ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে উদ্ধারের অপেক্ষায় উপত্যকায় আটক পর্যটেরা। ছবি: এএফপি।
রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ তাঁর প্রশাসন। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন ধরে এমন অভিযোগ তুলছিলেন বিরোধীরা। রাজ্যের পরিস্থিতিকে সঙ্কটজনক আখ্যা দিয়ে বুধবার ওমর বিরোধীদের সেই অভিযোগকে নস্যাৎ করে দিলেন। তিনি বলেন, “ভয়ানক এই বিপর্যয়ের দিনে দুর্গতদের ক্ষোভের বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু পরিস্থিতি তো কারও হাতে নেই!” গোটা রাজ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনী স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণকার্য চালাচ্ছে। ওমরের দাবি, গত ১০৯ বছরে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি রাজ্য।
গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি, ধস এবং বন্যার কারণে উপত্যকা জুড়ে প্রায় ২০০ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর। প্রায় চার লাখ মানুষ এখনও জলের তলায়। সেনা, বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনীর পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে উদ্ধার কাজে লাগানো হয়েছে। ওমর এ দিন বলেন, “অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। জল এতটা উঁচুতে উঠতে পারে! জীবনে কখনও দেখিনি। রাজ্যবাসী এমন পরিস্থিতির জন্য কোনও ভাবেই তৈরি ছিল না। আমাদের সাধ্যমতো উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ চালানো হচ্ছে।”
কিন্তু মানুষ তো ক্ষুব্ধ! বিরোধীদের অন্তত তেমনটাই দাবি। একটি ত্রাণ শিবিরে এক কংগ্রেস নেতাকে হেনস্থাও করা হয়। এ কথা শোনার পর এ দিন ওমর বলেন, “এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ হওয়ার বিষয়টা আমি বুঝি। ওঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।” এমনকী, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সমন্বয়ে কোথাও কোনও গাফিলতি নেই বলেও তিনি দাবি করেন। তাঁর কথায়, “আমি সব সময় সেনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তবে সমস্যা একটাই সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনও বাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।” রাজ্য জুড়ে টেলিফোন পরিষেবা বিপর্যস্ত। বিএসএনএল যদিও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি উড়িয়ে নিয়ে এসে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী টেলিফোন এক্সচেঞ্জ তৈরি করা চেষ্টা শুরু করেছে মঙ্গলবার থেকে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে উপত্যকার যোগাযোগ কার্যত বন্ধ বলে এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী তাঁর মন্ত্রিসভার ৯০ শতাংশ সদস্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন তো বটেই বন্যায় ধসে গিয়েছে উপত্যকার ইন্টারনেট পরিষেবাও।
উপত্যকা জুড়ে প্রায় ১ হাজার সেনা জওয়ান পরিবার-সহ এখনও জলমগ্ন অবস্থায় আটকে রয়েছেন বলে এ দিন এক সেনা আধিকারিক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “দক্ষিণ কাশ্মীর এবং শ্রীনগর এলাকায় বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে আমাদের প্রায় ১ হাজার কর্মী আটকে পড়েছেন। জল নেই, খাবারও নেই। তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। খাবার পাঠানোরও ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” সেনা সূত্রে খবর, মধ্য এবং দক্ষিণ কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সেনাবাহিনীর প্রায় ২০টি ছোটবড় ক্যাম্প আছে। সে সমস্ত ক্যাম্পই আপাতত জলের তলায়। জম্মু-কাশ্মীরের সেনা সদর দফতর বাদামিবাগ ক্যান্টনমেন্ট থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর বন্যায় আটকে পড়া প্রায় ১৪০০ সেনা জওয়ানকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। তাদের মধ্যে ১২০টি শিশুও ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy