টেট পরীক্ষা। প্রতীকী ছবি।
আজ আমরা আসন্ন প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় বাংলা ভাষার পেডাগগি বিষয়ে আলোচনা করব। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত প্রশ্নপত্র দেখে আশা করা যাচ্ছে এই বছর বাংলা ভাষার বিষয় ভিত্তিক প্রশ্নের সঙ্গে বাংলা ভাষার পেডাগগি বিষয় থেকেও সমপরিমাণ প্রশ্ন আসবে। আর এই কারণেই প্রাথমিক টেটে বাংলা ভাষার পেডাগগি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলা ভাষার পেডাগগি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে একটু সহজ করে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি যে, পেডাগগি আসলে ঠিক কী? সহজ কথায় বলতে গেলে শিখনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সমবেত প্রচেষ্টার মধ্যে মুখবন্ধ স্থাপন করাই হল পেডাগগি। ঠিক একই ভাবে বাংলা ভাষা শিখনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সমবেত প্রচেষ্টার মুখবন্ধ স্থাপন করাই হল বাংলা ভাষার পেডাগগি। আরও সহজ করে বললে, শ্রেণিকক্ষে বাংলা ভাষা শিখনের সময় ভাষা শিক্ষকেরও কিছু গুণ থাকতে হয় সেই বিষয়টাই এখানে যাচাই করে নেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হল এই অংশটি থেকে নির্ভুল উত্তর করার জন্য আমাদের কৌশল ঠিক কী হওয়া উচিত?
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার পেডাগগির জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে অধ্যায়গুলি রয়েছে যেমন— ভাষা শিখন ও আয়ত্তিকরণ, ভাষা শিক্ষণের মূলনীতি, প্রারম্ভিক স্তরে মাতৃভাষা শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ভাষা শিক্ষাদানের পদ্ধতি, শিশুর ভাষা শিক্ষণ দক্ষতা (শোনা, বলা, পড়া, লেখা), ব্যাকরণ শিক্ষাদানের বিভিন্ন পদ্ধতি, শিক্ষা সহায়ক উপকরণ এই অধ্যায়গুলি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।
বাংলা ভাষার পেডাগগি থেকে প্রশ্ন ৩ রকমের হতে পারে — ১) থিয়োরি ভিত্তিক প্রশ্ন (থিওরি বেসড) ২) ধারণা ভিত্তিক প্রশ্ন (কনসেপ্টুয়াল বেসড) ৩) ব্যবহারিক জ্ঞান ভিত্তিক প্রশ্ন (প্র্যাক্টিক্যাল নলেজ বেসড) থিয়োরি ভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে ভাষা বা ভাষা শিখন ও আয়ত্তিকরণ সম্পর্কে কে কী মন্তব্য করেছেন? এই ধরনের । আবার ধারণাগত প্রশ্নের ক্ষেত্রে শিক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতির উপযোগিতা বা অনুপযোগিতা আর ব্যবহারিক জ্ঞান ভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের বিভিন্ন পদ্ধতি নির্বাচন বা শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ইত্যাদি। আগেই বলেছি একজন ভাষা শিক্ষকের কিছু জ্ঞান থাকতে হবে। তিনি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় যে কৌশলগুলি অবলম্বন করবেন প্রশ্ন সেখান থেকে আসবে। তাই গুণ ও কৌশলের ব্যাপারে সম্যক ধারণা পরীক্ষার্থীকে রাখতেই হবে। অনেক সময় আমরা দেখতে পাই প্রশ্ন সঠিকভাবে পড়ে না বোঝার জন্য সহজ উত্তরও ভুল হয়ে যায় আর বাংলা ভাষার পেডাগগির ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা প্রবল হয়। আবার দেখা যায়, যে প্রশ্নটি করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে যে বিকল্প উত্তরগুলি দেওয়া হয়েছে সবগুলিকেই সঠিক বলে মনে হয় সেক্ষেত্রে প্রশ্নটি খুব ভালোভাবে বুঝে গুরুত্ব বিচার করে সঠিক উত্তর নির্বাচন করতে হবে।
ধরে নেওয়া যাক প্রশ্ন এসেছে- “প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্য নয় যেটি”—৪টি বিকল্প দেওয়া হল — ক) অপরের কথা শুনে বুঝতে না পারা খ) স্পষ্ট, সুন্দর ও দ্রুত হস্তাক্ষরে লিখতে পারা গ) উৎকৃষ্ট সাহিত্য, মনীষীদের জীবনী পাঠের মাধ্যমে মহৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ঘ) উপরের সবগুলিই সঠিক – এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশ্নে যেহেতু ‘উদ্দেশ্য নয় যেটি’ বলেছে তাই সঠিক উত্তর হবে (ক) অর্থাৎ অপরের কথা শুনে বুঝতে না পারা কারণ অপরে কে কী বলছে সেটি সঠিকভাবে বোঝাও মাতৃভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্য। আবার কেউ যদি একটু অমনোযোগী হয়ে উত্তর করার চেষ্টা করে তা হলে (ঘ) বিকল্পটি উত্তর করে আশার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আবার কখনও কখনও দেখা যায় কোনও কোনও প্রশ্নের সঠিক উত্তর নির্বাচনে ৪টি বিকল্পই সঠিক মনে হয় যেমন একটি নমুনা রাখি। প্রশ্ন করা হয়েছে— “একটি পাঠ্য পড়ার সময় নিচের কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?” — ক) প্রতিটি বিরাম চিহ্ন সঠিক ব্যবহার করা খ) দ্রুত পড়া গ) সঠিক উচ্চারণের সঙ্গে পড়া ঘ) একটি পাঠ্যের অর্থ বোঝা — যদি একটু খেয়াল করি দেখব ৪টি বিকল্পই সঠিক বলে মনে হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু প্রশ্নে বলা হয়েছে ‘কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ তাই উত্তর করতে হবে (ঘ) অর্থাৎ একটি পাঠ্যের অর্থ বোঝা। কারণ যদি শিক্ষার্থী পাঠ্যের অর্থই না বোঝে তাহলে সে পঠনের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। সুতরাং বাকি বিকল্পগুলিও গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু পাঠ্যের অর্থ বোঝাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে প্রাথমিক টেটের হবু শিক্ষকদের প্রতি বলব—বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। প্রত্যেকেরই লক্ষ্য থাকে বাংলা বিষয় থেকে পুরো নম্বর তুলে নেওয়া। অবশ্য এটা লক্ষ্য হওয়াই উচিত। তাই বাংলা ভাষার পেডাগগি থেকে পুরো নম্বর তুলতে দরকার – গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেকটি অধ্যায়ের উপর স্বচ্ছ ধারণা যেটা প্রথমেই আলোচনা করেছি। দরকার অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দিয়ে পড়া সেই সঙ্গে বিকল্পগুলিও। দরকার নিজের উপর বিশ্বাস আর দরকার নিজের ভিতর সুপ্ত যে শিক্ষক সুলভ গুণ বা কৌশল রয়েছে তার জাগরণ। তোমাদের কঠোর পরিশ্রম আর কৌশলই আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে, সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হয়ে উঠবে গোটা সমাজ। রাইস এডুকেশন তোমাদের সঙ্গে আছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘রাইস এডুকেশন’-এর পক্ষ থেকে টেট পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সংকলিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy