পরিবেশের সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্য প্রকৃতিকে রক্ষা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে দৈনন্দিন কার্যকলাপের ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। এই সব নিয়ে নিজস্ব ভাবনা প্রকাশ করল কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা। তাঁদের কাছে পরিবেশবান্ধব এবং সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিল দি এশিয়াটিক সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিফর্ম অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসআরআর)।
এই বিষয়ে দি এশিয়াটিক সোসাইটির প্রশাসক লেফটেন্যান্ট কর্নেল অনন্ত সিন্হা জানিয়েছেন, স্কুল পড়ুয়াদের জন্য বিষয়ভিত্তিক আলোচনার সুযোগ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। এতে তারা সবরকম ভাবে সমৃদ্ধ হবে। আইআইএসআরআর-এর অধিকর্তা অসিতকুমার দাস পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেন, কেন সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে তাদের ওয়াকিবহাল হওয়া প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ারি বক্তব্য পেশ করেন টারটু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যাক হোলব্রুক এবং অধ্যাপক সুধাকর সি অগরকার। নিজস্ব চিত্র।
এই বিশেষ কর্মশালায় যোগদান করতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪০টিরও বেশি স্কুলের পড়ুয়া উপস্থিত ছিল। ইউনিসেফ-এর ১৭টি ‘সাস্টেনেবল গোল’-এর আওতায় পড়ে, এমন কিছু উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়ে তারা বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রাথমিক প্রস্তাবনা রাখে। পরবর্তীকালে সেই প্রস্তাবনাকে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে কী ভাবে বাস্তবায়িত করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে নিজস্ব মতামত পেশ করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকেরা।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির ঋদ্ধিমান দে এবং দশম শ্রেণির মনোমিতা কাণুর বক্তব্য উঠে আসে আর্থিক এবং সামাজিক স্তরে সমান অধিকারের প্রাসঙ্গিকতা। স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক দেবাশিস দত্তের কথায়, ‘‘ওদের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা দরকার, তা বুঝিয়ে দিয়েছি মাত্র। বাকিটা ওরা নিজেরাই সাজিয়ে নিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘স্কুলস্তরে এই বিষয়গুলি নিয়ে চর্চা শুরু করায় ভবিষ্যতে ওরাই উপকৃত হবে।’’

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়, পেডিয়াট্রিক সার্জেন এবং লেখক সুদর্শন সেন। নিজস্ব চিত্র।
যোধপুর পার্ক এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় জল সমস্যা সমাধানের ভাবনা বাস্তবায়িত করতে চায় যোধপুর পার্ক বয়েজ়ের পড়ুয়ারা। এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানিয়েছেন, যুগোপযোগী বিষয় নিয়ে পড়ুয়াদের চর্চা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই সুযোগের কারণ স্থানীয় এলাকার সমস্যা সম্পর্কে যেমন ওরা ওয়াকিবহাল হবে, তেমনই এর সমাধান করার মতো দক্ষতাও অর্জন করতে পারবে।
চড়ুই পাখির জন্য বাসা বানিয়ে দেওয়া কিংবা সাইকেলে করে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করাও সুস্থায়ী উন্নয়নের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কর্মশালায় এমনটাই বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই ভাবে নতুন বই না কিনে, পুরোনো বই দাদা দিদি কিংবা শিক্ষক শিক্ষিকাদের থেকে নিয়ে পড়াশোনার অভ্যাসও সুস্থায়ী উন্নয়নের হাতিয়ার হতে পারে, মত অধ্যাপক সুধাকর সি অগরকারের। পেডিয়াট্রিক সার্জেন এবং লেখক সুদর্শন সেন পড়ুয়াদের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘‘মানুষ হিসাবে উন্নত হও।’’