চাকরি থাকার আশায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন প্রায় ১২৮ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে। একটাই আশা ছিল, যদি দিদি অসুস্থ স্বামীর চাকরির কোনও সুরাহা করে দেন। তবে বৈঠকের পর ফিরতে হয়েছে ‘হতাশা’ নিয়ে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর চাকরিহারাদের একাংশের সঙ্গে সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। জানিয়েছেন, আগে যোগ্যদের সমস্যার সমাধান করবেন। তার পর যাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, তাঁদের বিষয়টিও তিনি দেখবেন। বৈঠকের শেষে কাঁদতে কাঁদতে হুইচেয়ারে বসা স্বামীকে নিয়ে বেরোন রুপালি ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘আমার পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামীর চাকরি যাতে বহাল থাকে সে জন্য অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম দিদির কাছে। কী আশা, কী ভরসা দিলেন তা তো বোঝাই গেল না। সুরাহা না মিললে আমাদের সপরিবারের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’
খড়্গপুরের প্রেম বাজারের কাছে স্বামী সরোজ ভুঁইয়া, ছেলে সাগ্নিক ভুঁইয়াকে নিয়ে বাস রুপালির। স্বামী ২০১৬-এ শিক্ষাকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন খড়্গপুরের কড়িয়াশোল হাইস্কুলে। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ভালই যাচ্ছিল বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী সরোজের সংসার। হঠাৎ বিপদ দেখা দিল সংসারে। ২০২৪-এ হাইকোর্টের তরফে যখন প্রথম জানানো হয় ২০১৬-র নিয়োগ প্যানেলে থাকা প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরিই বাতিল করা হবে, তখনই বড় ধাক্কা পান সরোজ। স্ত্রী জানিয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশের পর থেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগতেন তাঁর স্বামী। ওই বছরই ২১ অগস্ট স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। হঠাৎই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। চিকিৎসকের পরামর্শের পর জানা যায় সরোজ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। ‘‘সেই থেকে তার ডান দিক সম্পূর্ণরূপে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইসিস)। তার পর থেকে হাত-পা কিছুই সে ভাবে চালাতে পারেন না। মুখে কথাও বলতে পারেন না আর। হুইলচেয়ারই বেশির ভাগ সময় কাটে সরোজের।’’
আরও পড়ুন:
যদিও হাই কোর্টের ওই মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলে যাওয়ার দরুণ কোনও মতে কাজ করতে পারছিলেন সরোজ। ছেলে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বায়োটেকনোলজি নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্য দিকে স্বামীর অসুস্থতার কারণে মাসে ওষুধের খরচ প্রায় ১৬ হাজার, ফিজিয়োথেরাপিতে দিতে হয় ৯ হাজার টাকা। তাঁর বেতনের টাকাতেই চিকিৎসা-ছেলের পড়াশোনা-সংসার খরচ মিটছিল। কিন্তু এখন! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের তালিকায় রয়েছে তাঁর নামও। চাকরি না থাকলে আগামী দিনগুলি কী ভাবে কাটবে! সেই দুশ্চিন্তাতেই কাটছে খড়্গপুরের ভুঁইয়া পরিবারের দিন।
উল্লেখ্য, এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। এই চাকরিহারাদের একাংশের সঙ্গে সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠক করেন মমতা। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসেরা। মমতার সামনে মঞ্চে উঠে আট দফা দাবি পড়ে শোনান চাকরিচ্যুতদের প্রতিনিধিরা। নিজেদের অবস্থান জানিয়ে রাজ্য সরকারের সাহায্য চান। কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি বাতিল হতে দেবেন না, সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে। যদি আদালতে সমস্যার সমাধান না-হয়, আইন মেনেই তিনি ‘যোগ্য’দের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবেন। আপাতত স্কুলগুলিতে চাকরিহারাদের স্বেচ্ছা পরিষেবা (ভলান্টারি সার্ভিস) চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।