প্রিন্স একটি বিষয়ে মায়ের বরাবরের সঙ্গী। বললেন, ‘‘ক্রিকেট দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। আমার সবচেয়ে প্রিয় বিরাট কোহলি। ভারতের খেলা থাকলে টিভির সামনে ছেলের পাশে বসে পড়ি।’’ রাজনীতি করতে করতেই ছেলেকে বড় করা। সেই সঙ্গে সংসার সামলে চাকরির চেষ্টাও করেছেন। পিয়ার কথায়, ‘‘বাবা যে হেতু স্কুলশিক্ষক ছিলেন তাই আমারও পড়ানোর ইচ্ছা ছিল। বিএড পাশ করার পরে দু’বার এসএসসি দিয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি।’’ যেমন বিধানসভায় যাওয়ার স্বপ্নও সফল হয়নি দু’বারের চেষ্টায়। লোকসভায় যাওয়া সম্ভব হবে? ২০১৯ সালে তো বিজেপি এক লাখেরও বেশি ভোটে হেরেছিল বোলপুরে? প্রশ্ন শুনে ‘রাজনীতিক’ পিয়া বললেন, ‘‘পাঁচ বছর আগেকার বাংলা আর এখনকার বাংলা এক নয়। বীরভূম জেলাও এক নয়। আর প্রথম পাঁচ বছরের তুলনায় মোদীজি শেষ পাঁচ বছরে যা যা করেছেন— করোনা মোকাবিলা থেকে চন্দ্রযান পাঠিয়ে বা অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির স্বপ্ন সফল করে দেশকে যেখানে নিয়ে গিয়েছেন, সেটাও কম কথা নয়। অতীতের সঙ্গে এখনকার তুলনা করা ঠিক হবে না।’’
পিয়া আত্মবিশ্বাসের অনেকটাই জুগিয়েছেন বাঁকুড়ার শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা। গ্রামীণ গৃহবধূর লড়াই পিয়াকে প্রেরণা দেয়। বললেন, ‘‘মোদীজির সভায় আমার পাশেই বসেছিলেন চন্দনাদি। প্রার্থী হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমি ওঁকে খুব করে বলেছি, আমার হয়ে প্রচারে আসতে। উনি কথা দিয়েছেন।’’ পিয়ার ইচ্ছা, ভোটের প্রচারে বোলপুরের মানুষ কোনও এক গাঁয়ের বধূ চন্দনার কথা শুনুক। গণতন্ত্র যাঁকে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে থেকে বিধায়ক বানিয়েছে। যাঁর সঙ্গে তাঁর আত্মার যোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy