প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘চেনা ছকেই আশ্রয়’ (২০-৩) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। বামপন্থীরা ও আরএসএস একে অপরের ঘোর বিরোধী। পরাধীন ভারতে একটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসাবে আরএসএস-এর আত্মপ্রকাশ। উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ও মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা। আরএসএস-এর রাজনৈতিক দল এক সময় ছিল জনসঙ্ঘ, এখন ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপির উত্থান, বিস্তার এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শাসন ক্ষমতা কায়েম করার পিছনে আরএসএস-এর অসামান্য কৃতিত্ব ও অবদান আছে। তাই বিজেপি এই সংগঠনের নীতি ও আদর্শ মেনে চলে। এ জন্য বিজেপি জনগণের চোখে একটি চরম হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল, যার মূল উদ্দেশ্য ‘হিন্দি, হিন্দু ও হিন্দুস্থান’। অন্য দিকে বামেরা পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দল যারা ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে চায় না।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রাজনৈতিক ভাবে ভীষণ সচেতন। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে এই রাজ্যের মানুষ এক কালে অন্তত অনেক সহনশীল ছিলেন। বামেদের শাসনকালে আরএসএস এখানে মাথা গলাতে পারেনি। তবে, তৃণমূলের তুমুল বিরোধিতা ও দাপটে বামেরা আজ শূন্য। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। এখন আরএসএস বিজেপিকে পুষ্টি দিতে আসরে অবতীর্ণ। মূল লক্ষ্য কিন্তু একটাই, হয় শাসন-ক্ষমতায় বিজেপি আসবে নয়তো তৃণমূল থাকবে। কিন্তু কোনও প্রকারে বামেদের মাথা তুলতে দেওয়া যাবে না। বামেদের ঝুলি শূন্যই থাকবে। দুর্নীতির মূলাধার তৃণমূলকে সরানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আগ্ৰহী কিন্তু বিকল্প হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে বিজেপি। তাই বহু মানুষ মন্দের ভাল তৃণমূলকে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বামেদের তরুণ প্রজন্ম বহু সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মিছিল-মিটিংয়ে মানুষের সাড়া মিলছে। কিন্তু এখনও গ্ৰাম-বাংলার মানুষ তৃণমূলের অনুদানের মোহে আচ্ছন্ন। গ্ৰামের মানুষের হৃদয় দুয়ারে পৌঁছতে হলে বামেদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
একটি অনুরোধ
প্রেমাংশু চৌধুরীর লেখা ‘চেনা ছকেই আশ্রয়’-এর আলোচনা যথাযথ। আর এক বছর পরেই এ রাজ্যে ভোট। শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। তাদের সংগঠন এ রাজ্যে মোটেই মজবুত নয়। একমাত্র মোদী-মুখ ভরসা। আরএসএস যদি নিঃশব্দ প্রচার চালিয়ে কিছু করতে পারে, তা হলেই বিজেপি লড়াই চালাতে পারবে, নতুবা নয়। আরএসএস হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী সন্দেহ নেই, তবে তাদের অন্য রকম কিছু প্রচার কৌশল থাকে যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাদের নিবিড় প্রচারে এ বার বাংলায় বিজেপি ভাল ফল করলেও করতে পারে।
তবে এ রাজ্যে মমতার কৌশল হল ত্রিমুখী। প্রথমত হরির লুটের মতো অনুদান বিলি, দ্বিতীয়ত মুসলিম ভোট মুঠোয় রাখা আর তৃতীয়ত, সিপিএমের ভোট কাটা যাওয়ার সুবিধা। দুর্নীতি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সে ভাবে সমস্যা তৈরি করতে পারে না। সিপিএম নিজে শূন্য ঠিকই, তবে ভোট কেটে এ বার লোকসভায় বেশ কিছু আসন তৃণমূলকে বেশি পাইয়ে দিয়েছে। তাই সিপিএম নেতৃত্বকে অনুরোধ করতে ইচ্ছে হয়, সত্যিই যদি তাঁরা এ রাজ্যে তৃণমূলকে উৎখাত করতে চান তবে সামনের বিধানসভা ভোটে না-ই বা লড়লেন। নিজেরা ভোটে না লড়ে অন্য দল, যারা লড়াই দিতে পারে, পরোক্ষে তাদের সাহায্য করে দেখুন। এর ফলে পরে হয়তো আবার তাঁদের দলের সুসময় আসতে পারে।
অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
নেতার সন্ধান
প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘চেনা ছকেই আশ্রয়’ শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। আবার একটি বিধানসভা নির্বাচনের মুখোমুখি পশ্চিমবঙ্গের জনগণ। সিপিএমের পালে যে হাওয়া একেবারেই নেই, রাজনীতি অসচেতন মানুষও এই তথ্য জানেন। তবুও সুষুপ্তি ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। বাকি থাকে কংগ্রেস। তাদের কথা যত কম বলা যায়, তত ভাল। অতএব এ বারের বিধানসভা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরাসরি দু’টি রাজনৈতিক দলকেই সম্মুখসমরে দেখব আমরা সবাই।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে পর্যুদস্ত হওয়ার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিশ্চয়ই বহু আলাপ-আলোচনা, বিচার বিশ্লেষণ চলেছে। হারের কারণগুলিও তাঁরা নিশ্চয়ই চিহ্নিত করেছেন এবং এ বারের নির্বাচনে গত বারের ত্রুটি যতটা পারা যায় মেরামত করার চেষ্টাতেই তাঁরা মনোনিবেশ করবেন। তবে দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সরকারি ত্রুটি-বিচ্যুতির বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির চেয়ে বেশি সাফল্য আনতে সক্ষম হয়েছে। এ কথাটাই কিন্তু ভাবতে ভুলে গিয়েছেন শীর্ষ স্তরের বিজেপি নেতারা। বারবার মুখ পরিবর্তন করেও আজ পর্যন্ত নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কাউকে তুলে আনতে পারেনি বিজেপি। তা ছাড়া যে কোনও রাজ্যেরই প্রধান পদে তারা সঙ্ঘের মানুষের উপরে আস্থা রাখে। মাননীয় বিরোধী দলনেতা সুর যতই চড়ান না কেন, তাঁকে কিন্তু সঙ্ঘ মূল নেতা করবে না। শেষ পর্যন্ত দিলীপবাবু বা সুকান্তবাবুদের মতো মানুষকেই তারা সমর্থন করবে। এই বিষয়টি তাঁর মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন, তত মঙ্গল।
সম্প্রতি দিল্লির নির্বাচনে আপ পর্যুদস্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিজেপি যে কৌশলগুলির সাহায্যে দিল্লির রাজপথে নেমেছিল, তার অধিকাংশেই ছিল সাধারণ নাগরিকদের আগের সুযোগ-সুবিধাগুলিকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। আমাদের এই রাজ্যে যে সব প্রকল্প চালু রয়েছে এবং তার সুবিধাভোগীর সংখ্যা যে ভাবে বেড়েছে, তাতে খুব সহজে এই উপকৃতদের ভোটে ভাগ বসানোর উপায় নেই।
পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু মানুষের বিশ্বাস অর্জনটুকুই শেষ কথা। সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন কি কোনও বিজেপি নেতা?
রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি
বিভ্রান্তি নেই
সন্দীপন চক্রবর্তীর ‘পার্শ্ব-শিক্ষকদের নিয়ে নয়া ভাবনা, চর্চায় চাকরিহারারা’ (৯-৪) প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “...রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকে ফাইল পাঠানো হয়েছে অর্থ দফতরের কাছে। বিকাশ ভবনের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পার্শ্ব-শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর জন্য। তাঁরা এখন মাসে প্রায় ১৩ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। সেই বেতন তিন গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব আপাতত অর্থ দফতরের বিবেচনাধীন।” এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, পার্শ্ব-শিক্ষকগণের বেতন বৃদ্ধির কোনও প্রস্তাব সমগ্র শিক্ষা মিশন অথবা বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগ থেকে অর্থ দফতরের কাছে পেশ করা হয়নি। সংবাদে যে মন্তব্য করা হয়েছে তার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।
এই সংবাদে আরও উল্লেখ আছে, “...চাকরিহারাদের মধ্যে থেকে কয়েক দফায় পার্শ্ব-শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হতে পারে...।” প্রতিবেদনের এই অংশটিও অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর।
শুভ্র চক্রবর্তী, অধিকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশন
প্রতিবেদকের উত্তর:
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়নি। সরকারের নানা স্তরে আলোচনা ও মত বিনিময়ের যে প্রক্রিয়া চলেছে, তার কথা জানানো হয়েছে। গোটা ভাবনা-চিন্তার সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ার যোগসূত্রের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে। একাধিক বিষয়ের উপরে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নির্ভরশীল বলেই সরকারি আধিকারিকেরা কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি, সে কথাও উল্লেখ করা আছে। ‘বিভ্রান্তি’র কোনও অভিপ্রায় বা অবকাশ এখানে ছিল না।