নরেন্দ্র মোদীর খাস তালুকে বসে নরেন্দ্র মোদীর ছকে নরেন্দ্র মোদীকেই ক্ষমতাচ্যুত করার প্রস্তুতি!
খাতায়-কলমে সাবরমতীর তীরে মঙ্গলবার থেকে শুরু কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনের ‘থিম’ হয়তো—‘ন্যায় পথ: সঙ্কল্প, সমর্পণ, সংঘর্ষ’। তবে বাস্তবে রাহুল মোদীকে হারাতে মোদীর পথেই হাঁটতে চাইছেন। আমদাবাদের অধিবেশনে তার ঢাকে কাঠি পড়বে।
আমদাবাদে চল্লিশ ডিগ্রির দাবদাহের মধ্যে সোমবার হাজির হয়ে যাওয়া কংগ্রেসের নেতাদের কৌতূহলের প্রধান বিষয় একটাই—প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা নামে ওয়েনাড়ের নতুন সাংসদকে কি দলের নির্বাচন পরিচালন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হবে? তিন বছর আগে উদয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরে এই নির্বাচন পরিচালন দফতর তৈরির সিদ্ধান্ত হলেও এখনও তা দিনের আলো দেখেনি। প্রিয়ঙ্কার হাত ধরেই তার পথ চলা শুরু হবে?
রাহুল মনে করছেন, ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে হলে তার আগে ২০২৭-এর নরেন্দ্র মোদীর কর্মভূমি গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানো প্রয়োজন। আর তার জন্য মোদী-শাহের বিজেপির মতোই কংগ্রেসকেও বুথ স্তর থেকে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। ভোটার তালিকাকে হাতিয়ার করে নির্বাচনের লড়াইয়ে নামতে হবে। যে ভাবে বিজেপি ভোটার তালিকার এক-একটি পৃষ্ঠার দায়িত্ব এক-এক জন ‘পান্না প্রমুখ’-কে দিয়ে নির্বাচনের ময়দানে নামে। রাজনীতির ৬৪ খোপের দাবা খেলায় তাই ৬৪ বছর পরে গুজরাতে কংগ্রেসের অধিবেশন। ১৯৬১ সালে মহাত্মা গান্ধী, সর্দার পটেলের গুজরাতে শেষবার কংগ্রেসের অধিবেশন বসেছিল।
গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কিছুটা অক্সিজেনের সন্ধান পেয়েছিল। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার বিধানসভা ভোটের হারের পরে সেই দমবন্ধ অবস্থা। রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে টের পেয়েছেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে লোকসভা ভোটে শ’খানেক আসন মিলতে পারে। কিন্তু বিকল্প জোট সরকার গড়তে হলে কংগ্রেসকে নিজেকে দেড়শো থেকে দু’শো আসন পেতে হবে। তার জন্য জেলা স্তরে সংগঠন মজবুত করতে হবে। এ বছর বিহার বিধানসভা নির্বাচন ছাড়া আর কোনও ভোট নেই। তাই কংগ্রেস চলতি বছরে সংগঠনে সঞ্জীবনীর ছোঁয়া দিতে চায়।
সেই লক্ষ্যে সাবরমতীর তীর থেকে রাহুল স্রোতের উল্টো পথে হাঁটতে চাইছেন। ১৯২১ সালে
এই আমদাবাদেই কংগ্রেসের সমস্ত ক্ষমতা মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর হাতে ন্যস্ত হয়েছিল। তারপরে জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী থেকে সনিয়া গান্ধী পর্যন্ত কংগ্রেসের ‘হাইকমান্ড’-এর কাছেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। রাহুল জেলা কংগ্রেস সভাপতির হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চাইছেন। রাহুল, মল্লিকার্জুন ইতিমধ্যেই ৮৬২ জন জেলা কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সরাসরি জেলা নেতৃত্বের কাছে প্রার্থী বাছাইয়ে তাঁদের মত চাইবেন। ঠিক যেন নরেন্দ্র মোদীর ‘পিএম টু ডিএম’ বা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের মডেল। আমদাবাদে তাতে সিলমোহর পড়বে। কিছু দিন যাবৎ জেলা সভাপতিদের ভোটে প্রার্থী না করার প্রস্তাবও রয়েছে।
মঙ্গলবার আমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল মেমোরিয়ালে কংগ্রেসের বর্ধিত ওয়ার্কিং কমিটির ১৬৯ জন সদস্যের বৈঠক। বুধবার দেশের প্রায় দু’হাজার কংগ্রেস নেতানেত্রীকে নিয়ে এআইসিসি-র অধিবেশন। রণদীপ সুরজেওয়ালার নেতৃত্বে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক প্রস্তাব তৈরির চূড়ান্ত কাজ চলছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, মোদী-ভূমে এআইসিসি অধিবেশনে গুজরাত নিয়েও বিশেষ প্রস্তাব গৃহীত হতে পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)