প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়ছে কংগ্রেস। সর্বত্রই কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের সেই সমমঝোতার প্রার্থীদের হয়ে কাজ করতে হবে বলে এ বার স্পষ্ট বার্তা দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যাঁরা অন্য রকম করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশিই তিনি জানিয়ে রেখেছেন, তাঁর নিজের কেন্দ্রে লড়াইয়ের ব্যস্ততার মধ্যে সময় বার করে বাম ও কংগ্রেসের যৌথ প্রার্থীদের জন্য যথাসম্ভব প্রচারে যাবেন।
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ও শাখা সংগঠনের নেতৃত্বের একাংশ সিপিএম প্রার্থীদের সমর্থনে ময়দানে নামতে দলের কর্মীদের নিষেধ করছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, এআইসিসি বা প্রদেশ কংগ্রেস এই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি। যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী আছে, সেখানে সিপিএমের সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রচারে নামতে এই অংশের আপত্তি নেই। কিন্তু যেখানে সিপিএম নেই, সেখানে বেসুরে গাইছিল দলের ওই অংশ। এমনকি, বীরভূমে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদের সঙ্গে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রেও দলের একাংশ সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ এসেছে। এই প্রশ্নে সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং এআইসিসি-র ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর সাফ বলেছেন, ‘‘যারা সহযোগিতা করবে না বলে হুমকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল দ্বিধা করবে না। আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি, বীরভূমে মিল্টনের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।’’ মুর্শিদাবাদ জেলায় সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের জন্য যৌথ ভাবেই কাজে নেমেছেন দু’দলের নেতা-কর্মীরা। অধীর জানিয়েছেন, তিনি মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের হয়ে প্রচারে যাবেন। প্রদেশ সভাপতির মন্তব্য, ‘‘প্রচারে যাব তো বটেই। আমরা না বললে কর্মীরা তো নামত না। আমরা কি নাটক করতে জোট করেছি? যেখানে যেখানে সুযোগ পাব, প্রচারে ( (জোট-প্রার্থীদের সমর্থনে) একশো বার যাব!’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কড়া হুঁশিয়ারির দিনই বীরভূম জেলায় ৭ নেতাকে দলের যাবতীয় পদ থেকে ৬ বছরের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। বীরভূম জেলা কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, বিজেপির সঙ্গে ‘গোপন সম্পর্ক রেখে দল-বিরোধী চক্রান্তে’র অভিযোগে ওই নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। সিপিএম বা বাম প্রার্থীরা যে সব কেন্দ্রে লড়ছেন, সেখানে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের প্রচারে না যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি, প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রীর মতো কেউ কেউ। তাঁদের ক্ষেত্রে দলের অবস্থান কী হবে, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। বীরভূমের দৃষ্টান্ত দিয়ে অধীর কড়া বার্তা দেওয়ার পরে ‘বেসুরো’দের কেউ কেউ আবার বলতে শুরু করেছেন, প্রদেশ সভাপতির সিদ্ধান্তই শিরোধার্য! তবে অন্য অনেক রাজ্যের মতো জোট বা আসন সমঝোতার স্পষ্ট ঘোষণা বাংলার ক্ষেত্রে এআইসিসি কেন করছে না, সেই প্রশ্ন দলের অন্দরে থাকছে। কংগ্রেসেরই একাংশের ব্যাখ্যা, কেরলে বামেদের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ের সমীকরণ মাথায় রেখে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল বাংলার জন্য ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র কৌশল নিয়ে চলার বার্তা দলে দিয়ে রেখেছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট বার্তা না দেখে রাজ্যে কংগ্রেসের একাংশ ‘বিক্ষুব্ধ’ হয়ে উঠেছেন। লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে দলের প্রার্থী থাকলে আসনের ‘শ্রেণি’ অনুযায়ী এআইসিসি-র তহবিল বরাদ্দ হয়। সে দিক থেকে যত আসনে প্রার্থী, তত তহবিল— কংগ্রেসের একাংশের কাছে এই অঙ্ক বরাবরই প্রাসঙ্গিক। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট নীতি বা কৌশল ঠিক করে দিলে তখন সেটা মান্য করে চলার একটা ‘দায়’ থাকে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, আরও গোটাতিনেক আসনে রফার বিষয়ে সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তার পরে দিল্লি থেকে ওই আসনগুলির প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হবে। আর বাম সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফিরে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় এ দিন দেখা করতে গিয়েছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে। পুরুলিয়ার দাবি ছাড়তে নারাজ ফ ব। বিমানবাবু তাদের বার্তা দিয়েছেন, ফ ব-র ভাগের আসন ছাড়া অন্য কোনও কেন্দ্র নিয়ে তারা যেন মাথা না ঘামায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy