Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

গুলি ও গোলমালের অভিযোগে উত্তপ্ত আসানসোল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ১৭:০৮
Share: Save:

গোলমালের আশঙ্কা ছিলই বিরোধীদের। ভোটের দিন সেই আশঙ্কাই সত্যি হল আসানসোলে। প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ, ভোটারদের বুথে ঢুকতে বাধা, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, শাসক দলের প্রার্থীর নেতৃত্বে বুথ দখল, তৃণমূল কর্মীকে গুলি— বুধবার দিনভর এমনই নানা ঘটনার অভিযোগে উত্তপ্ত হল আসানসোলের ভোট।

এ দিন দুপুরে কুলটির যশাইদি গ্রামে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরুদ্ধে বুথ দখলের পাশাপাশি তৃণমূল কর্মীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ তোলেন এলাকার বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতৃত্বে এলাকায় বুথ দখলের ঘটনা ঘটে। তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী সেই সময় ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন রামু চক্রবর্তী নামে মধ্য তিরিশের এক যুবক। উজ্জ্বলবাবুর অভিযোগ, এই ঘটনার বেশ কিছু সময় পর ওই বুথ লাগোয়া একটি মাঠে তিন-চার জন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন রামু। তখনই বাইকে করে বেশ কয়েক জন যুবক এসে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এর পরই রামুর পায়ে গুলি চালায় ওই দুষ্কৃতীরা। এরা প্রত্যেকেই ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্য বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন বিধায়ক। আহত যুবককে কুলটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেলেই তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। ফরওয়ার্ড ব্লক যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বুধবার সকালে আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কে তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্রের একটি বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অটোগ্রাফ দেওয়ার অছিলায় ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন। বাবুলের যদিও দাবি, তাঁর বাড়ির সামনের একটি বুথে সকালবেলা ভোট প্রক্রিয়া দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন ভোটারের সঙ্গে আসা তাঁদের বাচ্চারা তাঁর কাছে অটোগ্রাফ চাওয়ায় তিনি তা দিচ্ছিলেন। তখনই কয়েক জন এসে তাঁকে বুথ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।

বচসা বাড়তে না-দিয়ে ওই বুথ থেকে বেরিয়ে আসেন বাবুল। এর পরই পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি। জানান, খাসকেন্দা, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, চুরুলিয়া এবং রাধানগরের বেশ কয়েকটি বুথ দখল করেছে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। বেলা ১০টা নাগাদ এই সব অভিযোগ নিয়ে তিনি আসানসোলের এডিএম অফিসে পৌঁছন। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে অভিযোগ লিখিত ভাবে জমা দেন তিনি। জেলাশাসক বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এর পাশাপাশি বাবুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সৌমিত্র মোহন। তাঁর কথায়, “এক জন ম্যাজিস্ট্রেট-সহ তিন জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী এবং এক জন ভিডিওগ্রাফার সব সময় বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে থাকবেন।” এর আগে বাবুলের সঙ্গে এক জন মাত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকতেন।

পাণ্ডবেশ্বরে ভোট দিতে যাওয়ার পথে সিপিএম সমর্থক এক পরিবারের চার সদস্যকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার গোগলা গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩৮ নম্বর বুথে স্ত্রী, শ্যালিকা এবং শাশুড়িকে নিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা মোহন বাদ্যকর। বুথের কাছাকাছি চলে এলে চার-পাঁচ জন তাঁদের পথ আটকে বেধড়ক মারধর করে। মোহনবাবুর শ্যালিকা মণ্ডা বাদ্যকর এক জন প্রতিবন্ধী। তাঁকে হুইল চেয়ার থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তাঁদের চিৎকারে পুলিশ দৌড়ে আসায় আক্রমণকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশি সহযোগিতায় মোহনবাবুরা ভোট দেন। পরে তাঁদের চিকিৎসার জন্য লাউদোহা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়, ওই পরিবার তাদের সমর্থক। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই তাঁদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বাদ্যকর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গোবিন্দ বাদ্যকর এবং বাঁদিরাম বাদ্যকর নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও এঁদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত ভাবে কিছু জানায়নি।

জামুড়িয়ার ১৩টি বুথ থেকে বিরোধীদের এজেন্টকে ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে তিনটি বুথে ভোটারদেরও বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। জামুড়িয়া কমিউনিটি হলের ৭৮, ৭৯ এবং ৮০ নম্বর বুথে এই ঘটনা ঘটে। বুথ দখলের এই অভিযোগে জড়িয়ে যায় আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের নামও। অভিযোগ, তাঁর উপস্থিতিতে তৃণমূলের কর্মীরা ভোটারদের জানিয়ে দেয়, হয় শাসকদলের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে, নচেৎ বেরিয়ে যেতে হবে বুথ থেকে। বিরোধী দলের এজেন্টদেরও এই সময় বের করে দেওয়া হয়। যদিও ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোট হয়েছে এই তিনটি বুথে। সিপিএমের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে দোলা সেন বলেন, “আমি প্রার্থী হিসেবে ওখানে যাই। এই ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। সবটাই মিথ্যা অভিযোগ। আসলে হার নিশ্চিত জেনে বিরোধীরা এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

asansol loksabha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE