মহম্মদ সেলিম। ছবি: ফেসবুক।
মুর্শিদাবাদ লোকসভায় প্রার্থী ছিলেন তিনি নিজে। গত ৭ মে ভোটের দিন দেখা গিয়েছিল ‘ভুয়ো এজেন্ট’কে পাকড়াও করে, তাঁর ঘেঁটি ধরে ঝাঁকিয়ে দিচ্ছেন ৬৬ বছর বয়সি মহম্মদ সেলিম। তখন থেকেই সিপিএমে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘সেলিম মডেল’। শনিবার শেষ দফার ভোটে একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে সিপিএম প্রার্থীরা ‘রণংদেহি’ মেজাজে।
ভোটে কী হবে পরের কথা। সে সব না ভেবে বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের সঙ্গে উত্তপ্ত বিতণ্ডার পরে প্রতিপক্ষের কলার ধরেছেন। আটকাতে এলে আর এক তৃণমূল কর্মীকেও অন্য হাতে পাকড়ে নিয়েছেন। তার পরে কিছু ঘুষি অবশ্য নিজেও খেয়েছেন। কিন্তু ময়দান ছাড়েননি। ডায়মন্ড হারবারের মতো তৃণমূলের গড়ে ‘ভুয়ো এজেন্ট’কে তাড়া করে বুথছাড়া করেছেন তরুণ সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর রহমান। বারুইপুর থেকে বাঘাযতীন ছুটে বেড়িয়েছেন সৃজন ভট্টাচার্য। দক্ষিণ কলকাতার মতো আসনেও সায়রা শাহ হালিম সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন।
সবই কি সেই ‘সেলিম মডেল’?
খানিকটা রেওয়াজ ভেঙেই লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম। যা বঙ্গ সিপিএমে নজিরবিহীন। আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে সেলিম বলেছিলেন, ‘নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন’-এর কোনও জায়গা নেই। অর্থাৎ, মাঠে নেমেই খেলতে হবে। তিনি খেলেছিলেন মুর্শিদাবাদের মাঠে। বাকি জায়গায় কারা কেমন খেললেন? শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে তন্ময়, সৃজন, সায়রা, দমদমে সুজন চক্রবর্তী, বসিরহাটে নিরাপদ সর্দার— সকলেরই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম। স্থানীয় স্তরে প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরাও রাস্তায় নেমে কাজ করেছেন বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। তবে সেলিম ‘সেরা’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন এক জনকেই। তিনি প্রতীক-উর রহমান। কেন? সেলিমের ব্যাখ্যা, ‘‘ডায়মন্ড হারবারের মতো সন্ত্রস্ত এলাকায় ওই কাজ করাটা কঠিন।’’
শনিবার সকালে প্রতীক-উর খবর পান, ডায়মন্ড হারবারের আটকৃষ্ণপুর প্রাথমিক স্কুলের ২৭১ নম্বর বুথে সিপিএম এজেন্টের পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বসে রয়েছেন। সেখানে পৌঁছে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন প্রতীক-উর। আসল এজেন্টকে সামনে দাঁড় করাতেই ওই ব্যক্তি বুথ থেকে বেরিয়ে দৌড়তে থাকেন। অভিযোগ, তিনি স্থানীয় তৃণমূল কর্মী। ঘটনাচক্রে, বুথ ছেড়ে সেই ব্যক্তির ছুটে পালানোর ভিডিয়োটি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়। সেই পোস্ট ধরে সেলিম আবার লেখেন, ‘ভুয়ো এজেন্টকে প্রতীক-উর রহমান যে ভাবে ধাওয়া করেছেন, তা প্রশংসনীয়। তবে বিজেপি আজকে ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর এবং দক্ষিণ কলকাতা থেকে উবে গিয়েছে।’
তন্ময়-সহ প্রার্থীদের মেজাজ নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন অবশ্য বলেন, ‘‘এই হার্মাদগিরির জন্যই সিপিএম ক্ষমতা থেকে চলে গিয়েছে! এখন তারা শূন্য হয়েছে। ফের পুরনো মেজাজ দেখানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। এ বার মহশূন্যের দিকে যাওয়ার পালা।’’
মুর্শিদাবাদের মাঠে সেলিমের ওই ভূমিকার পরে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন অনেক জেলা স্তরের সিপিএম নেতা। কারণ, রাজ্য সম্পাদক করতে পারলে তাঁরা যদি না পারেন, তা হলে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠবে। এ বছরেই সিপিএমের সাংগঠনিক স্তরে সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু। কমিটিতে থাকতে গেলে লোকসভার কাজকর্ম ‘সূচক’ হবে সেখানে। তবে সিপিএমের অনেক নেতা এ-ও মেনে নিয়েছিলেন যে, সর্বত্র ‘প্রতিরোধ’ গড়া যাবে না। কারণ, সেই সাংগঠনিক জোর সর্বত্র নেই। আলিমুদ্দিনও বিলক্ষণ সে কথা জানে। তাই রাজ্য সিপিএমও এ বার ১০-১২টি আসনকে ‘অগ্রাধিকার’-এর তালিকায় রেখেছিল। সে সব কেন্দ্রে নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণ দেখা গিয়েছে প্রার্থিতালিকায়। সব মিলিয়ে অগ্রাধিকারের আসনে দলের লড়াইয়ে খুশি আলিমুদ্দিন। ভোটও বাড়বে বলে দাবি করেছেন নেতারা।
কিন্তু খাতা কি খুলবে? জবাব মিলবে মঙ্গলবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy