টেটের জন্য পরিবেশবিদ্যা বিষয়ের প্রস্তুতি। প্রতীকী ছবি।
প্রিয় ছাত্র ও ছাত্রীরা, প্রাইমারি টেট পরীক্ষা আসন্ন। আশা রাখি, তোমাদের প্রস্তুতি একদম তুঙ্গে এবং প্রতিদিন সবাই জোরকদমে নিজেদের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছ। বিভিন্ন বিষয় পড়তে, জানতে বা মনে রাখতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলেও ধরে রাখি দীর্ঘদিন পরে হতে যাওয়া এই পরীক্ষার এক অদ্ভুত উদ্দীপনা তোমাদের প্রস্তুতি নেওয়ার তাড়নাকে এগিয়ে দিয়েছে আরও এক কদম।
দেখ, এই টেট পরীক্ষা এমনই একটি পরীক্ষা যেটির জন্য বসতে চলেছে প্রায় লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী। সকলের পড়াশোনার ব্যাকগ্রাউন্ডও সমান নয়। কেউ বা সায়েন্স, কেউ কমার্স বা কেউ হয়ত আর্টস থেকে। তাই মেধার এই বৈচিত্র্যের এবং তারতম্যের কারণে প্রতিযোগিতা যে খুব ভাল মানের হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রস্তুতি নিতে নিতে তোমাদের মাথায় ভিড় করছে নানা ধরনের প্রশ্ন এবং সেগুলো ভেবে কেউ হয়ত কখনও কখনও হতাশাও বোধ করছ। তাই তোমাদের মনে তৈরি হওয়া সেই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে আজ কিছু কথা লিখি। দেখ, এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি এমনই যেখানে একটা ছোট ভুলের জন্য অনেক মাসুল গুনতে হয়। তাই নিজেদেরকে একদম যতটা সম্ভব পারফেক্ট করে পরীক্ষার হলে পৌঁছানোই শ্রেয়।
আজকে তোমাদের সঙ্গ এই শেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যে বিষয় নিয়ে কথা বলব তা হল পরিবেশবিদ্যা এবং তার পেডাগজি। দেখ এই পরিবেশবিদ্যা বিষয়টির পরিধি অনেক। বিভিন্ন বিষয় তথা ইতিহাস, ভূগোল, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত সবকিছুর সাথেই এর একটা নিবিড় সংযোগ রয়েছে। তাই বিষয়টিকে আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায় আমাদের কাছে। পর্ষদ দ্বারা প্রকাশিত সিলেবাসের আগে আমাদের এই বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা ছিল একরকম। কিন্তু নতুন সিলেবাস আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের গতানুগতিক ধারণা বদলে ফেলতে হয়েছে অনেকটাই। কিছু সাধারণ বিষয়ের সঙ্গে বেধে দেওয়া হয়েছে বিষয়ের পেডাগজি এবং সেগুলি থেকে সমমানের প্রশ্ন আসার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে এই পেডাগজি বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের উন্মাদনা তুঙ্গে। সেই ব্যাপারেই আজ তোমাদের কয়েকটা পরামর্শ দিয়ে রাখি।
দেখ, তোমরা নিশ্চয়ই জানো পরিবেশবিদ্যা বিষয়টির সিলেবাসকে দু’টি ভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি হল সাবজেক্টিভ কনটেন্ট এবং অন্যটি হল পেডাগজি । দুটি অংশ থেকেই আলাদা আলাদা ভাবে ১৫ টি করে প্রশ্ন আসবে। একটা কথা বলতেই হয় পরিবেশবিদ্যার এই অংশটি কিন্তু প্রতিযোগিতায় অনেক অনেক বেশি এগিয়ে রাখার কাজ করবে যদি কেউ যত্ন নিয়ে বিষয়টি পড়াশোনা করে। অনেক পরীক্ষার্থীর কাছে বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি বা অংকের মতো বিষয়গুলিতে কিছু দুর্বলতা থাকে। সেই দিক থেকে পরিবেশবিদ্যার পাঠ তুলনামূলক ভাবে সহজ এবং তথ্যনির্ভর। চেষ্টা করলে আসন্ন ৩০টি প্রশ্নের মধ্যে ২৫-২৭টি সঠিক করে আসতেই পারবে ছাত্রছাত্রীরা। প্রশ্নের মান সহজ এবং মাধ্যমিক স্তরের হবে এবিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা ভরসা রাখতেই পারে।
হাতে আর একদমই বেশি সময় নেই, তাই এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বলব সবার প্রথমে তাদের যে জায়গাগুলি একটু দুর্বল সেই জায়গাগুলির প্রতি একটু গুরুত্ব আরোপ করতে। দিনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে সেই চ্যাপ্টারগুলির থিওরিটিক্যাল বিষয়গুলিকে ভালো ভাবে দেখে নিয়ে তার থেকে যতগুলো সম্ভব মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন প্র্যাক্টিস করে নিতে পারলে ভালো হয়। তা হলে চ্যাপ্টারটি থেকে কিরকম প্রশ্ন আসবে সে বিষয়ে তারা সঙ্গে সঙ্গেই ধারণা করে নিতে পারবে। এইভাবে অনায়াসে তারা আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে তাদের দুর্বল জায়গাগুলিকে কাটিয়ে উঠতে পারে। প্রয়োজনে পড়ার সময় পাশে একটা নোটবুকে কঠিন বিষয়গুলি থেকে মেইন মেইন পয়েন্টগুলিকে লিখে রাখা যেতে পারে। এতে তাদের পরীক্ষার আগের দু-দিন চোখ বুলিয়ে নিতেও সুবিধা হবে।
এই ভাবে দুর্বল জায়গাগুলিকে একটু পোক্ত করে দুই থেকে তিনবার পরীক্ষার আগে তারা যা পড়েছে সেগুলিকে সম্পূর্ণ দেখে নেওয়ার প্ল্যান করে ফেলতে হবে। এবার এই ফাইনাল রিভিশন প্ল্যানিং ছাত্রছাত্রীরা করবে তাদের মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী। যেমন কেউ এমনভাবে ভাবলেন যে আমি আজকে পরিবেশবিদ্যার কনটেন্ট নিয়ে যা পড়েছি তা রিভিশন করে ফেলব পরের দিনের জন্য পেডাগজি বিষয়টি রাখলাম। কেউ আবার এমনও ভাবতে পারেন আজ কন্টেন্ট এবং পেডাগজি দুটি বিষয় থেকেই প্রথম ৫ বা ৬টি চ্যাপ্টার দেখে নেব পরের দিন বাকিটা। আর প্রতিটা চ্যাপ্টার রিভিশন এর শেষে ন্যূনতম ১০০টি করে প্রশ্ন দেখে নিতে পারলে ভাল হয়।
এই ক্ষেত্রে বলব যেহেতু নতুন সিলেবাস সম্পূর্ণভাবেই এন.সি.ই.আর.টি এবং সিটেট পরীক্ষার প্যাটার্নকেন্দ্রিক তাই এই সিটেট পরীক্ষার বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন দেখে নিতে পারলে খুব ভাল হয়। এছাড়াও তারা বিভিন্ন যে মক এক্সামগুলি দিয়েছে এত দিন সেগুলিও একবার চর্চা করে নিতে হবে। সব চ্যাপ্টারই গুরুত্বপূর্ণ তাই সাজেশনভিত্তিকভাবে পড়ে গেলে সাফল্যের মুখ দেখতে অনেক বেগ পেতে হবে।
তবুও বলে রাখি যে কন্টেন্ট থেকে যে চ্যাপ্টারগুলিকে গুরুত্ব দেবে বেশি করে তা হল — পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের ভৌগোলিক পরিবেশ, পরিবেশের ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনা, বিভিন্ন ইভেন্ট, কোন আইন কবে এসেছে, পরিবেশ দূষণ, উদ্ভিদজগৎ, প্রাণীজগৎ, জীববৈচিত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য। অন্য দিকে পেডাগগি থেকে দেখবে পরিবেশ শিক্ষণের নীতিসমূহ, লেসন প্ল্যান ডিজাইন, ডেটা কালেকশন, প্র্যাকটিক্যাল কাজ, শিক্ষাদানের বিভিন্ন পদ্ধতি, শিক্ষাদানের উপকরণ, অবিরত এবং বোধগম্য মূল্যায়ন বা সি সি ই, পরিবেশ শিক্ষাদানের সমস্যা, এবং তথ্য ও যোগাযোগ পদ্ধতি বা আইসিটি।
তাহলে ছাত্রছাত্রীরা বুঝতেই পারলে আশা করি কী ভাবে এই মুহূর্তে অভ্যাস করবে বিষয়গুলিকে।
যাই হোক, সব শেষে একটাই কথা বলব, “প্র্যাকটিস মেকস্ এ ম্যান পারফেক্ট”। তাই যত বেশি করে পড়বে বা দেখবে বিষয়গুলি ততই ভাল। আত্মতুষ্টিতে ভোগবার কোনও জায়গা নিজের মধ্যে আসতে না দেওয়াই শ্রেয়। সবার জন্য শুভকামনা রইল। পরীক্ষা ভালই হবে এই আশা রাখি।
এই প্রতিবেদনটি ‘রাইস এডুকেশন’-এর পক্ষ থেকে টেট পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সংকলিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy