প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে এআইসিসি পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মির। বিধান ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।
ঘোষণা করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখল কংগ্রেস। ওই কেন্দ্রে আগেই সিপিআই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল বামফ্রন্ট। রাজ্যে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতার জট কাটাতে এই সিদ্ধান্তের দিনই দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের আঁচ এসে পড়ল প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনে। দলের মধ্যে কোনও আলোচনার প্রক্রিয়া ছাড়াই কী ভাবে বামেদের সঙ্গে আসন-রফা হয়ে যাচ্ছে, এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মিরের সামনে সেই প্রশ্ন তুললেন একাধিক কংগ্রেস নেতা। এমনকি, প্রদেশ ও জেলা নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে আসন-রফার প্রক্রিয়া চালানোর অভিযোগে দলেরই কিছু নেতার হাতে নিগ্রহের মুখে পড়তে হল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির রাজনৈতিক সচিবকে!
বিধান ভবনে সোমবার কংগ্রেসের বৈঠক ছিল নাটকীয়তায় মোড়া। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বহরমপুরে প্রচারে ব্যস্ত থাকায় কলকাতায় বৈঠকে আসেননি। ঘাটালে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ায় সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অসন্তোষ জানিয়ে রেখেছিলেন এআইসিসি-র কাছে। সেই বার্তা নিয়ে এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক মির এবং সহ-পর্যবেক্ষক বি পি সিংহ বিধান ভবনে এসে দেখেন, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে কংগ্রেসেরই এক দল নেতা-কর্মী চলে এসেছেন ঘাটালের ঘোষিত দলীয় প্রার্থীর সম্পর্কে ক্ষোভ জানাতে! তার পরে বৈঠকে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর অভিযোগ শোনেন মির। পরের দফার বৈঠকে বসার আগেই তিনি ঘোষণা করেন, ঘাটালে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আলোচনার ভিত্তিতেই আসন সমঝোতা হচ্ছে। ঘাটাল নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। ওই কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষক গিয়ে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন।’’ কংগ্রেসের ঘোষিত আসন ছাড়াও আরও কিছু কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার দাবি রয়েছে জেলা সভাপতিদের একাংশের। সেই প্রসঙ্গে মির অবশ্য বলেছেন, ‘‘শক্তি যাচাই করেই প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছার জন্য কংগ্রেসকে প্রার্থী দিতে হবে, এমন দল কংগ্রেস নয়। কংগ্রেস সংগঠনগত ভাবে যেখানে শক্তিশালী, সেখানেই প্রার্থী দেওয়া হবে।’’
অন্য দিকে, ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ায় মুর্শিদাবাদ জেলার সিপিএমের একাংশে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর অবশ্য বিষয়টিকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ। বহরমপুরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা হয়েছে, উপর থেকে হয়েছে। স্থানীয় ভাবে কে কী বলছে, জানা নেই।’’ সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যেরও বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েতে এই এলাকায় কংগ্রেসের ফল ভাল হয়েছে। তার উপরে মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে আমরা যখন লড়াই করছি, সেখানে একটা বিধানসভায় কংগ্রেসের প্রার্থী থাকলে সমঝোতার রসায়ন ভাল হবে। বাস্তবোচিত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টা দেখা উচিত। সে ক্ষেত্রে বরানগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিতে পারি।’’ সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটি লোকসভা আসন চাইছে কংগ্রেস। সেই দাবি নিয়ে ভাবছে সিপিএমও।
তবে প্রদেশ সভাপতি কিছু গায়ে মাখতে না চাইলেও দলের অন্দরের ক্ষোভ থেকে রেহাই পাননি তাঁর রাজনৈতিক সচিব তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সাংগঠনিক বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিলয় প্রামাণিক। সূত্রের খবর, বিধান ভবনে এ দিন তাঁকে পেয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক সম্পাদক মানস সরকার সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, দলে প্রদীপ ভট্টাচার্য, শুভঙ্কর সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তী, প্রশান্ত দত্তের মতো নেতারা আগে বামেদের সঙ্গে আলোচনা করতে যেতেন। এখন তাঁদের সবাইকে বাদ দিয়ে নিলয় কেন আসনের তালিকা নিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে যাচ্ছেন? ক্ষুব্ধ মানসের প্রশ্ন ছিল, তিনি কি দলটা বিক্রি করে দিয়েছেন সিপিএমের কাছে? আরও কয়েক জন ক্ষুব্ধ জেলা সভাপতিও সেখানে ছিলেন। ধস্তাধস্তি বাধে নিলয়কে ঘিরে। কংগ্রেসল সূত্রের খবর, সমাজ মাধ্যমে ‘মির জ়াফর’কে উল্লেখ করে তাঁর একটি পোস্টকে ঘিরেও বিতর্ক বেধেছে, ক্ষুব্ধ হয়েছেন পর্যবেক্ষক মির। যদিও পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় মিরের গাড়িতেই বিধান ভবন ছাড়তে দেখা গিয়ছে নিলয়কে।
মানস পরে বলেছেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্বার্থে কিছু করিনি। প্রদেশ কংগ্রেসের কাজকর্ম যে ভাবে চলছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। তার জন্য শাস্তির মুখে পড়তে হলেও ভয় পাওয়ার ছেলে নই!’’ আর নিলয়ের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের পরম্পরাই এই রকম, প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। প্রথম যখন আলোচনা হয়েছিল, জেলা সভাপতিদের বক্তব্য থেকে উঠে এসেছিল, কংগ্রেস গোটা ১২ আসনে লড়তে পারলে ভাল হয়। এখনও পর্যন্ত ১২টা আসনে প্রার্থী দেওা হয়েছে, হয়তো মোট ১৪টা আসনে আমরা লড়ব। সবাইকে সেখানে জায়গা দেওয়া কী ভাবে সম্ভব?’’
এরই মধ্যে জটিলতা বাড়িয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় এ দিন ঘোষণা করেছেন, বামফ্রন্ট সমর্থন না করলেও পুরুলিয়া আসনে তাঁরা লড়বেনই। তাঁর সংযোজন, ‘‘পরিস্থিতির প্রয়োজন হলে আরও কিছু আসনে আমরা প্রার্থী দিতে পারি! তবে কোথাও সেটা বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে প্রার্থী হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy