সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) বিজেপির কত জন নেতা আবেদন করেছেন? এমনই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে বিঁধলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার রানাঘাটের দত্তফুলিয়া ইউনিয়ন অ্যাকাডেমি ফর গালর্স স্কুলের মাঠে প্রথম থেকেই বিজেপিকে তুলোধনা করেন তিনি।
অভিষেক বলেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সিএএ-র ঘোষণা করেছিল বিজেপি। মতুয়া, নমশূদ্র, উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পাঁচ বছর আগে পাশ হওয়া বিল নিয়ে নিয়মাবলি ঠিক লোকসভা নির্বাচনের আগেই ঠিক করার নেপথ্যে বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অসমে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম উঠেছে, যার মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি রয়েছেন। তাঁদের বন্দিশিবিরে পাঠানো হয় যাঁর নেতৃত্বে, তাঁকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। যাঁরা প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক নির্বাচন করেন ভোট দিয়ে, তাঁদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে কেন? বিজেপির কত জন নেতা সিএএ-তে আবেদন করেছেন?’’
আরও পড়ুন:
সিএএ নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আপনারা সকলেই দেশের নাগরিক। তর্কের খাতিরে যদি নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি মেনেও নিই, তা হলে সাত দিনের মধ্যে নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানাক যে সিএএ-র পর এনআরসি হবে না, তা হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সিএএ-কে সমর্থন করবে। এরা শুধু মিথ্যা বলে, ভাঁওতা দেয় মানুষকে, ঠকিয়ে বেড়ায়, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। বিজেপির পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত দু’নম্বরি।’’ অভিযোগের সুরে তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচনের ঠিক মুখে যে সিএএ কার্যকর করেছে বিজেপি, তার আবেদনপত্রটিই ৪০ পাতার। সেখানে আগে আবেদনকারীকে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি অথবা আফগান বলে ঘোষণা করতে হবে। এর পর তাঁর আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হবে। সরকারি পরিষেবা মেলে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে, বন্ধ হয়ে যাবে তা-ও। এর পর এনআরসি করে সকলকে বার করে দেওয়া হবে।’’
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, সিএএ কার্যকর করার দাবি মতুয়া তথা উদ্বাস্তু সংগঠনগুলির দীর্ঘ দিনের। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমে লোকসভা ও পরে রাজ্যসভায় পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। ২০২৪ সালের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই সিএএ আইনের রুলস তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, সিএএ-তে নাগরিত্বের আবেদন করলেই বেনাগরিক করে দেওয়া হবে। বেনাগরিক করার পর এনআরসি-র আওতায় এনে দেশ থেকে বার করে দেওয়া হবে। কিন্তু বিজেপির দাবি, এই আইনে কাউকেই বেনাগরিক করা হবে না। নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন কার্যকর করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভায় বেশ প্রভাব রয়েছে মতুয়াদের। সেই মতুয়াদের ওপর ভর করেই গত বার লোকসভা নির্বাচনে এই দু’টি আসন জিতেছিল বিজেপি। সেই দু’টি আসন ফিরে পেতেই জোরদার প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল। রানাঘাটের তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর সমর্থনে প্রচারে গিয়ে সিএএ নিয়ে বিজেপিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলেন অভিষেক।