অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ছবি: পিটিআই।
মন্দির-মসজিদ বিতর্কের পরে এ বার লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ‘নজর’ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে)। বুধবার ঝাড়খণ্ডের রামগড়ে বিজেপির সভায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪০০ আসনে জিতলেই পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করে ভারতে যুক্ত করা হবে।’’
সেই সঙ্গে রামগড়ের ওই সভায় হিমন্তের আরও মন্তব্য, ‘‘লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ৪০০ আসনে জেতানো প্রয়োজন। তা হলে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হবে।’’ প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের প্রচারে ধারাবাহিক ভাবে নানা চমকপ্রদ দাবি করে চলেছেন হিমন্ত। সোমবার সকালেই দিল্লিতে বিজেপির সভায় তিনি বলেন, ‘‘গত বার লোকসভা ভোটে আমরা ৩০০ আসন জিতে অযোধ্যায় রামমন্দির বানিয়েছি। এ বার ৪০০ আসনে জিতে বিজেপি বারাণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুরায় কৃষ্ণ জন্মভূমিতে মন্দির বানাবে।’’
ঘটনাচক্রে, চলতি মাসের গোড়া থেকেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরাবাদ-সহ সামাহনি, সেহানসা, মিরপুর, রাওয়ালকোট, হাত্তিয়ান বালা, খুইরাট্টা, তত্তপানির মতো এলাকায় ইসলামাবাদ বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। চড়া রাজস্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের অসন্তোষ অনেক দিন ধরেই জমা হচ্ছিল। সূত্রের দাবি, ওই অঞ্চলে উৎপন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে পাকিস্তানের অন্যান্য শহরে। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা প্রতিবাদে পথে নামেন। খোলাখুলি পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীদের উপর পাক পুলিশ ও আধাসেনা গুলি চালালে কয়েক জনের মৃত্যুও হয়।
তার আগে গত ১০ মে ওড়িশার মলকানগিরিতে বিজেপির প্রচারে গিয়ে হিমন্ত বলেছিলেন, ‘‘মানুষ প্রশ্ন তুলছে, আমরা কেন ৪০০টি লোকসভা আসনে জিততে চাইছি? আপনাদের উচিত ৪০০ লোকসভা আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত করা। কারণ, কংগ্রেস অযোধ্যার রাম জন্মভূমিতে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।’’ ঘটনাচক্রে অযোধ্যার মতোই বারণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুয়ার শাহি ইদগাহের জমি বিতর্কও আদালতের দরজায় পৌঁছেছে। বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করে হিমন্ত আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি বারাণসী এবং মথুরায় হিন্দুদের মন্দির ভেঙে মোগল সম্রাট অওরঙ্গজ়েবের নির্দেশে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৬৬৯ সালের ২ নভেম্বর মন্দির ভেঙে অওরঙ্গজ়েব জ্ঞানবাপী মসজিদ নির্মাণের ফরমান দিয়েছিলেন বলে আদালতে দাবি করেছে হিন্দুপক্ষ। সেই ফরমান সংক্রান্ত শিলালিপির সন্ধান ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সমীক্ষায় মিলেছে বলেও তাদের দাবি।
সম্প্রতি, বারাণসী জেলা আদালত হিন্দুপক্ষকে জ্ঞানবাপীর ব্যাস কি তহখানায় পূজার্চনার অনুমতি দিয়েছে। ইলাহাবাদ হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশ বহাল রেখেছে। অন্য দিকে, মথুরার প্রাচীন কাটরা স্তূপ (যা কাটরা কেশবদাস নামে পরিচিত) এলাকায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে শাহি ইদগাহ মসজিদ। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ইদগাহের ওই জমিতে কৃষ্ণের জন্মস্থানে ছিল প্রাচীন কেশবদাস মন্দির। কাশীর ‘আসল বিশ্বনাথ মন্দিরের’ মতোই মথুরার মন্দিরটিও ধ্বংস করেছিলেন অওরঙ্গজেব।
অভিযোগ, তাঁর নির্দেশে ১৬৬৯ থেকে ১৬৭০ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল মসজিদটি। কাটরা কেশবদাস মন্দিরের ১৩.৩৭ একর জমিতে। সেই জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদও এখন ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারাধীন। লোকসভা ভোটপর্ব চলাকালীন হিমন্ত সেই প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে কৌশলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ উস্কে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy